আগের দিন বাংলাদেশের বিপক্ষেও দলের জয়ে বড় ভূমিকা ছিল মোহাম্মদ নাওয়াজের। পাকিস্তানের এই অলরাউন্ডার ফাইনালের বড় মঞ্চে জ্বলে উঠলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও। রান তাড়ায় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেমে তিনিই গড়ে দিলেন পার্থক্য। তার সঙ্গে মিলে অবদান রাখলেন হায়দার আলিও। এই দুজনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতে নিয়েছে পাকিস্তান। গতকাল ক্রাইস্টচার্চে বাংলা ওয়াশ সিরিজের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাবর আজমের দল। আগে ব্যাটিং পেয়ে কিউইদের করা ১৬৩ রান ২ বল আগে পেরিয়ে জিতে যায় পাকিস্তান। চাপের মুহূর্তে নেমে দারুণ ইনিংসে দলকে জিতিয়ে ২২ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন নাওয়াজ। ১৫ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলে যান হায়দার। নাওয়াজ বল হাতেও নিয়েছেন ১ উইকেট, কোন সংশয় ছাড়াই ফাইনালের সেরা তিনি।
১৬৪ রান তাড়ায় শুরুটা জুতসই হয়নি পাকিস্তানের। পঞ্চম ওভারে ফিরে যান অধিনায়ক বাবর। মিচেল ব্রেসওয়েলের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৪ বলে ১৫ করা পাকিস্তান অধিনায়ক। শান মাসুদ তিনে নেমে ছিলেন জড়সড়ো। মোহাম্মদ রিজওয়ান বরাবরের মতই খেলছিলেন ধীরলয়ে। প্রথম ১০ ওভারে তাই প্রত্যাশিত রান পায়নি পাকিস্তান। একাদশ ওভারে শান যখন ফিরে যান দলের রান তখন ৬৪। রিজওয়ান ফেরেন কাজ অসমাপ্ত রেখে। ২৯ বলে তার ৩৪ রানের ইনিংস এলবিডব্লিউতে থামান ইস সোধি। ওভারপ্রতি দশের উপর রান নেওয়ার চাপ পরে সামলান নাওয়াজ। হায়দারকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে মাত্র ২৬ বলে তুলেন ৫৬ রান। যার ১১ বলে ২৪ নাওয়াজের। হায়দার ১৫ বলে করে যান ৩১। নাওয়াজ আউট না হয়ে বাকিটাও সারেন নিখুঁতভাবে।
শেষ ৬ ওভারে দরকার ছিল ৬৭ রান। তখন লেগ স্পিনার সোধির উপর চড়াও হন পাকিস্তানের দুই ব্যাটার। সোধির করা ১৫তম ওভার থেকে নাওয়াজ-হায়দার তিন ছক্কা, এক চারে তুলেন ২৫ রান। এরপরই ম্যাচ পুরো হেলে যায় পাকিস্তানিদের দিকে। কেবল স্বাভাবিক গতি জারি রেখেই কাজ সেরে নেয় তারা।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসেও ছিল দুইরকম ধাপ। উড়ন্ত শুরুতে বড় পুঁজির আভাসই ছিল তাদের। প্রথম ১০ ওভারে তাদের রান ছিল ২ উইকেটে ৮৩। ১৫ ওভার শেষে স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৩০। শেষ ৫ ওভারে আসেনি যথেষ্ট রান। ডেথ ওভারে পাকিস্তানি পেসাররা চেপে ধরেন তাদের। দ্বিতীয় উইকেটে ডেভন কনওয়ে-কেইন উইলিয়ামসনের ২৬ বলে ৩৫ ও তৃতীয় উইকেটে উইলিয়ামসন-গ্লেন ফিলিপসের ৩৭ বলে ৫০ রানের জুটির সময় মনে হচ্ছিল অন্তত ১৮০ রানের দিকে যাবে স্বাগতিকরা। তবে উইলিয়ামসন ৩৮ বলে ৫৯ করার পর ফিলিপস, চ্যাপম্যানরা থিতু হয়েও খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। প্রত্যাশার চেয়েও তাই অন্তত ২০ রান কম আসে কিউইদের বোর্ডে। যা নিয়ে লড়াই করা গেলেও জেতা যায়নি ম্যাচ।
নিজের পাওয়ার হিটিং সামর্থ্য এশিয়া কাপেই দেখিয়েছিলেন নাওয়াজ। এদিনও বিপদের মুখে ত্রাতা হয়ে উদ্ধার করলেন দলকে। তবে পাকিস্তানের ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল জয়ের নায়ক একসময় দেখেছেন মুদ্রোর উল্টো পিঠও। ২০১৬ সালে অভিষিক্ত হওয়া নাওয়াজ পাকিস্তান দলে নিয়মিত হয়েছেন ২০২১ সালে এসে। মাঝে ২০১৯ ও ২০২০ সালে সুযোগ পাননি একটি ম্যাচেও। সেই কঠিন সময়ে নিজেই সান্ত্বনা দিতেন নিজেকে। নাওয়াজ বলেন, ‘সেই দিনগুলোতে নিজেই নিজেকে সমর্থন যোগাতাম। নেটে যা অনুশীলন করতাম সেটাই স্বচ্ছ মনে করে দেখানোর চেষ্টা করতাম।’
এশিয়া কাপের সুপার ফোরে ভারতের বিপক্ষে নাওয়াজ জানান দেন ‘লম্বা রেসের ঘোড়া’ তিনি। মাত্র ২০ বলে ৪২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে মসৃণ করেন পাকিস্তানের জয়ের পথ। এরপর আবার অনেকগুলো ম্যাচে ব্যাট হাতে কাটান বিবর্ণ সময়। এবার আবার মোক্ষম সময়েই ফিরলেন ফর্মে, তার ব্যাটে চড়ে আগের দিন বাংলাদেশ ও গতকাল বাংলাওয়াশ সিরিজের শিরোপা জিতে নিল পাকিস্তান। ম্যাচের পরিস্থিতি নিয়ে ম্যাচসেরা নাওয়াজ বলেন, ‘মিডল অর্ডারের ব্যাটিং আমাদের অনেক কাজে দিয়েছে। উইকেট ধরে রেখে পরিকল্পনামাফিক খেলার চেষ্টা করেছি। সোধির বিপক্ষে বাতাসকে কাজে লাগিয়ে আমরা বাউন্ডারি মেরেছি। আবহাওয়া খুবই ঠাণ্ডা ছিল। পাকিস্তান থেকে এসে মানিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল। এখন আমরা বিশ্বকাপের জন্য মুখিয়ে আছি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন