ফুটবলে মাতোয়ারা কে না হয়। ইতিহাস সেরকমই। তুমুল উত্তেজনার ফুটলবে আনন্দ খোঁজে সকলেই। অলসতার কোন পাঠ নেই ফুটবলে। কেবল টান টান যুদ্ধের ঘঁড়ির কাটায় সমাপ্তি। সেই সাথে দর্শকদের সমর্থনের নান্দনিকতা। বিশ^ মানচিত্রে ফুটবলের ইতিহাস ও অংশগ্রহণ নিরঙ্কুশ। জনপ্রিয়তায় কোন জুড়ি নেই, একদমে সার্বজনীন বিচারে শ্রেষ্ঠ। তেমনিভাবে সেই ফুটবলের ইতিহাস ও বাস্তবতার সাথে জড়িয়ে রয়েছে সিলেট। কিন্তু বর্তমানের ফুটবলের প্রসঙ্গ এলেই শোনা যায় বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা, সেই সাথে হতাশা। এ অঞ্চলের একাধিক ফুটবলার জাতীয় দলের ত্রি-সীমানায় থাকলেও স্থানীয় ফুটবলের করুণ দশাও গায়ে মাখা। বহু বছর পর প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লিগ মাঠে গড়ালেও অব্যবস্থাপনার বেড়াজালে অনেকটা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ লিগে অংশগ্রহণকারী ক্লাব কর্মকর্তা, ফুটবলারসহ সংশ্লিষ্টরা।
ফুটবলের ক্ষত সিলেট কতখানি গভীরে তার উল্লেখ্যযোগ্য তথ্যের মধ্যে হলো, স্থানীয় ফুটবলে গুরুত্বপ‚র্ণ প্রথম বিভাগ লিগ ২০১৮-১৯ মৌসুমে। গত তিন বছর এই লিগের কোন খবর হয়নি। তেমনি খবরহীন দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লিগও। এই লিগ সর্বশেষ মাঠে গড়িয়েছিল ২০১৯-২০ মৌসুমে। আর প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লিগের অবস্থা তো আরও হতাশাজনক! এ বছরের আগে সর্বশেষ এই লিগ হয়েছিল সেই ২০১৭ সালে! পাঁচ বছর পর এবার লিগের আসর শুরু হয়েছে সিলেটে।
প্রিমিয়ার ডিভিশন শুরুর দিনক্ষণ ছিল গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখ থেকে। তবে সেখান থেকে পিছিয়ে এসে শুরুর তারিখ ৬ অক্টোবরে নেয় লিগ কমিটি। তখন লিগ কমিটি জানায়, ‘কয়েকটি ক্লাবের অনুরোধের প্রেক্ষিতে’ লিগ শুরুর তারিখ পেছানো হয়েছে। সিলেট ইউনাইটেড ক্লাব, আবাহনী ক্রীড়াচক্র, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, গেøারিয়ার্স স্পোর্টিং ক্লাব, কসমস ক্লাব, জনতা স্পোর্টিং ক্লাব (কুচাই), টিলাগড় স্পোর্টিং ক্লাব, সিলেট স্পোর্টিং ক্লাব, বীর বিক্রম ইয়ামিন ক্রীড়াচক্র ও লাউয়াই স্পোর্টিং ক্লাবকে নিয়ে লিগ শুরু হলেও রয়ে গেছে অব্যবস্থাপনা। বৃষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে লিগ শুরুর পর স্থগিত করা হয়েছে মাঝপথে। গত ১১ অক্টোবর স্থগিত করা লিগ আগামী বুধবার (১৯ অক্টোবর) থেকে ফের মাঠে গড়াবে।
এবারের লিগে নেই কোনো অংশগ্রহণ ফি। অর্থাৎ, ক্লাবগুলো লিগে অংশগ্রহণ করলেও কোনো ফি পাচ্ছে না। এমনকি লিগে রাখা হয়নি কোনো ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কারও! একটি আসরে প্রতিটি ম্যাচের অহংকার-অলংকার ম্যান অব দ্যা ম্যাচ পুরস্কারটি। তাও বাদ দেয়া হয়নি। এনিয়ে ক্রিড়ামোদীদের বক্তব্য. লিগ নিয়ে তামাশার একটি চিত্র মুলত এটি। যেনতেন ভাবে লিগটি সমাপ্ত করাই যেন কর্তৃপক্ষের কাজ। দায়িত্ব তথা আয়োজনের আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এতে।
প্রিমিয়ার ডিভিশনের প্রথম আসরে ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ ফি ও ম্যাচসেরার পুরস্কার দুটোই ছিল। এবার দ্বিতীয় আসরে এসে ঘটেছে এ ‘অবনমন’! লিগে যে দল দুটি চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হবে, তারা প্রাইজমানি কতো করে পাবে, তাও জানেনা অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলো। প্রাইজমানি বিষয়ক কোনো তথ্যই জানানো হয়নি ক্লাবগুলোকে। অব্যবস্থাপনার শেষ এখানেই নয়। যেকোনো লিগেই লিগ কমিটি ম্যাচের দিন খেলোয়াড়দের জন্য ন্যুনতম পানির ব্যবস্থা রাখে। কিন্তু সিলেটে প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লিগে ক্লাবগুলো পানিও পাচ্ছে না। নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ক্লাবগুলোকে বাইরে থেকে পানি নিয়ে আসতে হচ্ছে।
এইসব অব্যবস্থাপনা ও ঘাটতি নিয়ে ক্লাবগুলোর মধ্যে বিরাজ করছে অসন্তোষ। এ নিয়ে টিলাগড় স্পোর্টিং ক্লাবের ম্যানেজার ইমরাজ আহমদ বলেন, ‘সিলেটের সর্ববৃহৎ ফুটবল আসর শুরু হয়েছে অগোছালোভাবে। এতো বড় আসর, অথচ ন্যুনতম জাঁকঝমকপ‚র্ণ কোনো আয়োজন করা হয়নি। আমরা যে খেলছি, আমাদের কোনো অংশগ্রহণ ফি নাই। পুরস্কার কী দেবে নাকি দেবে না, সেটাও জানি না। খাবার পানিও পাওয়া যায় না। আর কত কি ভেতরে ভেতরে ঘটছে কে জানে?’
জনতা স্পোর্টিং ক্লাবের সেক্রেটারী সাদেক আহমদ বলেন, ‘লিগে বেশ কয়েকটি ম্যাচ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এখন অবধি আমরা জানি না, চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ হলে প্রাইজমানি কতো, পুরস্কারইবা কী! ফুটবল লিগ মানেই হচ্ছে অংশগ্রহণ ফি থাকবে। কিন্তু আমাদের জন্য সেটাও বরাদ্দ নেই। ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার দেওয়া হয় না, পানিও পাই না। মাঠের অবস্থাও খারাপ। ডাগ আউটের যে আউটলাইন থাকে, সেটাও বিবর্ণ! এখন কোচ, ম্যানেজার দাঁড়াবে কোথায়? একটা তথৈবচ অবস্থা।’ রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি যোগ করেন, ‘রেফারিং কতোটা মানসম্মত হচ্ছে, সেটাও বড় প্রশ্ন।’ অংশগ্রহনরত একাধিক ফুটবলারের আফসোসও মিলে গেল এক সুরে, ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কারটা পর্যন্ত নাই! একজন খেলোয়াড় ভালো খেলার তাড়না, তাগিদ কোথা থেকে পাবে? তাকে তো উৎসাহ দিতে হবে। সেই উৎসাহ পাচ্ছি না লিগে। মাঠে আসি, খেলি, চলে যাই, ব্যস!’
প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগের ম‚ল স্পন্সর ফ্যাশন হাউস ‘মাহা’। কো-স্পন্সর হিসেবে আছে বারাকা গ্রæপ, কুশিয়ারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হল এবং হোটেল স্টার প্যাসিফিক। কিন্তু এসব স্পন্সর কতো টাকা দিচ্ছে, সেই তথ্যও প্রকাশ করেনি লিগ কমিটি।
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লিগের সদস্য সচিব মিলাদ আহমদ জানান, ‘জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের (ডিএফএ) সভাপতি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম দেশে নেই, তাই আসলে কিচ্ছু জানি না আমরা।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন