ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। বর্তমান প্রজন্মের কয়েকজন সেরা ফুটবলারের নাম বলতে গেলে অবধারিতভাবেই তার নাম আসবে। প্রায় দুই যুগের ফুটবল ক্যারিয়ারে দেখেছেন নানা রকম চড়াই-উৎরায়। লা লিগা,প্রিমিয়ার লিগ,চ্যাম্পিয়নস লিগ,ইউরো- এক বিশ্বকাপের ট্রফিটি ছাড়া দল ও ক্লাবের হয়ে জিতেছেন সব কিছুই।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই মহতারকার সময়টা একদম ভালো যাচ্ছিলনা।মাঠে পাচ্ছিলেন না গোলের দেখা, মাঠের বাইরেও নানা কারণে ছিলেন আলোচনায়।অবস্থা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিল যে দলের মূল একাদশে হয়ে পড়েছিলেন অনিয়মিত।অনেকই ধরে নিয়েছিলেন ধ্রুত সমাপ্তির দিকে এগুচ্ছে 'সিআর সেভেন' অধ্যায়। তবে গতকাল এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো গোলে রোনালদো বার্তা দিয়ে রাখালেন-তাকে বাতিলের খাতায় ফেলার সময় এখনো আসেনি।
এই গোলে ক্লাব ফুটবলে অনন্য এক রেকর্ড এর অংশীদার হয়ে গেলেন এই পর্তুগিজ সেনসেশন। ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৭০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করলেন রোনালদো। ফুটবলের অল টাইম গ্রেট হিসেবে বিবেচিত এ মহাতারকার এমন অর্জনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সব মহলের প্রশংসায় ভাসছেন।
তার সতীর্থ ক্লাবের কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা এই অবিশ্বাস্য এই মাইলফলক সিআর সেভেনকে সামনে দিনগুলোতে পুরনো রূপে ফিরতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।২০০২ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং সিপির হয়ে বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সিআর সেভেন। গত ২০ বছরে ফুটবল মাঠে তার স্মরণীয় সব মুহূর্তের স্মৃতি রোমন্থন করা যাক।
প্রথম গোল (২০০২)
তখনও আজকের রোনালদো কৈশোর পেরিয়ে পুরোপুরি যৌবনে পা রাখেননি।তবে ১৭ বছর বয়সে তার প্রথম ক্লাব স্পোটিং সিপির হয়ে করা ক্যারিয়ারের প্রথম গোলেই তিনি জানান দিয়েছিলেন ফুটবল বিশ্বে রাজত্ব করার জন্যই তিনিই এসেছেন।মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় প্রতিপক্ষের একাধিক খেলোয়াড়কে পেছনে ফেলে ঢুকে পড়েছিলেন ডি বক্সে।তারপর দারুণ মুন্সিয়ানায় নেওয়া শটে পরাস্ত করলেন গোলরক্ষককে।অনেকদিন মনে রাখার মতই ছিল তার আগমনী বার্তা।
প্রথম হ্যাট্রিক(২০০৮)
অমৃত প্রতিভাবান তরুণ রোনালদো দ্রুতই বিশ্বের বড় বড় সব ক্লাব কর্তৃপক্ষের নজর কাড়েন। মাত্র ১৮ বছর বয়সের তিনি নাম লেখান ইংলিশ জায়ান্ট ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। শুরু থেকেই সেখানে দারুণ সফলতার সাথে খেলে যাওয়া সিআর সেভেন এই ক্লাবের জার্সি গায়ে ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিকেের দেখা পান। তার প্রথম হ্যাট্রিকটি আসে ২০০৮ সালের প্রিমিয়ার লিগে। প্রতিপক্ষ ছিল নিউক্যাসেল।ততদিনে সারা বিশ্বের কাছে তিনি পরিচিত মুখ। উইঙ্গার হয়ে ইউনাইটেড যোগ দিলেও পরবর্তী সময়ে নিজেকে ফরোয়ার্ড হিসেবে তৈরি করেন রোনালদো।
১০০ তম ক্যারিয়ার গোল(২০০৮)
২০০৮ সালেই ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে শততম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন এ পর্তুগিজ তারকা। সেবারের প্রিমিয়ার লিগ আসরে টটেনহ্যামের বিপক্ষে তার শততম গোলটি আসে। ম্যান ইউর হয়ে প্রথম দফায় ছয় বছরের খেলোয়াড় জীবনের ২৯২ ম্যাচে ১১৮ টি গোল আসে সি আর সেভেনের।২০০৯ সালে ২৪ বছর বয়সে যোগ দেন স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে।
২০০ তম গোল(২০১০ সাল)
প্রথম ১০০ গোল করতে ৭ বছর সময় লাগলেও, সেটির দু বছরের মাথায় দ্বিগুণ করেন ক্রিস্টিয়ানো। বছরের লা লিগাই আর এক স্প্যানিশ ক্লাব ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে এই মাইলফলক অর্জন করেন তিনি। মূলত রিয়াল মাদ্রিদের হয়েই নিজের ক্যারিয়ারের স্বর্ণযুগটা অতিবাহিত করেছেন সি আর সেভেন।
প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ হ্যাট্রিক (২০১২)
গত দশকে রিয়াল মাদ্রিদ যে কয়টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে তার সবকটিতেই বড় ভূমিকা ছিল রোনালদোর। ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের এ বড় মঞ্চে তার প্রথম হ্যাট্রিকটি আসে ২০১২ সালে আজাক্সের বিপক্ষে। তার সৌজন্যে এই দশকের রিয়াল মাদ্রিদ রেকর্ড সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের গৌরব অর্জন করে।
প্রথম পাঁচ গোল (২০১৫)
রিয়াল মাদ্রিদ রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তখন জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছেন এ পর্তুগির্জ তারকা। প্রতি ম্যাচেই ছাড়িয়ে যাচ্ছিলেন নিজেকে। অসংখ্য হ্যাটট্রিক ও বেশ ককয়েকবার চার গোলের পর তিনি ২০১৫ সালে এসে এক ম্যাচেই ৫ গোল করার কীর্তি প্রথমবারের মতো অর্জন করেন। সে ম্যাচের প্রতিপক্ষ গ্রানাডা তার আগুনে পারফরমেন্সের রাতে হজম করেছিল নয় গোল!
৫০০ তম গোল(২০১৫)
ক্লাব ফুটবলের তখন মেসি-রোনালদোর রাজত্ব। একদিন একজন ছাড়িয়ে গেলে অন্যদিন ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন আরেকজন। এভাবেই এগোচ্ছিল সময়টা। স্প্যানিশ ক্লাবের সম্ভাব্য সবকিছু অর্জন করা সিআর সেভেন সে বছরই নিজের ক্লাব ক্যারিয়ারের ৫০০ তম গোল এর মাইলফলক অর্জন করেন
৪৫০ তম রিয়াল মাদ্রিদ গোল(২০১৮)
এই ক্লাবের হয়ে বিভিন্ন সময়ে খেলে গেছেন বিশ্ব ফুটবলের নামিদামি সব তারকা। মধ্যে রয়েছেন জিনেদিন জিদান,রাউল, রবার্তো কারলোর্স। তবে বছরের পর বছর অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়ে তাদের সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন সি আর সেভেন।ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ফুটবলার তিনি। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়েব তিনিই একমাত্র ৪৫০ গোলের মাইলফলক অর্জন করেছেন।
৬০০ তম গোল
প্রায় এক দশকের ক্যারিয়ারে স্পেনিশ ক্লাবটির হয়ে সবকিছুই জিতেছিলেন। তাই নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যোগ দিয়েছিলেন ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে। সেখানে এসেছে তার ৬০০ তম গোল।
৭০০ তম গোল
এই ক্লাবে তিনিই প্রথম। গতকালের এবার টোন এর বিপক্ষে গোল করেই এই অনন্য মাইলফলক অর্জন করেন এই পর্তুগিজ মহাতারকা।ম্যাজিকাল '৭০০' অর্জনের পথে তার খেলতে হয়েছে ৯৪৫ ম্যাচ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন