অনুকূল সব আয়োজন। প্রচন্ড আত্নবিশ^াস। তব্ওু ব্যর্থতার যোলকলা পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ নারী দল। বৃষ্টি আইনে বাংরাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭ ওভারে মাত্র ৪১। অসম্ভব নয় মোটেই। সেই ম্যাচও ৩ রানে হেরে গেল নিগার সুলতানা জ্যোতির দল!
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা যখন ১৮.১ ওভারে ৫ উইকেটে তোলে ৮৩ সেই সময় ম্যাচ পড়ে বৃষ্টির কবলে। পরে আর ব্যাটিংয়েই নামতে পারেনি লঙ্কানরা। খেলা শুরু হলেও বাংলাদেশ পায় মামুলি লক্ষ্য। নারী এশিয়া কাপে সিলেটের মাটিতে দারুণ সূচনা করলেও ৫ ম্যাচের মধ্যে ৩টিতে হেরে এখন জটিল সমীকরণের মুখে টাইগ্রেসরা।
গতকাল সকালে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে লঙ্কানদের উড়তে দেননি মেঘলা-রুমানারা। লঙ্কানরা ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮.১ ওভারে তুলতে পারে ৮৩ রান। এরপর বৃষ্টির হানায় দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে ম্যাচ। বৃষ্টি থামার পর ডার্ক-ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭ ওভারে ৪১ রান। নিজেদের ঘরের মাঠ, চেনা পরিবেশ। স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে থাকা গুটিকয়ের দর্শক তাই জয়ের আশায় বিভোর। কিন্তু চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় এই ৭ ওভারের মধ্যেই বাংলাদেশ হারায় ৭ উইকেট! সেই সাথে মাত্র ৩৭ রান। ৩ রানের হারে সেমিফাইনাল খেলা এখন কঠিন সমীকরণে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের। লঙ্কানদের ইনিংসে ৩১ বলে সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন নীলাক্ষ্মী ডা সিলভার ব্যাট থেকে। ওপেনার হার্শিথা সামারা বিক্রমা ১৮ রান করতে খেলেন ৩১ বল। সানজিদা আক্তার মেঘলা ৪ ওভারে ১৩ রানে একটি, রুমানা আহমেদ ৩ ওভারে ১৪ রানে দুটি, ফাহিমা খাতুন ৩ ওভারে ১৬ রানে একটি এবং জাহানারা আলম ৩.১ ওভারে ১৭ রানে একটি উইকেট নেন। উইকেট না পেলেও সালমা খাতুন মাত্র ৯ রান দেন ৩ ওভারে। লক্ষ্যের পানে ছুটতে গিয়ে শুরু থেকেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ১২ রানের মধ্যেই বিদায় নেন দুই ওপেনার। এরপর ইনিংস সর্বোচ্চ ১৫ রানের জুটি। ২৭ রানে রুমানার বিদায়ে নিগার সুলতানার সঙ্গে সেই জুটি ভাঙতেই ধপাস ধপাস করেই পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। দলীয় ২৮, ২৯, ৩০, ৩৫ রানে আরও চার উইকেট হারিয়ে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেন রিতু মনিরা। ইনিংস সর্বোচ্চ ১২ রান করেন অধিনায়ক নিগার সুলতান। বাংলাদেশের ব্যাটিং প্রায় একাই ধসিয়ে দেন ইনোকা রানাভিরা। ২ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে শিকার করেন ৪ উইকেট! দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ সেরাও এই বাঁহাতি অর্থোডক্স বোলার। দারুণ জয়ে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থান আরও সুসংহত করেছে শ্রীলঙ্কা। এক ও দুইয়ে থাকা ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সমান ৮ পয়েন্ট লঙ্কানদেরও। তবে রানরেটে খানিকটা পিছিয়ে আছে তারা। থাইল্যান্ডের মেয়েরা আছে চারে। বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচে।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন এই ম্যাচে নিজের শততম আন্তর্জাতিক উইকেট অর্জনকারী জাহানারা আলম। যদিও তার কাছে দলের অনিশ্চয়তাই বড়। কিছুটা আবেগী হয়ে অভিজ্ঞ এই পেসার বলেন, ‘প্রথমত আমার পরিসংখ্যান চেক করি না আমি। আমি নিজেও জানি না আমার একশ উইকেট হয়েছে। একটু ভালো লাগা থাকলেও খারাপ লাগাটা বেশি। কারণ ঘরের খেলা, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আমরা। যদি কোনো কারণে সেমিফাইনালে মিস করি আমাদের দলের থেকে মনে হয় না খারাপ লাগাটা কাজ করবে অন্য কারো।’
সর্বশেষ তিন ম্যাচে একাদশে ছিলেন না জাহানারা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিরে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন তিনি। ৩ ওভার ১ বল হাত ঘুরিয়ে ১৭ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন জাহানারা। জীবনের এমন উত্থান-পতন নিয়ে আফসোস নেই তার। তিনি বলেছেন, ‘যেকোনো ক্রিকেটারেরই উত্থান-পতন থাকে। আমার হয়েছে। যেহেতু একটা ক্রিকেটার একবারে উঠতে পারে না, উত্থান-পতন থাকলেই সে একজন পেশাদার ক্রিকেটার। আমি এখন মনে করি আমি পেশাদার ক্রিকেটার। উত্থান-পতন থাকবে। যখনই সুযোগ পাবো, যখনই দলের আমাকে প্রয়োজন হবে আমি চেষ্টা করবো অবদান রাখতে সেরাটা দিতে।’
সেরাটা দেবার বিকল্পও নেই জাহানারাদের সামনে। নিগার সুলতানার দলকে সেমিফাইনালে খেলতে হলে নিজেদের শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে হারানোর পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হবে ভারত-থাইল্যান্ড ম্যাচের দিকেও। বাংলাদেশ যদি নিজেদের ম্যাচে জয় পায় আর অপর ম্যাচে থাই মেয়েরা যদি হারে, তারপরও সেমিফাইনাল নিশ্চিত হবে না! তখন হিসাব আসবে নেট রান রেটের। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে যাদের নেট রান রেট বেশি, তারাই খেলবে সেমিতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন