বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখালেন সাকিব

নেদারল্যান্ডসকে হাল্কাভাবে নিচ্ছে না বাংলাদেশ

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ শুরু হয়েছে ১০ দিন পেরিয়ে গেছে। তবে আসল উত্তাপ পাওয়া যাচ্ছে গত দু’দিন ধরে। আগের দিন প্রথম পর্বের মোড়কে বাছাই পেরিয়ে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচটিই হয়েছে রেকর্ডে মোড়ানো। মুখোমুখি ছিল দুই ‘প্রতিবেশি’, গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। তবে তাসমান সাগরের হিম শীতলতা ছাপিয়ে উত্তাপের আঁচ গতকালই কেবল পৌঁছুতে পেরেছে উপমহাদেশে। যেখানে এবার মুখোমুখি দুই ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’। ভারত-পাকিস্তান মহারণটি হলোও টি-টোয়েন্টি বিনোদনের আসল বিজ্ঞাপন। তাতে শেষ ওভারের নখ কামড়ানো রোমাঞ্চ ছাপিয়ে জিতেছে ভারত। তাতে বাদ পড়েনি ‘বির্তক’ও! এমন একটি ম্যাচের পর ক্রিকেটীয় দিক থেকে আর কি-ই বা উপভোগের বাকি থাকে! গল্পটা একটু আক্ষেপ মেশানো হলেও বাকি-ই আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপাগলদের জন্য। কেননা, আজই যে নিজেদের প্রথম ম্যাচে লাল-সবুজের দল মুখোমুখি হবে চমক জাগানিয়া নেদারল্যান্ডসের। বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় ম্যাচটি হবে হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে।
২০ ওভারের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারে খুব একটা স্বস্তিতে নেই টিম ম্যানেজমেন্ট। নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের একটি ম্যাচেও জয় তুলে নিতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও ফুটে উঠেছে দলের ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অতীত অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়। তবে নিজেদের সামর্থ্যে বিশ্বাস আছে বাংলাদেশ দলনায়কের। মনোবল না হারিয়ে সাকিব মনে করছেন, এই বিশ্বকাপে ‘নতুন কিছু’ করে দেখাতে পারে বাংলাদেশ। এবারের পারফরম্যান্স দিয়ে আগের সব বিশ্বকাপকে ছাপিয়ে যাবেন তারা। গতকাল মাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বিশ^সেরা অলরাউন্ডার বলেন, ‘এটা এমন একটা ফরম্যাট যেখানে আমরা কখনই ভালো করিনি। আমি বিশ্বাস করি এই বিশ্বকাপে আমাদের এমন কিছু করার সামর্থ্য আছে যেটা এর আগে কোন বিশ্বকাপে আমরা করিনি।’
নামিবিয়াকে টপকে নিজেদের গ্রুপে দ্বিতীয় সেরা হয়ে সুপার টুয়েলভে আসা ডাচরাই বাংলাদেশের প্রথম বাধা। অথচ টাইগারদের প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষে হতে পারত শ্রীলঙ্কা। প্রথম রাউন্ডে এক ম্যাচ হেরে সেই সমীকরণেই পড়েছিলও তারা। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের গ্রুপে এসেছে নেদারল্যান্ডস। আইসিসি সহযোগি সদস্য দেশটি প্রতিপক্ষ হিসেবে অপেক্ষাকৃত সহজই হওয়ার কথা। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলছেন, নেদারল্যান্ডসকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়ার স্বস্তির কথা মূলত গণমাধ্যমের তৈরি। তাদের জন্য সব প্রতিপক্ষকই সমান। শ্রীলঙ্কাকে শুরুতে পেলেও চিন্তার জগত একই থাকত তাদের, ‘দেখুন এখানে বিশ্বকাপে আমাদের যে পাঁচটা ম্যাচ আছে। এই পাঁচটা ম্যাচের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। এখানে যার সঙ্গেই খেলি প্রস্তুতি একই থাকবে। এবং সেটাই থাকা উচিত। সেটা নেদারল্যান্ড, বা দক্ষিণ আফ্রিকা বা ইন্ডিয়া বা পাকিস্তান অথবা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে একই থাকবে। প্রস্তুতিতে বদলও আসবে না। চিন্তাতেও কোন পরিবর্তন আসবে না। তারা কিন্তু কোয়ালিফাই করেই এসেছে। প্রত্যাশিত দল হিসেবেই এসেছে। এই পারসেপশনটা হয়ত আপনারাই তৈরি করেছেন যে নেদারল্যান্ডস আসাতে বাংলাদেশ দল স্বস্তি বোধ করছে।’
বড় মঞ্চে বাংলাদেশকে আগেও নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। তবু বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে এমন বিশ্ব আসরে নিজেকে প্রমাণের বা দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণের একটা তাড়না বোধ করেন অনেক ক্রিকেটারই। তবে সাকিবের কণ্ঠে ভিন্ন সুর। জানালেন, এভাবে কখনোই চিন্তা করেন না তিনি, ‘এটাই একটা মজার বিষয় আপনার কথামতো একটা চ্যালেঞ্জ আছে। যদিও আমি কখনো এরকম চিন্তা করিনি যে আমার একটা চ্যালেঞ্জ আছে যেটা নিতে হবে বা আমার কিছু প্রমাণ করতে হবে। এখানে আমরা একটা বিশ্বকাপ খেলতে এসেছি বাংলাদেশের হয়ে। যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ অস্ট্রেলিয়াতে আসার আগেই ক্রাইস্টচার্চে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সেখানে তখনও তুষারপাত হচ্ছিল নানা জায়গায়। বাতাসের বেগ তো ওই শহরে আরও তীব্র ও আরও শীতল। সঙ্গে বৃষ্টি মিলিয়ে আবহাওয়া ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য নারকীয়। সেই অভিজ্ঞতাই এখন হয়ে উঠছে আশীর্বাদ। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি মানে তো কেবল ব্যাট-বল ঝালাই করা বা উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া নয়, আবহাওয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়াও। ক্রাইস্টচার্চে দিন দশেক কাটিয়ে এসে তাই ব্রিসবেন আর হোবার্টের শীতলতাকে স্থানীয়দের মতোই আপন করে নিয়েছেন ক্রিকেটাররা।
অতীতের নানা সময়ের অভিজ্ঞতা বলে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে এই আবহাওয়ায় এলে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হতো ক্রিকেটারদের। এবার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আগে অন্তত কন্ডিশনের বাধা খুব একটা নেই। সাকিবের কণ্ঠেও উঠে এলো সেই স্বস্তির কথা, ‘আমি মনে করি আমাদের খুব ভালো প্রস্তুতি হয়েছে। সবাই ফিট এবং খেলার জন্য তৈরি। আমার মতে নিউজিল্যান্ডে খেলা চার ম্যাচ আমাদের সাহায্য করবে। বিশেষ করে হোবার্টের আবহাওয়া অনেকটা ক্রাইস্টচার্চের মতো। সবাই প্রস্তুত এবং আগামীকালের (আজকের) ম্যাচের জন্য রোমাঞ্চিত।’
তবে সাকিব যাই বলুন না কেন, নেদারল্যান্ডস ম্যাচের প্রাক্কালে গোটা বাংলাদেশ দলই যে কিছুটা চাপে আছে তা স্পষ্ট। তার ওপর বৃষ্টির বাধায় অনুশীলনের জন্য কেবল গতকালের দিনটাই পেয়েছে টাইগাররা। পরিস্থিতি যাই হোক আজকের ম্যাচে জয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। একটি জয়ই যে বদলে দিতে পারে গোটা দলকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন