তুর্কি কবিতা
আমাদের দেশে ঋতু ছয়টি ধরা হলেও, পাশ্চাত্য দেশগুলোতে ধরা হয় চারটি। বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীত। সে হিসেবে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কালকে শরৎ ঋতু ধরা হয়। প্রসঙ্গত, তুরস্ক ইউরোপ ও এশিয়া উভয় মহাদেশেই অবস্থিত হলেও এর প্রধান শিল্প-সাংস্কৃতিক নগরী ইস্তানবুলকে ইউরোপেরই অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সেই ইস্তানবুলকেন্দ্রিক শরৎকে নিয়ে তিনজন বিশিষ্ট তুর্কি কবির কবিতা মূল ভাষা থেকে ও একটি ফরাসী কবিতা ইংরেজী থেকে ভাষান্তর করেছেন Ñমোরশেদুল ইসলাম।
এক পুরোনো শরৎ
হুসেইন নিহাল আতসিজ
তখন ছিল শরৎকাল... তোমার সাথে হাঁটছিলাম সেই পথে;
মাটিতে, বাতাসে কেমন এক বিষন্নতা ভর করেছিল,
আমাদের দিকে আসছিল।
একেবারে নতুন অনুভূতি ছিল আমাদের হৃদয়ে।
ও সুর বাতাসের নয়, বিষন্নতার;
মনে পড়ে কি তোমার? পাখিরা কাঁদছিল...
কী মৃদুমন্দ বাতাস... যেন স্বপ্নের মতো...
জায়গাটা কী অপরিচিত ছিল... যেন ভবিষ্যতের মতো?
প্রকৃতি কেমন জানি ছিল সেদিন।
হৃদয় ব্যথায় ভরা, চোখ ভরা জলে;
যেন পাতার মতো মাটিতে ঝরে পড়ে;
সেই সুর ছাড়িয়ে গেছে দূরত্ব ও সময়।
ওটা কোনো গান ছিল না, পাখিরা কাঁদছিল।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় ছিল নিঃসঙ্গ চুল্লি।
সেই চুলাটাও ভরে যাবে বিষন্নতায়।
এক পুরনো শরৎ স্মরণ করে ছোট ছোট পাখিরা,
হয়তো কয়েকটা শব্দে বিদায় জানায় তোমাকে...
যদি কোনো শরতে আবার একা থাকো
যে সুন্দর দিন কাটিয়েছি আমরা তা-ই মনে করিও।
আমি সেপ্টেম্বর তুমি জুন
উমিত ইয়াশার ঔজ্জান
আমার ভিতরে এক সেপ্টেম্বর দেখা দিয়েছিল
পাতা ঝরেছিল গাছ থেকে
ফ্যাকাশে হয়েছিল ঘাসেরা
ফুলগুলো বিবর্ণ হয়েছিল
কালো মেঘে ঢেকে গেছিল আকাশ
পাখিরা হয়েছিল পরিযায়ী, দূরে,
এলোমেলো বইছিল বাতাস
যা কিছু রেখে গিয়েছিল গ্রীষ্ম
তার সবই ছিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে
মনে হচ্ছিল বসন্ত নামের কোনো ঋতু কখনো আসেনি
কী ছিল সেসব সময়
প্রিয়তমা, প্রিয়তমা আমার?
সেই উথাল-পাথাল,
পাগলামির দিনগুলো কী ছিল?
কেমনে সয়েছি সেইসব দিন?
কী ভয়ে তাড়া করে এ হৃদয়
কেমন শুকনো সে নদী! আমার অশ্রæ বয়,
হাঁটু-সমান অন্ধকার আমার সামনে
পিছনে আমার ছাইয়ের স্তুপ,
বয়স আমার আজ পঞ্চাশ।
এক বদ জুনে পেয়েছিল আমায়
হায় কপাল, নষ্ট সেপ্টেম্বরের শেষে
তুমিই এনেছিলে এক ফুরফুরে গ্রীষ্ম
এক নীল আকাশ নিয়ে
এক ঝরঝরে সূর্য নিয়ে
এক চকচকে বিশাল সমুদ্র নিয়ে এসেছিলে আমার জীবনে।
তোমার ছোঁয়ায় ফুল ফুটল
জন্মিল ঘাসেরা
আর লজ্জায় গোলাপেরা জড়োসড়ো হয়ে গেল হাসিতে তোমার।
তোমার পাখিরা এখন গান গাইছে আমার ভিতরে
তোমার ফলের ভারে মাটি ছুঁইছে আমার ডালপালা
অস্ত যায় সূর্য তোমার চুলে
পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে তোমার চোখে
দিনভর মৃদু হাওয়ায় ভাসাও আমায়
তোমায় নিয়ে উজ্জ্বল আমার নির্ঘুম রাত
আমি পূর্ণ, ওহ্ আমি পূর্ণ এখন আমি মরতেও পারি
যদি তুমি নাও বলো মরতে; যেয়ো না, থাকো এমনে
শক্ত করে জড়িয়ে ধরো, চামড়া হও আমার
দেখো, আমায় ছেড়ে যেয়ো না। হাতে আগুন, চোখ থেকে বেরুচ্ছে লাভা আমার আসো, ধরো আমার হাত পুড়ে যাও আমার সাথে সব বাঁধা পেরিয়ে
ঘুমাও, জাগো আমার সাথে
চলো বাঁচি বহু দিন।
প্রিয়ার জন্য মধ্য রাতে লেখা কবিতা
নাজিম হিকমত
এই মধ্যে রাতে,
এই শরতের রাতে
মাথার ভিতরে গিজগিজ করছে তোমার কথা;
কালের মতো, পাত্রের মতো স্থায়ী,
খোলা চোখের মতো,
হাতের মতো ভারী
আর মিটিমিটি নক্ষত্রের মতো শব্দ।
তোমার শব্দগুলো আসছে আমার কাছে,
তোমার হৃদয় থেকে, তোমার মস্তিষ্ক থেকে,
তোমার শরীল থেকে।
তোমার শব্দেরা নিয়ে আসছে তোমায়,
তারা: জননী,
তারা: নারী
এবং সহযাত্রী হিসাবে...
তারা বিষন্নতা, তারা তিক্ত, তারা খুশি,
তারা আশাবাদী, তারা সাহসিনী,
তোমার শব্দগুলোই ছিল মানুষ...
ফরাসি কবিতা
শরতের পাতারা
জ্যাক প্রেভের্ত
শরতের ঝরা পাতারা
জানালার ধারে জড়ো হয়
লাল আর সোনালি পাতারা
দেখছি, গ্রীষ্ম তোমার ঠোঁটে চুমু দেয়
রৌদ্রে পুড়ে যাওয়া হাত
যে হাত আমি ধরতাম
তুমি চলে যাওয়ার পর
লম্বা হয়েছে দিনগুলো
আর শীঘ্রই পুরনো শীতের গান
আমি শুনবো
কিন্তু সব থেকে বেশি মিস করছি
তোমায় প্রিয়া
শরতের পাতারা যখন
ঝরতে শুরু করে
সে পতনও আমাদের মতোই
একটা গান
তুমি ভালোবাসতে আমাকে
আমিও বাসতাম তোমায়
একসাথে দুজন করেছি বাস
তুমিই ভালোবাসতে আমায়
আমিও তোমাকেই বাসতাম ভালো
কিন্তু যারা একে অপরকে ভালোবাসে
জীবন আলাদা করে দেয় তাদের
ধীরে ধীরে, কোনো টুঁ শব্দ করা ছাড়াই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন