ডলারের মূল্য নির্ধারণে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যা আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে ডলার কেনার সর্বোচ্চ দর আরও ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৭ টাকা করা হয়েছে। আর রফতানি বিল নগদায়নে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা। গতকাল সোমবার থেকে রফতানি বিল নগদায়নের নতুন দর কার্যকর হয়েছে। আর রেমিট্যান্সের দর কার্যকর হবে ১ নভেম্বর সোমবার থেকে। এর ফলে প্রতি ডলারের গড়ে খরচ পড়ছে ১০৩ টাকা ২৫ পয়সা। এর চেয়ে সর্বোচ্চ ১ টাকা বেশি অর্থাৎ ১০৪ টাকা ২৫ পয়সা দরে আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তি করবে ব্যাংকগুলো। দুয়ের মধ্যে ব্যবধান কমাতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকগুলো। এখনকার মতোই রফতানি ও রেমিট্যান্সে ডলার কেনার গড় দরের সঙ্গে এক টাকা যোগ করে আমদানি দায় নিষ্পত্তি করা হবে। এদিকে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশ কিছুদিন ধরে ১১০-১১১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল খোলাবাজারে প্রতি ডলারের জন্য ১১১ টাকা নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা; আগের দিন রোববার খোলাবাজারে প্রতি ডলারের জন্য ১১০ টাকা ৫০ পয়সা নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা; গত সপ্তাহে এই রেট ১১০ টাকায় ছিল। তার আগে এক মাসের বেশি সময় ধরে এই বাজারে প্রতি ডলার ১১৪ টাকা থেকে ১১৬ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়েছে।
গত রোববার রাতে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়। রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আরএফ হোসেন, বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি মো. আফজাল করিমসহ বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রেমিট্যান্সে ৫০ পয়সা কমিয়ে রফতানি বিল নগদায়নে ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। এতে পার্থক্য কমবে। ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত সিদ্ধান্তের আলোকে গত দুই মাস ধরে এভাবে দর নির্ধারণের ফলে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়েছে।
সূত্র মতে, অস্থির ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণে ৮ সেপ্টেম্বর এবিবি ও বাফেদার সঙ্গে আলোচনায় বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ডলারের একক রেট সংগঠন দুটি নিজেরা আলোচনা করে ঠিক করবে। ওই বৈঠকে ডলারের বাজার পর্যবেক্ষণ ও আমদানি-রফতানি পরিস্থিতি বুঝতে সময় নেয় ব্যাংক নির্বাহী ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর এই দুই সংগঠন। পরে ১১ সেপ্টেম্বর এবিবি ও বাফেদা বৈঠক করে। তাতে রফতানি আয়ে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম ৯৯ টাকা ও প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা দাম বেঁধে দেয়া হয়। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। আর এর মধ্য দিয়ে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর এবিবি-বাফেদার এক সভায় ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর রফতানি আয় নগদায়ন করতে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা ছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশে দেশে মুদ্রার দরপতনের যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। সাত মাসের কম সময়ে দেশের মুদ্রার দর পতন হয়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। এই যুদ্ধ শুরুর আগে ডলারের দর ছিল ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন