সরল সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল স্বাগতিক পাকিস্তান। জিতলেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যেত বাবর আজমের দলের। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের আদ্যোপান্ত লড়াই করে গেলেন বাবর নিজেই। ৮৭ রানের ইনিংস খেলার পথে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে দ্রুতগতিতে ৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্ষ করলেন পাক অধিনায়ক। তাতে ভর করে ৬ উইকেটের বিনিময়ে ১৬৯ রানের পুঁজি পায় পাকিস্তান। কিন্তু জবাব দিতে নেমে ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার যেন ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে কচুকাটা করলেন স্বগতিক বোলারদের। ফিল সল্ট খেললেন ৮৮ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস। তাতেই সফরকারীরা লক্ষ্যে পৌঁছে গেল মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ও ৩৩ বল হাতে রেখে। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বলের হিসেবে ১৭০ বা তার বেশি রান তাড়া করে এটি ছিল দ্বিতীয় বড় জয়। সফরকারীদের এই জয়ের সুবাদে সিরিজেও আপাতত ৩-৩ সমতা। লাহোরেই আজ রাতের ম্যাচটি তাই রূপ পেল অলিখিত ফাইনালে।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড প্রথম ওভার থেকেই চড়াও হলেন স্বাগতিক বোলারদের উপর। প্রথম ওভারে ১১ রান নেওয়ার পর, শাহনেওয়াজ দাহানির দ্বিতীয় ওভারে তুলেন ২২ রান। পরের ওভারে ১৭ রান আসায় প্রথম ১৮ বলের মধ্যেই ইংলিশদের দলীয় সংগ্রহ স্পর্ষ করে ৫০ রান। চতুর্থ ওভারে হেলস ১২ বলে ২৭ রান করে বিদায় নিলেও সল্ট ছিলেন অবিচল। পঞ্চম ওভারে নাওয়াজকে তিনটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন সল্ট। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ইংল্যান্ডের রান দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৮২। আর সপ্তম ওভারেই তিন অঙ্কে পৌঁছে যায় ‘থি লায়ন্সরা’। ইংলিশরা ম্যাচে ফিরে আসার জন্য কোন সুযোগই দেননি পাকিস্তানি বোলারদের। ৪১ বলে ১৩ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৮৮ রানের ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে ৮ উইকেটের জয় এনে দেন সল্ট। সেটাও ৩৩ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখে। সল্ট মাত্র ১৯ বলে অর্ধশতকে পৌঁছান যা টি-২০ সংস্করণের তৃতীয় দ্রুততম। শেষদিকে তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ঝড় কমার পরও সল্টের অপরাজিত ইনিংসের স্ট্রাইক রেট ছিল ২১৪.৬৩। ইংল্যান্ডের দুটো উইকেটই শিকার লেগ স্পিনার শাদাব খান।
অন্যদিকে ম্যাচটা পাকিস্তান খেলতে নামে হারিস রউফ ও আগের ম্যাচে পিঠে চোট অনুভব করা মোহাম্মদ রিজওয়ানকে বিশ্রামে রেখে। বাবরকে তৃতীয় উইকেটে ১৮ রান করে কিছুটা সঙ্গ দেন হায়দার আলি। এরপর ইফতেখার আহমেদের ২১ বলে ৩১ রানের ইনিংসটি ছিল বেশ কার্যকরী। পেসার রিচার্ড গ্লিসনকে লংঅন দিয়ে ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম তিন হাজার রানের রেকর্ডে বিরাট কোহলির পাশে বসেন বাবর। মাইলফলক ছুঁতে এই ম্যাচে তার প্রয়োজন ছিল ৫২ রান। ১৬তম ওভারে ৫১ রানে থাকা পাক কাপ্তান ওই ছক্কা হাঁকান। এই মাইলফলক স্পর্ষ করতে কোহলি ও বাবর দুইজনেরই লেগেছে ৮১টি ইনিংস। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মার্টিন গাপটিলের লেগেছিল ১০১ ইনিংস।
বাজেভাবে হারার পর পাকিস্তান দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বোলিং কোচ শন টেইট। তিনই অবশ্য বোলারদের ঢালাওভাবে দায়ী করতে নারাজ। টেইট বলেন, ‘তার আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে নেমেছিল, প্রতি বলেই বাউন্ডারি মারার চেষ্টা ছিল তাদের। আর এতে আমাদের বোলাররা ছন্দ হারিয়ে ফেলে। আমরা খুব বেশি বাজে বল করিনি, তারা দারুণ ব্যাটিং করেছে। এটা ঠিক যে, আমরা আরও ভালো বোলিং করতে পারতাম, কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে এমনটা হয়।’ অজি এই বোলিং কোচ জানিয়েছেন, তারা শেষ ম্যাচে জয়ের ব্যাপারে দারুণ আত্মবিশ্বাসী, ‘আমরা পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারি। আশা করি, ভালো বোলিং করব এবং ম্যাচটি জিতব। তবে সিরিজটিতে দারুণ লড়াই হচ্ছে।’
আজ সিরিজের শেষ ম্যাচে স্বাগতিকরা পাচ্ছে না নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত নাসিম শাহকে। তাদের কপালের ভাঁজ আরও বাড়লো মিডল অর্ডার ব্যাটার হায়দারের অসুস্থতায়। ভাইরাস সংক্রমণজনিত অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে যেতে হয়েছে এই ২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানকেও।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন