যশোরে শিশু সানজিদা জান্নাত মিষ্টি (৪) হত্যাকা-ের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। আরবপুর ইউনিয়নবাসীর ব্যানারে মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় প্রেস ক্লাব যশোরের সামনে থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে ডিসি অফিস চত্বরে অবস্থান নিয়ে প্রায় ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে এলাকাবাসী। এতে ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে অংশ নিয়ে হত্যাকা-ে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান নিহত শিশু সানজিদার মা-বাবা। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের কাঁদতে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত অনেকেই। এসময় জেলা প্রশাসক চত্বরে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
গত ১ অক্টোবর দুপুরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হয় সানজিদা জান্নাত মিষ্টি। ঐ দিনেই পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজে ব্যর্থ হয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন। এরপর ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে সানজিদার প্রতিবেশী আঞ্জুয়ারা বেগমকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে সে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং ওইদিন দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বাড়ির চালের ড্রাম থেকে সানজিদার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সানজিদার পিতা সোহেল রানা আঞ্জুয়ারার স্বামী রেজাউলসহ চারজনের নামে মামলা দায়ের করলে পুলিশ আঞ্জুয়ারার আরো দুই সহযোগী মামলার আসামি আব্দুল মালেক গাজী ও তার স্ত্রী খাদিজা বেগমকে আটক করে। সানজিদা হত্যাকান্ডের ঘটনায় আটক আঞ্জুয়ারা খাতুনকে রোববার আদালতে সোপর্দ করা হয়। তিনি পূর্ব আক্রোশে সানজিদাকে খুন করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলাম জবানবন্দি শেষে তাকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় আঞ্জুয়ারার আরো দুই সহযোগী মামলার আসামি আব্দুল মালেক গাজী ও তার স্ত্রী খাদিজা বেগমকে সোমবার আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে এ মামলার আসামি আঞ্জুয়ারার স্বামী রেজাউল পলাতক রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আটক আঞ্জুয়ারা স্বামীসহ বর্তমানে সদর উপজেলার বি-পতেঙ্গালী গ্রামে বসবাস করেন। আঞ্জুয়ারা ও তার স্বামী রেজাউল ওরফে রেজা মাদক, চোরাচালানী ও পাচারকারী দলে সদস্য। তাদের বাড়ি বেনাপোলের পুটখালী হলেও বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে। আঞ্জুয়ারা ও তার স্বামী রেজার বিভিন্ন অপকর্মের খবর জানতেন সানজিদার মা শরিফা খাতুন। এছাড়া আঞ্জুয়ারার অপূর্ব হাসান নামে ৭ বছর বয়সের শারীরিক প্রতিবন্ধী একটি ছেলে আছে। মাঝেমধ্যে খেলাধুলা করার সময় সানজিদার সাথে অপূর্ব হাসানের হাতাহাতি ও মারামারি হয়। মাঝেমধ্যে অপূর্ব হাসানকে পাগল বলেও গালি দিতো সানজিদা। সব মিলিয়ে সানজিদার পরিবারের প্রতি প্রতিহিংসা জন্ম নেয়ায় তাদের ক্ষতি করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন আঞ্জুয়ারা ও তার স্বামী রেজা।
এই বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম বলেছেন, সানজিদা জান্নাত মিষ্টি হত্যাকান্ডের ঘটনায় তিন আসামি কারাগারে। এখনো এক আসামি পলাতক রয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন