ভোজ্যতেল কোম্পানির মালিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর সয়াবিন তেলের দামে এলো স্বস্তির খবর। প্রতি লিটার বোতলজাত দেলের দাম ১৪ টাকা আর খোলা তেলের দাম ১৭ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বোতলজাত এক লিটার তেল বিক্রি করে ১৭৮ টাকায়, যা এতদিন ছিল ১৯২ টাকা। আর পাঁচ লিটারের বোতলের দাম হবে ৮৮০ টাকা যা এতদিন ছিল ৯৪৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম হবে ১৫৮ টাকা, যা এতদিন ছিল ১৭৫ টাকা।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়টি জানানো হয়। আজ মঙ্গলবার থেকেই এই দাম কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে। এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পাম অয়েলের দর লিটারে ১৩ টাকা কমিয়ে ১৩৩ টাকা ঠিক করে দেয়। তবে সয়াবিন তেল নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত সেদিন নেয়া হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আমাদের ভোজ্যতেল মালিক সমিতির সদস্যরা বর্তমানে ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং এলসি খোলার জটিলতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল এবং টি কে গ্রুপের এমডি মোস্তফা হায়দার।
সভায় ডলারের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে এবং এলসি খোলার জটিলতার বিষয়ে আলোচনা শেষে এবং ভোক্তাদের সুবিধার্থে ভোজ্যতেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয়, যা আজ থেকে কার্যকর হবে।
বিশ্ববাজারে টাকা এক বছর ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশে ভোজ্যতেলের দাম ২০২১ সাল থেকে বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে। এক পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ২০৫ টাকা হয়ে যায়। তবে দুই দফায় কমিয়ে গত ২১ জুলাই তেলের লিটার ১৮৫ টাকা করা হয়।
এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। গত ২৩ আগস্ট লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১৯২ টাকা করা হয়। ডলারের বাড়তি দাম কমেনি, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কমে আসার পর হ্রাসকৃত দামের তেল দেশে আসার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন করে হিসাব কষে এই দাম ঠিক করে দিয়েছে।
গত কয়েক মাসে ডলারের দাম ৮৪ টাকা থেকে বেড়ে ১০৬ টাকা হয়ে গেছে। টাকার ২৫ শতাংশ দরপতনের কারণে আমদানি পণ্যের খবরও ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। সরকার ভোজ্যতেলের দর ভোক্তাদের কাছে আরও সহনীয় করতে ভ্যাটে ছাড় দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ কিছুটা কমাতে গত ১৪ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি করে সয়াবিন ও পাম অয়েলের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ব্যবসা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করে। এর দুদিন পর ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। তখন এর মেয়াদ ঠিক করা হয় ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে ৩ জুলাই আরেকটি প্রজ্ঞাপনে ভ্যাট মওকুফ সুবিধার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়। যার মেয়াদ শেষ হয় গত শুক্রবার।
ভ্যাট ছাড় আরও তিন মাস অব্যাহত রাখতে গত ২০ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরে চিঠি দেয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া চিঠির ভিত্তিতে ভোজ্যতেলের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আরও তিন মাস বাড়তে পারে। দেশে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা নিয়ে এনবিআর নতুন করে ভাবছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখা হতে পারে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে শীঘ্রই প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন