এক সময় প্রায় প্রতি বছরই এক বা একাধিক দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলত বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। এখন অত বেশি না হলেও দেখা হয় নিয়মিতই। তবে, দীর্ঘ ২৫ বছরের দ্বৈরথে একবারও বিশ্বকাপের মঞ্চে মুখোমুখি হয়নি এই দুই দেশ! অবশেষে চলতি বিশ্বকাপে ঘুচতে যাচ্ছে সেই অপেক্ষা। ব্রিজবেনে আগামীকাল জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হবে সাকিব আল হাসানের দল। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায়। সেমি-ফাইনালে ওঠার আশা বাঁচিয়ে রাখতে দুই দলের জন্যই ম্যাচটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর নতুন করে সম্ভাবনার দুয়ার যে খুলে গেছে জিম্বাবুয়ের!
আইসিসি ট্রফির কথা বিবেচনায় নিলে দুই দলের লড়াইয়ের বয়স অনেক। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাস প্রায় আড়াই দশকের। কেনিয়ার মাটিতে ১৯৯৭ সালের প্রেসিডেন্টস কাপে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেখা হয় তাদের। এরপর থেকে প্রায় নিয়মিত দৃশ্য হয়ে গেছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই প্রথম টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। এই দলের বিপক্ষেই ২০০৬ সালে জেতে প্রথম টি-টোয়েন্টি। খুলনার সেই ম্যাচ দিয়ে এই সংস্করণে অভিষেক হয় দুই দলের। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত দুই দল খেলেছে ১৯ ম্যাচে। যেখানে বাংলাদেশের জয় ১২টি, বাকি সাতটি জিম্বাবুয়ে।
ওয়ানডেতে ৮১ ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশের ৫১ জয়ের বিপরীতে জিম্বাবুয়ের জয় ৩০ ম্যাচে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এর চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেনি তারা। এছাড়া টেস্টে দুই দল খেলেছে ১৮টি ম্যাচ। সেখানেও ৮-৭ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তিন সংস্করণ মিলিয়ে আর কোনো দলের বিপক্ষেই তাদের এত ম্যাচ (১১৮) খেলার রেকর্ড নেই। কিন্তু দীর্ঘ ২৫ বছরে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি; কোনো সংস্করণের বিশ্বকাপেই মুখোমুখি হয়নি এ দুই দল।
সার্বিক পরিসংখ্যানের বিচারে জিম্বাবুয়ের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে জিম্বাবুয়েতে সবশেষ সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারতে হয়েছে তাদের। সিকান্দার রাজার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দুটি সিরিজই ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় স্বাগতিকরা। আগস্টে অনুষ্ঠিত এ দুই সিরিজে তিন ওয়ানডেতে ২৫২ রানের সঙ্গে ৫ উইকেট নেন রাজা। টি-টোয়েন্টিতে তিন ম্যাচে ১২৭ রানের পাশাপাশি ২ উইকেট নেন তিনি। দুইটি সিরিজেই সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ওঠে তার হাতে। বিশ্বকাপেও তেমনই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ায় চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ জিতেছে জিম্বাবুয়ে। তিনটিতেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন রাজা। গতপরশু পার্থে সুপার টুয়েলভের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ের ম্যাচে ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বৃষ্টির কল্যাণে ১ পয়েন্ট পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। সুপার টুয়েলভে জিম্বাবুয়ের বাকি তিন ম্যাচের দুইটিতে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস। তাই তাদের সামনে রয়েছে শেষ চারের টিকেট পাওয়ার বেশ ভালো সুযোগ।
তবে এভাবে ভাবতে রাজি নন দলটির প্রাণভোমরা সিকান্দার রাজা। বরং একটি একটি করে ম্যাচের দিকে তাকিয়ে তারা। পাকিস্তানকে হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনে সেমি-ফাইনালে খেলার সম্ভাবনার কথা জিজ্ঞেস করা হলে রাজা জানান, এখন শুধু বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে চিন্তা করবেন তারা, ‘আমরা সর্বশক্তি ও মনোযোগ দিয়ে পাকিস্তান ম্যাচের কথা চিন্তা করছিলাম। এখন সেটি বাংলাদেশ ম্যাচের দিকে যাবে। আমরা প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ করে নামব। একটি একটি করে ম্যাচ ধরে এগোব। আমার এই ছেলেদের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। যারা ভালো খেলবে তারাই জিতবে। এখনই বলা যাবে না, জিম্বাবুয়ে কোথায় থামবে! গ্রুপটি এখন উন্মুক্ত হয়ে গেছে। এটি খুব ভালো বিষয়। শুধু উন্মুক্ত হয়েছে বলব না, জিম্বাবুয়ের সামনে এখন ভালো কিছু অর্জনের দারুণ সুযোগ। আমি এখনই সেমি-ফাইনালের কথা বলব না। একটি একটি করে ম্যাচ ধরে এগোব। এখন বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে ভাবছি।’
জিম্বাবুয়ের ঠিক বিপরীত অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্রেফ উড়ে গেছে সাকিব আল হাসানের দল। তাই জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হওয়ার আগে নিজেদের পরিকল্পনা শুধরে নেওয়ার কথাই বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের কাছে প্রশ্ন ছিল, ১০৪ রানের পরাজয়ে দলের আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লাগল কি না। জবাবে অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি স্পিনার বলেন, হতাশা আসা স্বাভাবিক। তবে তার চোখ এখন সামনের ম্যাচে, ‘দুদিন পরে আমাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ওই ম্যাচের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। এ ম্যাচ (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) থেকে বেশ কিছু পরিকল্পনা করতে হবে, কিছু পরিকল্পনায় বদল আনতে হতে পারে। ভিন্ন কন্ডিশনে ভিন্ন প্রতিপক্ষের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে।’
এই মানিয়ে নিতে নিতেই সময় ফুরিয়ে আসছে বিশ^কাপেরই, বাংলাদেশেরও। এরই মধ্যে সিডনি থেকে ম্যাচ ভেন্যু ব্রিজবেনে ফিরেছে সাকিবের দল। টিকে থাকার লড়াইয়ে সময় নষ্ট না করে গতকাল রাতেই অনুশীলনে নামার কথা টাইগারদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন