ছাত্রলীগের অমানুষিক নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করা বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ স্মরণসভায় ছাত্রলীগের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তত ১৫টি সংগঠন।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে স্মরণসভা করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ টি সংগঠন নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবির, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফোরাম, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ), বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র মজলিস ও রাষ্ট্রচিন্তা।
শুক্রবার রাতে পৃথক সময়ে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় ছাত্রদল ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। রাত ৮টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে প্রতিবাদ জানায় দলটি। যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বর্বর নির্যাতনে নিহত শহীদ আবরারের হত্যাকারীদের উত্তরসূরী, আধিপত্যবাদের দোসররা, বিনা উষ্কানিতে হামলা করে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা, জাহিদ আহসান, সানাউল্লাহ, পারভেজ মাহমুদসহ অনেক নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে।
তারা বলেন, আরও গুরুতর বিষয় হচ্ছে, আহত নেতাকর্মীদের ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগে নেয়ার পর সেখানেও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে হামলা করে। মারধরের পর পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীদের বদলে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেনসহ আক্রান্ত নেতাকর্মীদেরই গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকেই ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ কখনোই এদেশে বিরোধী মত সহ্য করতে পারেনি। সন্ত্রাস, রাহাজানি, অস্ত্রবাজির রাজত্ব কায়েম করে তারা শিক্ষাঙ্গনগুলোতে একচেটিয়া দখলদারিত্ব কায়েম রাখতে চায়। এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে তারা সকল সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান।
এদিকে শনিবার সকালে আবরার ফাহাদের তৃতীয় শাহাদাতবার্ষিকীর স্মরণসভায় ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের গ্রেফতার ও ছাত্রশিবিরকে জড়ানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় সংগঠনটি।
যৌথ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ছাত্রলীগের নৃশংস বর্বর রূপ দেখল দেশবাসী। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বর্বর নির্যাতনে নিহত বুয়েটের মেধাবী ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদের তৃতীয় শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ স্মরণসভায় বিনা উস্কানিতে নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকলেও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের মদদ দিতে তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পরে আহতরা চিকিৎসা নিতে ঢাকা মেডিকেলে গেলে সেখানেও আহতদের ওপর নির্মম হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। আর পুলিশ চিহ্নিত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের কিছু না বলে উল্টো সন্ত্রাসীদের নির্দেশনা মত আহত ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে।
নেতৃদ্বয় আরো বলেন, মেধাবী ছাত্র আবরারকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় যেখানে দেশের মানুষ ও ছাত্রসমাজ বিক্ষুদ্ধ, সেখানে পুরো ছাত্রসমাজের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে প্রমাণ হয় এরাও খুনি বুয়েট ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের উত্তরসূরি। আবারো প্রমাণ হয়েছে ছাত্রলীগের সাথে ছাত্রসমাজের কোনো সম্পর্ক নেই, বরং এরা অবৈধ সরকারের লেজুরবৃত্তি ও সন্ত্রাসকেই নিজেদের একমাত্র কর্মসূচি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মূলত ছাত্রলীগের ইতিহাস খুন, সন্ত্রাসের ইতিহাস। নানামুখি অপকর্মের কারণে ছাত্রলীগের প্রতি দেশবাসী ও ছাত্রসমাজ গণধিক্কার দিচ্ছে।
অন্যদিকে ডিবিসি নিউজসহ কিছু গণমাধ্যম ছাত্রলীগের সন্ত্রাসকে আড়াল করতে এ ঘটনার সাথে ছাত্রশিবিরের নাম জড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন নেতৃদ্বয়।
এক বিবৃতিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ ও সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে একটি গণতান্ত্রিক কর্মসুচীতে এই ধরণের সন্ত্রাসী হামলা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। ছাত্রলীগ এই পাশবিক হামলার ভেতর দিয়ে আবার প্রমাণ করলো যে তারা সন্ত্রাসী সংগঠন। বিভিন্ন অজুহাতে তারা ভিন্ন মত ও সংগঠনের কর্মসুচীতে হামলা করে তাদেরকে গায়ের জোরে দমন করার জন্য। প্রশাসনের অব্যাহত নির্লিপ্ততার কারণেই আজ ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চ এক বিবৃতিতে জানান, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মদদে ক্যাম্পাসে আবরারের হত্যাকারীদের উত্তরসূরীদের এই তাণ্ডব দেশের বিরাজমান ভয়াবহতাকেই স্পষ্ট করে তোলে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান বলেছেন, যারা তিন বছর আগে বুয়েট ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তাদের অনুসারীরাই স্মরণসভায় হামলা চালিয়েছে। গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে তাঁরা।
এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন এবং বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সমন্বয়ে ৮টি বাম রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন প্রতিবাদ বিবৃতি জানাবেন বলে জানা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন