বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আরেক দফা বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ

ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো

মো. জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

শুল্ক আদায় কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানের করে তুলতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০১৭ সালে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। যেই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর এ প্রকল্পের মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্নীত করা হয়। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে এখনও ভেন্ডর নিয়োগ দেয়ার কাজই শেষ করতে পারেনি রাজস্ব বোর্ড। তাই বর্ধিত সময়েও এনএসডব্লিউ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে নিশ্চিত করেছে এনবিআর সূত্র।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন প্রক্রিয়াগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সময়োপযোগী, সঠিক ও মূল্যবান তথ্য প্রদান করা যাতে সরকারের বিভিন্ন অনুমান এবং পরিকল্পনাকে সহায়তা করা যায়। এনএসডব্লিউ প্রকল্পের ব্যয়ের পরিমান ছিল ৫৮৫ কোটি টাকা। যেখানে ৫৫ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা এসেছিল সরকারি কোষাগার থেকে। এছাড়া ৫২৯ কোটি টাকার অর্থায়ন করেছিল বিশ্বব্যাংক।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, শুল্ক বন্দর ও শুল্ক স্টেশনগুলোতে আধুনিক স্ক্যানার স্থাপন করা হচ্ছে। সব স্টেকহোল্ডারকে একক প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত করার জন্য এনএসডব্লিউ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যা আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সেবা সরবরাহ করবে। আধুনিক ও প্রযুক্তি ভিত্তিক এনএসডব্লিউ প্রকল্পের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন বাণিজ্যকে আরও গতিময় করবে এবং ব্যবসায়ের পরিচালন ব্যয় কমাবে। যা কাগজবিহীন আন্তদেশীয় বাণিজ্য বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হবে। অ্যাডভান্স রুলিং প্রোগ্রাম প্রবর্তনের সাথে সাথে আমদানিকারক বা নতুন উদ্যোক্তারা এখন এইচএস কোডগুলো এবং তাদের পণ্য আমদানির আগে উৎসের নিয়মগুলো সম্পর্কে জানতে পারবে।

এনবিআরের তথ্যমতে, ব্যবস্থাটি চালু হয়ে গেলে সময় কম লাগার কারণে বাণিজ্যের জন্য ব্যয়ের ক্ষেত্রে মোট তিন লাখ ১৯ হাজার আমদানিকারক এবং রফতানিকারক উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও পঞ্চম বছরে পদার্পন করেছে এই প্রকল্প। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তারা সুবিধা পাবেন। বাঁচবে অর্থ এবং সময়। কমবে ভোগান্তি। জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ তাদের। এনবিআরের আশা, এনএসডব্লিউ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গড়ে আমদানি পণ্য ছাড়ে সময় কমে ১২২ ঘণ্টা হবে। এছাড়া রফতানির ক্ষেত্রে তা কমে ৮৮ ঘণ্টায় দাঁড়াবে। বর্তমানে বিভিন্ন কাস্টমস বন্দরগুলোর মাধ্যমে আমদানি পণ্য ছাড়ে আট দিন এবং রফতানি পণ্যের জন্য পাঁচ দিনের প্রয়োজন হয়।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পাঁচ বছরে মাথায় দাঁড়িয়ে এখনও আঞ্চলিক সংযোগের অভাবে অচলাবস্থায় পড়ে আছে প্রকল্পটি। তাই মেয়াদ আরও বাড়নো হতে পারে। এছাড়া বেশিরভাগ সরকারি সংস্থা ও দফতর এখনও নিজেদের পুরোপুরি প্রস্তুত করতে পারেনি। কিভাবে একক উইন্ডোর অধীনে একীভূতকরণ করা যায়, তা নিয়ে তারা এখনো ভাবছে।

২০১৮ সালের আগস্টে এনবিআর এনএসডব্লিউ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৩৮টি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর (এমওইউ) করেছিল। প্রকল্পটির এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন শূণ্যের কোটায়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০৪ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।
এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) ও এনএসডব্লিউ এর প্রকল্প পরিচালক জাকিয়া সুলতানা বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এখন দ্রুততার সঙ্গে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা প্রকল্পটির ভেন্ডর নিয়োগের কাজ করছি।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক পণ্যসম্ভারের ছাড়পত্র বাড়বে। এতে ব্যবসা করার সময় ও ব্যয় কমবে। পণ্যের ছাড়পত্র পর্যন্ত প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকতা ও স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করবে। এনএসডব্লিউ একটি ব্যবহারকারী-বান্ধব ইলেকট্রনিক সিস্টেম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত যা নিবন্ধিত বেসরকারি খাতের স্টেকহোল্ডার এবং সরকারী সংস্থাগুলির পদ্ধতিগুলিকে স্ট্রীমলাইন এবং স্বয়ংক্রিয় করে। এটি রফতানি ও আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ফাঁকিও পরীক্ষা করবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করবে।

এমনকি ব্যবসায়ীরা এই উইন্ডোর অধীনে রফতানি ও আমদানি এগিয়ে যাওয়ার জন্য সমস্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করবে। বর্তমানে আমদানি-রফতানি ছাড়পত্রের সময় ব্যবসায়ীরা ঝামেলার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমদানিকৃত পণ্য আনলোড করার আগে একজন আমদানিকারককে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে। এতে যথেষ্ঠ সময়, আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়। রফতানিকারকদেরও রফতানি প্রক্রিয়া চলাকালীন একই জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়।
বিশ্ব শুল্ক সংস্থা উদ্ভাবিত বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, সর্বশেষ টাইম রিলিজ স্টাডি (টিআরএস) রিপোর্টে দেখা গেছে, বেনাপোলে আমদানি ছাড়পত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গড় সময় প্রয়োজন ১০ দিন ৮ ঘন্টা ১১ মিনিট। বিপরীতে চট্টগ্রামে প্রয়োজন হয় ১১ দিন ৬ ঘন্টা ২৩ মিনিট এবং ঢাকায় ৭ দিন ১১ ঘন্টা ১৯ মিনিট।

টিআরএস রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্যাপিটাল মেশিনারিজগুলির জন্য পণ্যভিত্তিক বিশ্লেষণে সমস্ত বন্দর প্রায় একই সময় নেয়। যার গড় সময় প্রায় ১২ দিন। গার্মেন্টসের কাঁচামালের জন্য বেনাপোল এবং চট্টগ্রামে প্রায় ১০ দিন এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের জন্য চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ১৪ দিন ৫ ঘন্টা ৪৯ মিনিট সময় লাগে। এটি মূলত মূল্যায়নের পরে অর্থপ্রদানের জন্য সময় নেওয়ার জন্য দায়ী

টিআরএস রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ক্লিয়ারেন্স সময়ের ৭২ থেকে ৭৮ শতাংশ একটি বড় অংশ আমদানি নথি সংগ্রহ এবং জমা দেওয়ার জন্য ব্যয় করা হয়, যা অটোমেশনের জরুরি প্রয়োজন বোঝায়। প্রাক-কাস্টমস ঘোষণা পর্যায়ে।

উল্লেখ্য, শুল্ক আদায়কে আধুনিকীকরণের জন্য এএসওয়াইসিইউডিএ ওয়ার্ল্ড, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো, অটোমেটেড কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, অনুমোদিত ইকোনোমিক অপারেটর ইত্যাদি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআর। শুল্ক পরিচালনার জন্য দ্য অটোমেটেড সিস্টেম ফর কাস্টমস ডেটা (এএসওয়াইসিইউডিএ) একটি কম্পিউটার ভিত্তিক ব্যবস্থা। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) তৈরি করা একটি পদ্ধতি এটি। আঙ্কটাডের লক্ষ্য ছিল সারা বিশ্বের কাস্টমস কর্তৃপক্ষগুলোকে তাদের মূল প্রক্রিয়াগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সময়োপযোগী, সঠিক ও মূল্যবান তথ্য প্রদান করা যাতে সরকারের বিভিন্ন অনুমান এবং পরিকল্পনাকে সহায়তা করা যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন