মায়ের কাছে বায়না ধরেছিল চিপস খাবে বলে। গলা জড়িয়ে ধরে ১০ টাকার একটি নোট আদায় করে নেয়। চকচকে নোটটি হাতে পেয়ে উল্লাসে পাখির মত বাসা থেকে ছুটে যায় মারজান হক বর্ষা। সাদা হাফপ্যান্ট ও গোলাপী রংয়ের ফ্রক পরে চটুল পায়ে ছুটে চলা কন্যাকে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন মা। বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে সাত বছরের ওই শিশুটির খোঁজ মিলছিল না। সোমবার বিকেল পেরিয়ে রাত হয়, কিন্তু বর্ষা আর ফেরে না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার কোতোয়ালী থানায় করা হয় সাধারণ ডায়েরী। কিন্তু কোথাও খোঁজ মেলেনি বর্ষার। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর জামালখানের একটি বড় নর্দমায় বস্তাবন্দি অবস্থায় বর্ষার লাশ পাওয়া যায়। নিষ্পাপ ফুটফুটে এ শিশুটিকে খুনের পর বস্তাবন্দি করে সিকদার হোটেলের পেছনের বড় নর্দমায় ফেলে দেয় খুনিচক্রের সদস্যরা।
তার লাশ পাওয়ার খবরে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে জামালখানের বাতাস। মা ঝরণা বেগমের আহাজারিতে সবার চোখে পানি। তিনি চিৎকার করে বলছিলেন আমাদের তো কোন শত্রæ নেই। কারো সাথে কোন ঝামেলা নেই। আমার বর্ষা তো পুরো পাড়া মাতিয়ে রাখত। সবার সাথে খেলত। তাকে এভাবে মারলো কে?
লাশ উদ্ধারের সাথে সাথে পুলিশও এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। নগরীর কুসুমকুমারী স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা। বাবা আবদুল হক ও মা ঝরণা বেগমের সংসারে ছয় কন্যা। সবার ছোট বর্ষা। এ কারণে পরিবারে সে ছিল সবার আদরের। ছটফটে চঞ্চল শিশুটি জামালখানের ওই গলিতে সবার প্রিয় মুখ ছিল। গলিতেই কাটত তার সারাবেলা। শিশু-কিশোরদের সাথে খেলায় মত্ত থাকত সে। তার উপর এমন নিষ্ঠুরতায় হতবিহŸল খেলার সাথীরাও। বস্তাবন্দি লাশের চারিদিকে তাদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বর্ষাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি। বাবার চাকরির সুবাধে জামালখানের একটি বাসায় ভাড়া থাকত। বর্ষার বড় বোন সালেহা আক্তার রুবি বলেন, আমরা পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করি, বাবাও চাকরি করেন। ওইদিন বিকেলে মা ছাড়া বাসায় কেউ ছিল না। চিপস খাবে বলে মায়ের কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে বের হয় বর্ষা। কিন্তু সন্ধ্যার পরেও সে বাসায় না ফেরায় মা আমাকে খবর দেন। আমি অফিস থেকে ছুটে এসে অলিগলিতে তাকে খুঁজি। না পেয়ে রাত ১০টায় এলাকায় মাইকিং করি। রুবি বলেন, সে খুব ছটফটে ছিল, গলির ভেতর সব বাচ্চাদের সাথে খেলত। কারো সাথে আমাদের কোন শত্রæতা নেই। একটা শিশুর সাথে কেন এমন নিষ্ঠুর আচরণ, আমার বোনের জানটা তারা কেমনে নিল। আমরা খুনির বিচার চাই।
কোতোয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) আতিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, নিখোঁজ জিডি রেকর্ড হওয়ার পর আমরা শিশুটির খোঁজখবর নিতে থাকি। এরমধ্যে বিকেলে খবর আসে সিকদার হোটেলের পেছনের নালায় একটি বস্তা পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বস্তার মুখ খুলে তাতে শিশুর লাশ দেখতে পায়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে ছুটে যায়। ঘটনাস্থলে আসে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। তিনি জানান, সুরতহাল রিপোর্ট শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এলাকার সিসিটিভি সংগ্রহ করা হচ্ছে। হত্যাকান্ডের সাথে কারা জড়িত তা বের করতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন