বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল মন্থর আর নিচু বাউন্সের উইকেটে খেলে গত বছর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল। বাংলাদেশ তখন সেটিকে জয়ের অভ্যাস গড়ার কৌশল হিসেবে চালিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু জয়ের জন্য টি-টোয়েন্টিপরিপন্থী উইকেটে খেলার অভ্যাসটা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছে। মেয়েদের ক্রিকেটেও আজকাল সে অসুখের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এই যেমন একাদশ সাজানো হবে এক দল স্পিনারে। অবিশ্বাস্য রকমের মন্থর উইকেটে প্রতিপক্ষকে অল্প রানে বেধে ফেলতে হবে। অথবা আগে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে মোটামুটি রান তুলে সেটিকে ডিফেন্ড করতে হবে। ছেলেদের ক্রিকেটের এই ফর্মুলায় খেলছে বাংলাদেশের মেয়েরাও। এতে সাফল্যও আসছে। কিন্তু এই সাফল্য সাময়িক। এতে বরং ক্ষতিই হচ্ছে দলের টি-টোয়েন্টি দক্ষতার। যেমনটা হয়েছে ছেলেদের ক্রিকেটে।
এই যেমন এবারের নারী এশিয়া কাপে। স্পিন দিয়েই পাকিস্তানকে হারিয়ে দেওয়ার ছক এঁকেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু উল্টো সেই স্পিনেই বধ হয়েছে নিজেরা। একপেশে ম্যাচে বিশাল হারের পর প্রশ্ন উঠছে দলের পরিকল্পনা নিয়ে। টস হেরে ব্যাটিং করতে গিয়ে পড়তে হয় বিস্তর ভোগান্তিতে। অবাক করা বিষয় টস জিতলেও ভিন্ন কিছু না, ব্যাটিংই নাকি করত বাংলাদেশ। সকালে টস হেরে যাওয়ার পর অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি জানান, টস জিতলেও আগে ব্যাটিং বেছে নিতেন তারা। ম্যাচ শেষেও এমন ভাবনার কারণ জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক জানান, তারা ভেবেছিলেন উইকেট ব্যাট করার জন্য বেশ ভালোই হবে। কিন্তু পরে নেমে দেখেন বল থেমে আসছে, টার্ন করছে, নিচুও হচ্ছে। এবারের মেয়েদের এশিয়া কাপের প্রথম পাঁচ দিনে নয় ম্যাচ রাখা হয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্রাউন্ড দুইয়ে। এই মাঠের উইকেট প্রতিদিনই সুবিধা দিচ্ছে সেøা বোলারদের। এদিন খেলা হয় ছয় নম্বর উইকেটে। তাতে ধুঁকতে ধুঁকতে বাংলাদেশ করতে পারে ৭০ রান। যা ৪৬ বল আগে পেরিয়ে যায় পাকিস্তান। এদিন দলের হয়ে ২৯ বলে সর্বোচ্চ ২৪ রান করেন সালমা। তার মূল যে ভূমিকা সেখানে তিনি ব্যর্থ। ৪ ওভারে দেন ২৭ রান। ম্যাচ শেষে কথা বলতে এসে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার জানান, উইকেটটি ছিল ভিন্ন। উইকেটের কারণে তালগোল পাকিয়েছে ব্যাটিং, ‘উইকেটটা আলাদা ছিল। অনেক টার্ন হয়েছে। আগের ম্যাচে কিন্তু এমন ছিল না। এই কারণে ব্যাটাররা একটু বিট হয়েছে। প্রথম ওভারেই একটা উইকেট পড়ে গিয়েছি যে কারণে চাপটা আরও বেড়ে গিয়েছে।’
এমনিতে সকাল বেলা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আগে ব্যাট করা হয় কঠিন। তারমধ্যে মন্থর ও টার্নিং উইকেটে আগে ব্যাট করার ভাবনা কেন ছিল দলের? তবে কি উইকেট বুঝতে ভুল হয়েছে? সালমা এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন অনুমিতভাবে, তবে তাতে আড়াল থাকেনি তাদের পরিকল্পনায় গোলমাল লাগার কথা, ‘আসলে অধিনায়কের কী সিদ্ধান্ত ছিল এটা আমি জানি না। হয়তো অধিনায়ক, কোচ, ম্যানেজম্যান্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসলে আলাদা উইকেটে আলাদা ম্যাচ হয়েছে। আর আজকের দিনটা হয়তো ওদের ছিল।’
উইকেট বুঝতে ভুল করার কারণে ব্যাটিং অ্যাপ্রোচেও হয়ত প্রভাব রেখেছে। শুরুতে মেরে খেলার অ্যাপ্রোচে ব্যাট ঘুরিয়ে ব্যর্থ হয়ে টপাটপ উইকেট পড়েছে। এই উইকেটে কত রান আদর্শ হবে সেই চিন্তা দেখা যায়নি দলের। ৩ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর প্লান ‘এ’ বদল করে প্লান ‘বি’তেও যেতে দেখা যায়নি। নিজেদের ব্যাটিংয়ে প্রথম পাঁচ ওভারেই যেন ম্যাচ হেরে বসে বাংলাদেশ। শরীরী ভাষায় গোটা ম্যাচে দেখা গেছে যার ছাপ।
এদিকে, অনায়াসে ম্যাচ জিতলেও পাকিস্তান ওপেনার সিদ্রা আমিন বলছেন, টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ নয় সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্রাউন্ড দুইয়ের উইকেট। কঠিন উইকেটে দলকে জেতাতে ৩৫ বলে ৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেল এই ওপেনার দেন নিজের পর্যবেক্ষণ, ‘আমার মনে হয় এটা আদর্শ উইকেট না টি-টোয়েন্টি সংস্করণের জন্য। কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে যেকোনো কন্ডিশনে মানিয়ে নিয়ে খেলতে হবে।’ টি-টোয়েন্টি চার-ছয়ের খেলা হলেও এই উইকেটের তিন অঙ্কের নিচের পুঁজি নিয়ে ম্যাচ জেতা সম্ভব বলে মনে করেন সিদ্রা, ‘আমার মনে হয় একশো বা আশি, সত্তরও রানও হয়ত (ডিফেন্ডেবল)। কারণ খুব টার্ন হচ্ছিল। যে বোলার ঝুলিয়ে বল করছিল টার্ন পাচ্ছিল, নিচু হচ্ছিল। এখানে ইম্প্রোভাইজেশন করা কঠিন। খুব বেশি শট খেলা কঠিন।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন