প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পর উত্তরবঙ্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। এই প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রেডে সংযুক্তির মাধ্যমে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ-এর চাহিদা তো পূরণ করবেই সেই সাথে এক সময়ের মংগাপীড়িত উত্তরাঞ্চল, যদিও এখন মংগা নেই তারপরও এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুবাদে উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক পরিমাণে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। সেই সাথে সৃষ্টি হবে মানুষের কর্মসংস্থান।
আজ ১৯ অক্টোবর'২২ সকালে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে নির্মাণাধীন ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, ১৯৬২ সালে তৎকালীন সরকার ২টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। যার একটি পূর্ব পাকিস্তানে এবং একটি পশ্চিম পাকিস্তানে করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দুটিই তারা পশ্চিম পাকিস্তানে স্থাপন করে। দুঃখজনক হলেও সত্য জমি অধিগ্রহণ করার পরেও এখানে প্রকল্পটি না করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ তাদের আশা থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থায়ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এবং এব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনাও করেছিলেন। কিন্তু ঘাতকদের বুলেট তাকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করে যেতে দেয়নি।
তিনি বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রণয়ন করি। এব্যাপারে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটিও গঠন করে দেয়। এই কমিটি ভিয়েনা সহ অনেক জায়গায় যায়। একটি নীতিমালা তৈরী করার মাধ্যমে এসংক্রান্ত কাজ এগিয়ে নেয়া হয়। সে সময় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি দল এখানে এসে প্রকল্পের জমি পরিদর্শন করে যায়। এই প্রকল্পের কাজ চলমান অবস্থায় ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনান্তে চুক্তি স্বাক্ষর করি। এই চুক্তিতে জনগণের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়। সেই মোতাবেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মসম্পাদন হচ্ছে।
তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এ্যানার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (আইএইএ)-এর গাইড লাইন অনুযায়ী সংস্থাটির কড়া নজরদারির মধ্যদিয়েই এই প্রকল্পে কাজ এগিয়ে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারী এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে সারাবিশ্বে অনেক সমস্যা সংকট সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু সবার আন্তরিকতায় এই প্রকল্পের কাজ যেমন ব্যাহত হয়নি, অন্যদিকে দেশে কোন খাদ্যাভাবও দেখা দেয়নি।
যেভাবে এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে তাতে ২০২৩ সালে একটি চুল্লী উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর আগে তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রেসার ভেসেল স্থাপন উদ্ভোদন করেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেশন রোসাটম-এর ডিরেক্টর জেনারেল মিষ্টার আলেক্সি লিখাচেভ। বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি, রূপপুর প্রকল্প পরিচালক সওকত আকবর।
অনুষ্ঠানে সংসদীয় কমিটির সদস্য, বিভিন্ন আসনের এমপি, সচিব, দেশি বিদেশি সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন