এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটাই অঘটনের! সাবেক তিন চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের পর এবার পচা শামুকে পা কাটলো পাকিস্তান। তবে বাবর আজমের দলের হারের ধরনটাই পোড়াচ্ছে তাদের। আগের ম্যাচে মেলবোর্নে শেষ বলে ভারতের বিপক্ষে হারের পর, গতকাল পার্থে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংসের শেষ বলে হোঁচট খেল পাকিস্তান। জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৩১ রানের মামুল টার্গেট মোকাবিলা করতে গিয়ে ৯৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরই পরাজয় চোখ রাঙাচ্ছিল পাকিস্তানকে। তবে মোহাম্মদ নাওয়াজ ও মোহাম্মদ ওয়াসিম শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে ৭ রান তুলে ফেললে, জয় থেকে মাত্র ৪ রান দূরে ছিল তারা। এরপরই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসল ‘অঅনুমেয়’ পাকিস্তান। শেষপর্যন্ত ১ রানে ম্যাচটি হেরে যায় পাকিস্তান। ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে মুশফিক-রিয়াদের করা ভুলের পুনঃরাবৃতি ঘটাল নাওয়াজ-ওয়াসিম। এই হারের ফলে সেমিফাইনালে ওঠা কঠিন হয়ে গেল বাবর আজমদের।
শেষ ওভারটি করেন জিম্বাবুয়ে পেসার ব্রাড ইভানস। ইভানস প্রথম দুই বলে সামলাতে পারেননি চাপ। প্রথম বলটি হাফ ভলি করায় ৩ রান নেন নেওয়াজ। পরের বলটি ছিল সেøায়ার, ওয়াসিম বোকা হননি। সোজা ড্রাইভ করে চার মারেন। এই পেসার পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক নওয়াজকে ফিরিয়ে দেন। সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ ৩ বলে জয়ের জন্য ৩ রান প্রয়োজন পাকিস্তানের। নাওয়াজ মাথা ঠান্ডা না রেখে বড় শটে আগ্রহী থাকায় লেংন্থে করা চতুর্থ বলটি ‘ডট’ হয়ে যায়। পঞ্চম বলটিও ছিল একই জায়গায়, তবে কিছুটা সেøায়ার। তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে দাঁড়িয়ে থাকা আরভিনের হাতে ক্যাচ দেন ১৮ বলে ২২ রান করা নাওয়াজ! জয়ের জন্য শেষ বলে দরকার ৩ রান। চরম অনিশ্চয়তায় গোটা পার্থসহ টিভি সেটের সামনে বসে থাকা সারা বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তরা। শেষ বলে শাহিন আফ্রিদি ২ রান নিতে গিয়ে পেরেছেন ১ রান নিতে। ১ রানের দুর্দান্ত জয়ে সুপার টুয়েলভের এই ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখল জিম্বাবুয়ে।
গতকাল টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে নামা জিম্বাবুয়েকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার ওয়েসলি মাধেভেরে ও কাপ্তান ক্রেইগ আরভিন। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে হারিস রাউফের বলে দলীয় ৪২ রানের সময় এই জুটির পতন। আরভিন ফেরেন ১৯ বলে ১৯ রান করে। এরপর থেকেই ছন্দপতন জিম্বাবুয়েন শিবির। ধারাবাহিক বিরতিতে পড়তে থাকে উইকেট। ২৮ বলে তিন চারে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন শন উইলিয়ামস। ওপেনার ওয়েসলি মাধেভেরে ১৩ বলে তিন চারে ১৭ রান করেন। সিকান্দার রাজা জ্বলে উঠতে পারেননি গতকাল। ৯ রান করে আউট হন। দলটির চতুর্থ থেকে সপ্তম উইকেটের পতন হয় ৯৫ রানে। শেষের দিকে ১৫ বলে এক ছক্কায় ১৯ রান করেন ইভান্স। ১৫ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন রায়ান বার্ল। বল হাতে পাকিস্তানের হয়ে দারুণ করেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। ৪ ওভারে ২৪ রানে তিনি তুলে নেন ৪ উইকেট। সমান ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেট পান শাদাব খান। এক উইকেট পেলেও ৪ ওভারে এক মেডেনে মাত্র ১২ রান দেন হারিস রউফ।
এদিন পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছিল মিডল অর্ডার খেলা শেষ করবে। কিন্তু কীসের কী! ম্যাচটা রঙিন হয়ে উঠল জিম্বাবুয়ের বোলারদের লড়াই আর পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের ভুলের কারণে। ১০ ওভার শেষেও ৩ উইকেটে ৫৪ রান তুলেছিল পাকিস্তান। জয় থেকে তখন ৬০ বলে ৭৭ রানের দূরত্ব। উইকেটে শান মাসুদ থাকায় তখনও দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেনি পাকিস্তানের সমর্থকদের। তবে সিকান্দ রাজা তাণ্ডবে উড়ে যায় পাকিস্তানের মিডল অর্ডার। রাজা আউট করেন হায়দার আলি, শাদাব ও মাসুদকে। আর তাতেই ম্যাচটা ঝুকে পড়ে জিম্বাবুয়ের দিকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন