সিরিজের প্রথম চার ম্যাচে কোন দলই টানা দুই জয় পায়নি। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পরশুরাতে সেই হিসেব অনুযায়ী সফরকারী ইংল্যান্ডের জেতার কথা। তবে বাস্তবতা কি আর কাগজ কলমের নিয়মে চলে? তাই ছোট পুঁজিকেও দারুণ ভাবে রক্ষা করে জয় আদায় করে নিল পাকিস্তান। বাবর আজমের দল জিতে যায় ৫ রানে। টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ১৯ ওভারে ১৪৫ রান করে অলআউট হয় পাকিস্তান। জবাবে ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৩৯ রানে থামতে হয় ইংলিশদের।
জয়ের জন্য ইংলিশদের শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৫ রান। নাসিম শাহর নিউমোনিয়ার কারণে অভিষেক হওয়া আমের জামিলের উপর শেষ ৬ বলের জন্য ভরসা রাখলেন পাক অধিনায়ক বাবর আজম। ম্যাচে আগেই ৩ ছয় মারা মঈন আলী ছিলেন স্ট্রাইকে। কিন্তু মাত্র ৮ রান আসায় অভিজ্ঞ মঈনকে পরাজয় মেনে নিতে হল ২৬ বছর বয়সী জামালের কাছে। এই জয়ে ৭ ম্যাচ সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাবর আজমের দল।
শেষ ওভারের প্রথম দুই বলই ব্যাটারের জোন থেকে বেশ বাইরে করেন জামাল। তাতে কোনো রানই পাননি মঈন। তৃতীয় বলটিও একইভাবে করতে গেলে হয়ে যায় ওয়াইড। পুনরায় তৃতীয় বলটি জায়গামত আসলে তা গ্যালারিতে পাঠান মঈন। সমীকরণ দাঁড়ায় তিন বলে আট রানের। তারপর টানা দুটি ইয়র্কার করেন জামাল। মঈন পাঁচ নম্বর বলটিতে সিঙ্গেল নেন। শেষ বলে ছক্কা মেরে অবশ্য টাই করার সুযোগ ছিল ডেভিড উইলির সামনে। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি তিনি।
টসে জিতে প্রতিপক্ষকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের পাঠানর সিধান্ত নেন ইংল্যান্ডের কাপ্তান মঈন। ইনফর্ম রিজওয়ান ছাড়া স্বাগতিকদের বাকি ব্যাটাররা কেবল এলেন আর গেলেন। কেবল ইফতেখার আহমেদ ও অভিষিক্ত জামাল পান দুই অংকের দেখা। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৬ বল ৬৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন রিজওয়ান। রিজওয়ানের সর্বশেষপাঁচ ইনিংস যথাক্রমে ৬৮, ৮৮*, ৮, ৮৮ এবং পরশু ৬৩। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজে এ পর্যন্ত ৫ ম্যাচে মোট ৩১৫ রান করলেন এই কিপার-ব্যাটার। আন্তর্জাতিক টি-টয়েন্টিতে কোন দ্বিপাক্ষীয় সিরিজে এটাই সর্বোচ্চ রান কোন ব্যাটসম্যানের। পাকিস্তানি তারকা এই পথে পেছনে ফেলেছেন অখ্যাত সার্বিয়ান ব্যাটসম্যান লেসলি ডানবারকে। রিজওয়ানের পূর্বে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মাঝে ৫ ইনিংসে ২৫৫ রান করেছিলেন ডি কক। পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজে যেহেতু এখনো দুই ম্যাচ বাকি আছে, রিজওয়ান নিজের এই রেকর্ড কতটা উচ্চতায় তুলতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়। সিরিজে এখনো দুই ম্যাচ বাকি। ইংল্যান্ডের হয়ে তিনটি উইকেট নেন মার্ক উড। দুটি করে উইকেট নেন ডেভিড উইলি এবং স্যাম কারান।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই একটু পর পর উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ৩৭ বলে অপরাজিত ৫১ রান করা মঈনই দলটির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এ ছাড়া ৩৫ বলে ৩৬ রান করেন ডেভিড মালান। শেষদিকে ১১ বলে ১৭ রান করেন কারান। পাকিস্তানের হয়ে দুটি উইকেট নেন হারিস রউফ। এ ছাড়া মোহাম্মদ নাওয়াজ, মোহাম্মদ ওয়াসিম, শাদাব খান, ইফতেখার ও জামাল নেন একটি করে উইকেট।
ম্যাচ শেষে ২৬ বছর বয়সী জামাল জানান, ‘বাবর ভাই বলেন, আমরা একটি পরিকল্পনায় থাকব, আর সেটা তোমার সিদ্ধান্ত। আমি বলেছি, ওয়াইড ইয়র্কার কেমন হয়? তিনি জিজ্ঞাসা করেন, আমি পারব কিনা। আমি বলি, অবশ্যই। তিনি পরে বলেন, যদি ওয়াইডও হয়, পরিকল্পনা থেকে না সরতে। আর আমি সেটাই করেছি। আগের ওভারটিতে হারিস একটি ছক্কা ও চার হজম করে। তখন আমি পরিকল্পনা করছিলাম কীভাবে দলের জয় নিশ্চিত করা যায়। প্রথমত, স্নায়ু চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখি। আমি এগিয়ে যাই এবং নিজেকে বলি, যাই হোক না কেন, সবকিছু উজাড় করে দেব।’
দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর ব্যাটাসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান:
মোহাম্মদ রিজওয়ান পাকিস্তান ৫ ম্যাচে ৩১৫ রান
কুইন্টন ডি কক দ. আফ্রিকা ৫ ম্যাচে ২৫৫ রান
পল স্টার্লিং আয়ারল্যান্ড ৫ ম্যাচে ২৩৪ রান
বিরাট কোহলি ভারত ৫ ম্যাচে ২৩১ রান
লোকেশ রাহুল ভারত ৫ ম্যাচে ২২৪ রান
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন