মুন্সীগঞ্জে মুক্তারপুর ফেরিঘাট এলাকায় বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী মামলায় মৃত ব্যক্তি, ছাত্রলীগ ও সরকার দলীয় কর্মীদেরও আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আসামি হয়েছে একই দলের প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা। নাশকতার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েকজন স্কুল ছাত্রকেও। প্রকাশ্য দিবালোকে শাওনের মৃত্যু হলেও কারণ নিয়ে পুলিশের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিহতের স্বজন ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ। গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা ছাড়া হয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীসহ সমর্থকরা।
গত ২১ সেপ্টেম্বর বিএনপি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এবং নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। মাথায় আঘাত পেয়ে আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে মারা যায় যুবদল নেতা শাওন। পুলিশ ব্যানার ছিনিয়ে নিলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর করে সেখানে থাকা পুলিশের মোটরসাইকেল, গাড়ি। এ ঘটনার পরদিন মুন্সীগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক মাইনউদ্দিন বাদী হয়ে সরকারি অস্ত্র, গুলি লুট ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ৩১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৮০০ ব্যক্তির নামে মামলা করে। এতে প্রধান আসামি করা হয় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনকে। জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাবেক আহŸায়ক নজরুল ইসলাম বাচ্চু ছয় মাস আগে ইন্তেকাল করলেও এই মামলায় ২৫৫ নম্বর আসামি করা হয় তাকে। একই মামলায় ৫৪ নম্বর আসামি করা হয় সদর উপজেলার ভিটি হোগলাকান্দি গ্রামের আ. রহমান সরকারের পুত্র জামাল হোসেন সরকারকে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, জামাল হোসেন সরকার দলীয় সমর্থক। এরই পূর্বে তার স্ত্রীকে ইভটিজিং করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়। মামলাায় ১৪৭ নম্বর আসামি হাসান শেখ, পিতা শাহজালাল, ভট্টাচার্যের বাগ স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা। হাসান শেখের পরিবারের দাবি, ঘটনার সময় সে ছিল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মদ পাভেলের বাড়িতে। প্রতিপক্ষ হাসানের নাম দিয়ে দেয়। অভিযোগে জানা যায়, শিলই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধে আসামির তালিকায় ৭ জন সরকার দলীয় কর্মীর নাম চলে আসে। আসামির তালিকায় নাম রয়েছে ক্রীড়া সংগঠক আয়নাল হক স্বপনেরও।
পঞ্চসার ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক তার কার্যালয় ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারধর এবং পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সদর উপজেলার আহŸায়ক মো. মহিউদ্দিন আহম্মদকে প্রধান আসামি করে ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০০ জনের নামে আরো একটি মামলা করেন। প্রধান আসামি মহিউদ্দিন আহম্মদ বলেন, মুক্তারপুরে শ্রমিক লীগের কোনো কার্যালয় নেই। বিএনপি নেতা-কর্মীদের হযরানি করার জন্য এবং নেতাদের খুশি করে ব্যক্তি সুবিধা নেয়ার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পিপি এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান বলেন, ফৌজদারী মামলায় অসত্য তথ্য লিপিবদ্ধ থাকলে এবং অপরাধীদের নামের তালিকায় কোনো অসংগতি থাকলে মামলাটি দুর্বল হয়ে যায়। এর জন্য বাদীকে আদালতে জবাবদিহি করতে হয়। পুলিশ বাদী মামলায় মৃত ব্যক্তির নাম থাকা স্বাভাবিক নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন