ডলারের দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের কাছে দাবি তুলে ধরেন বিকেএমইএর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম। বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি ঢাকা বলেন, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় নগদায়নে ডলারের দাম বৈষম্যমূলক। এই বৈষম্যমূলক ডলারের মূল্য নির্ধারণ ও ডলারের কেনাবেচার মূল্যের ব্যবধান ১ টাকার বেশি না করাসহ চার কারণে ডলারের দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি করেছি।
গভর্নরের কাছে লেখা চিঠিতে বলা হয়, দেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি খাত থেকে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এসেছে। যার ৮২ ভাগ এসেছে তৈরি পোশাক রফতানির মাধ্যমে। করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও পোশাক শিল্পের এই অর্জন দেশের রফতানি খাতকে গতিশীল রেখেছে। দেশের শিল্পায়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অন্যতম প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বিকেএমইএ নিটওয়্যার ব্যবসায়ীদের সংগঠন হিসেবে নিট সেক্টরের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতে, নতুন বাজার সম্প্রসারণ, প্রতিযোগিতামূলক বাজারের নিজেদের গ্রহণযোগ্যতাকে টেকসই করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে নিট পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ২৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার যা গত বছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি।
উল্লেখ্য, পোশাক শিল্পের ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামাল ও ডাইংয়ে ব্যবহৃত রং কেমিক্যালের জন্য বাংলাদেশ মূলত আমদানি নির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম, পরিবহন খরচ ও কাঁচামালসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সকল পণ্যর দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ অবস্থায় প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পণ্য রফতানি করে কাক্সিক্ষত মুদ্রা অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে ডলারের মূল্য আমদানি দেনা পরিশোধ এবং রফতানি আয় নগদায়নের ব্যবধানের কারণে উদ্যোক্তারা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমদানি ও রফতানি সমবস্থা আনয়নে বিকেএমইএর পক্ষ থেকে চার দফা প্রস্তাব বিবেচনার অনুরোধ করছি।
প্রথমত, ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংকার অ্যাসোসিয়েশন ও বাফেদার পাশাপাশি রফতানি খাতের বৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে বিকেএমইএ, বিজিএমইএ মতামত যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা। এ ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য নির্ধারণ করবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক।
দ্বিতীয়ত, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমানে আমাদের বেশিরভাগ রফতানির মূল্য ডেফার্ড হয়ে যাচ্ছে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ১৮০ দিনের সীমানায় পৌঁছে যায়। অন্যদিকে আমরা যে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি করছি সেই আমদানি দেনা পরিশোধের জন্য আমরা পাই ৯০ থেকে ১০০ দিন। বাস্তবে আমদানি দেনা পরিশোধের জন্য ১০৪ দশমিক ৫০ পয়সা থেকে ১০৬ টাকা হিসেবে ডলারের ক্রয় করে আমদানি দায় পরিশোধ করছে। অপরদিকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রফতানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা পেতে পারি। ডলার কনভার্সনের এই নীতিগত প্রক্রিয়াতেই আমরা বিশাল অঙ্কের একটি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি, যা কোনোভাবে কাম্য নয়। ফলে দেখা যায়, বছর শেষে একটা বড় ধরনের শর্টফল তৈরি হবে। যা ব্যবসায়ীদের পক্ষে কোনোভাবেই সমন্বয় করা সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পূর্বের মতো ইডিএফের মাধ্যমে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দেনা পরিশোধ সমন্বয় করতে নির্দেশনা প্রদান করতে পারে। তৃতীয়ত, ডলারের ক্রয়-বিক্রয় মূল্য কোনোভাবেই ১ টাকার বেশি পার্থক্য হওয়া উচিত নয়।
এছাড়াও, দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধিতে রেমিট্যান্স ও রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় সমানভাবে অবদান রাখে। সম্প্রতি ব্যাংকার অ্যাসোসিয়েশন ও বাফেদা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে রেমিট্যান্স ও রফতানির ক্ষেত্রে ডলারের আলাদা বিনিময় হার নির্ধারণ করেছে। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার ১০৮ টাকার সাথে ২ দশমিক ৫ শতাংশ ইনসেন্টিভসহ আরও ২ দশমিক ৭০ টাকা অর্থাৎ ১১০ টাকা ৭০ পয়সা এবং রফতানিকারকের সর্বোচ্চ বিনিময় হার পাবেন ৯৯ টাকা। ফলে প্রবাসী আয় ও রফতানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে ব্যবধানে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭০ টাকা। রেমিট্যান্স ও রফতানি নগদায়নের সৃষ্ট ডলারের এ ধরনের বৈষম্যমূলক বিনিময় হার কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে ডলারের বিনিময় মূল্য একই হওয়া উচিত।
এ পরিস্থিতিতে উল্লেখিত বিষয়াদি বিবেচনা সাপেক্ষে তৈরি পোশাক শিল্পের চাকাকে বেগবান রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক রফতানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য একই হারে পুনর্নির্ধারণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করতে অনুরোধ করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন