শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

‘সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নয় আসুন পুঁজিবাজারে’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে পুঁজিবাজারে আসুন। এই উদ্দেশ্যেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আর এখন আকর্ষণীয় নয়। গতকাল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসি বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পুঁজিবাজার বিনিয়োগে উৎসাহী করতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা অতীতে এই ধরনের বক্তব্য কখনও দেননি। বরং গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নানা সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হয়ে আসার পর থেকে পুঁজিবাজার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রক্ষণশীল মনোভাব পরিবর্তনের বিষয়টি স্পষ্ট। তিনি দায়িত্বে বসার আগেই ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার দফতর বদল হয় ১৯ বছর পর, যে কর্মকর্তাকে পুঁজিবাজার নিয়ে রক্ষণশীল মনোভাবের জন্য দায়ী বা পুঁজিবাজারের শত্রু হিসেবে মনে করা হয়।
গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের গণনা পদ্ধতি পাল্টানো হয়। শেয়ারের বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে এই এক্সপোজার লিমিট গণনা করায় এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের সুযোগ বেড়েছে। এরপর কমানো হয় সঞ্চয়পত্রের সুদহার, সেই সঙ্গে সেখানে বিনিয়োগের সীমাও বেঁধে দেয়া হয়, যে কারণে বিক্রি কমে গেছে অনেকটাই। এতে সরকারের সুদের চাপ কিছুটা কমেছে।
সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর নেপথ্যের কারণ তুলে ধরে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আগে সঞ্চয়পত্র ইচ্ছামতো কেনা যেত। দেখা যেত, একজন এক ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছে। আবার আরেক ব্যাংকে গিয়ে ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনছে। এভাবে সঞ্চয়পত্রে টাকা ঢুকে যাওয়ার একটি ট্রেন্ড ছিল। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের যে হাই ইন্টারেস্ট রেট সেটা কিন্তু আমরা জনগণের করের টাকা থেকে দিচ্ছি। পরে আমরা এটা অটোমেশন করি। আবার ধাপে ধাপে সুদের হার কমিয়ে আনি। এখন সঞ্চয়পত্র কিন্তু অতটা আকর্ষণীয় না। বরং এখন যদি আপনি বন্ড মার্কেটে যান ভালো রিটার্ন পাবেন। আমি চাই মানুষ যেন সঞ্চয়পত্র না কিনে পুঁজিবাজারে আসুক। তাহলে দেশের উদ্যোক্তরা সেই টাকা নিয়ে ব্যবসা করতে পারব। ঋণখেলাপি কম হবে।
গভর্নর বলেন, দেশের পুঁজিবাজারকে যে সহায়তা করা দরকার, সেটা আমি আরও বেশি অনুভব করেছি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার পরে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যেটা বড় সমস্যা, সেটা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। এই ঋণ খেলাপি বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে একটি বড় কারণ হচ্ছে ব্যাংকগুলো স্বল্প সময়ের জন্য আমানত নিয়ে বেশি সময়ের জন্য ঋণ দিচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো যেমন বিপদে পড়ছে, উদ্যোক্তারাও বিপদে পড়ছে। কোম্পানিগুলো যখন ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, তখন তাদের মাসে মাসে সুদ দিতে হয়। কিন্তু কোম্পানিগুলো যদি বন্ডের মাধ্যমে টাকা তোলে, তাহলে বছরে একবার সুদ দিলেই চলে। ফলে বাংলাদেশে যদি বড় বন্ড মার্কেট গড়ে ওঠে তাহলে একদিকে যেমন ব্যাংকের জন্য ভালো হবে, আবার আবার কোম্পানিগুলোর জন্যও ভালো হবে। এদিকে গতকাল সোমবার থেকে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ। চলবে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। বিএসইসি আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংঘের সদস্য। এই সংঘের নাম হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিস কমিশনস বা আইওএসসিও। আইওএসসিও এর সদস্য দেশগুলো তাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে, বিনিয়োগ শিক্ষা বাড়াতে, বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালন করে থাকে। বিএসইসি ২০১৭ সাল থেকে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ বাংলাদেশে পালন করে আসছে।
বিএসইসির প্রধান কার্যালয় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।
সভাপতির বক্তব্যে পুঁজিবাজারের আস্থার কথা শুনতে শুনতে কান ব্যথা হয়ে গেছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এই আস্থা যে কোথা থেকে কীভাবে আনবো এখনো জানি না। আমরা মনে করি পুঁজিবাজার আর ১৯৯৬ কিংবা ২০১০ সালে ফিরবে না। এখন আমরা পুঁজিবাজারের ভালো দিন দেখতে পাবো।
অনুষ্ঠানে টেকসই অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশের সম্পদ ব্যবস্থাপকদের সংগঠন। একই দিন টেকসই অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা করে চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-সিএসইও। আগামী ১০ অক্টোবর ফিনটেক নিয়ে আলোচনা করবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)। ১১ অক্টোবর স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম নিয়ে আলোচনা করবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। একই দিন বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা ও টেকসই পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনা করবে বিএএসএম ও আইসিএম। সেদিন বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার অ্যাসোসিয়েশনও। পরদিন ক্রেটিড রেটিং নিয়ে সেমিনার করবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড (কোম্পনিজ)। এর প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ১৩ অক্টোবর হবে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে সিডিবিএল ও সিসিবিএল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন