শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

তুরষ্কের বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশকে আরো পরিচিত করার আহ্বান ঢাকা চেম্বারের সভাপতির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:৩৫ পিএম

তুরষ্ক সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর প্রতিনিধিদলের সাথে ফরেন ইকোনোমিক রিলেশন্স বোর্ড অফ টার্কি (ডেইক) আয়োজিত ‘তুরস্ক এবং বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে ইস্তাম্বুলের স্থানীয় একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ তুরষ্ক-এ মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের নেতৃত্বে ৮৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদলর বর্তমানে তুরষ্ক সফর করছে।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ফরেন ইকোনোমিক রিলেশন্স বোর্ড অফ টার্কি (ডেইক)-এর চেয়ারম্যান অনুর ওজডেন বলেন, গত কয়েক দশক যাবত বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতি দেশটিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশে পরিণত করেছে এবং তুরষ্কের উদ্যোক্তাবৃন্দ বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অত্যন্ত আগ্রহী। দ্বিপক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে তিনি বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিবৃন্দের মধ্যকার যোগাযোগ আরো বৃদ্ধির আহŸান জানান।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরষ্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেন, ব্যবসা ও বিনিয়াগের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং এখানকার উদ্যোমী উদ্যোক্তাদের নিরলস প্রয়াস দেশটিকে ক্রমশ উন্নতির দিকে ধাবিত করছে। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ বিশেষকরে তথ্য-প্রযুক্তি, ঔষধ, চামড়া, কৃষি প্রভৃতি খাতে বেশ অগ্রগতি করেছে এবং বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বাজারও বেশ বৃহৎ, যা বিবেচনায় নিয়ে তুরষ্কের উদ্যোক্তাবৃন্দ এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, গত অর্থবছরে দুদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সামনের দিনগুলোতে ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন, তুরষ্কের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে, আরো প্রতিষ্ঠান সেখানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং বাংলাদেশে তুরষ্কের বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধিতে অবকাঠামোর উন্নয়ন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজতরকরণ ও নীতিমালার সংষ্কারের উপর জোরারোপ করেন।

তুরষ্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ ও তুরষ্কের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এক্ষেত্রে দুদেশের বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনে বাংলাদেশ সরকার ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপন সহ প্রণোদনা সুবিধা প্রদান করছে, যা গ্রহণ করে তুরষ্কের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাত সমূহে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোভিডকালীন সময়ে বৈশি^ক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা পরিলক্ষিত হলেও বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সাহসী উদ্যোক্তাদের নিরলস পরিশ্রম ও সাহসিকতার কারণে আমাদের অর্থনীতির কার্যক্রম চলমান ছিল। পর্যটন খাতে তুরষ্কের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অত্যন্ত বেশি এবং বাংলাদেশের পর্যটন খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে তুরষ্কের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তিনি বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিবৃন্দের সমন্বয়ে ‘জয়েন্ট ইকোনোমিক কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব করেন। ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, সুদীর্ঘকাল হতে বাংলাদেশ গুণগত মানের পাট উৎপাদন করে আসছে এবং তুরষ্কের কার্পেট খাতের উদ্যোক্তাবৃন্দকে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য আমদানির আহŸান জানান। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশসমূহের মধ্যে তুরস্ক ২৯তম বৃহত্তম দেশ যে দেশের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৩০.৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে। তিনি উল্লেখ করেন ডি-৮ ভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে কার্যকর অর্থনৈতিক যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ ও তুরস্ক যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। তিনি বাংলাদেশের শিল্পখাতের আধুনিকায়নে তুরস্কের প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান, এসএমই খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি, যৌথ গবেষণা কার্যক্রম এবং এগ্রো ভেলু চেইনের উন্নয়নে তুরস্ককে এগিয়ে আসার আহŸান জানান। পরিশেষে তিনি তুরস্কের বিনিয়োগকারিদের বাংলাদেশে আরো বেশি হারে বিনিয়োগের আহŸান জানান এবং বাংলাদেশ থেকে আরো অধিক পণ্য আমদানি করার অনুরোধ করেন।

সেমিনার শেষে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে ফরেন ইকোনোমিক রিলেশন্স বোর্ড অফ টার্কি (ডেইক)-এর প্রায় ১১০টির বেশি সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার বিটুবি ম্যাচ-মেকিং অনুষ্ঠিত হয় যেখানে দুদেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ বিনিয়োগ সম্ভাবনা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করেন।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে ইস্তানবুল গেডিক বিশ^বিদ্যালয় এবং ঢাকা চেম্বারের সাথে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে ডিসিসিআই’র সভাপতি রিজওয়ান রাহমান এবং গেডিক বিশ^বিদ্যালয়ের ট্রাষ্টি বোর্ডের সভাপতি হুলিয়া গেডিক নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সহযোগিতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন