মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারতে পাচার হচ্ছে মূল্যবান পিতল

বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশিয় ধাতবশিল্পে যখন কাঁচামালের উর্ধ্বগগতি, তখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে দেদারসে পাচার হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান ধাতব পিতল। তাই পাচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে এবার হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছে রিট। মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট’র পক্ষে ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব গতকাল সোমবার এ রিট করেন।

রিটে জাহাজভাঙা শিল্পে প্রতিটি পুরনো জাহাজ থেকে প্রাপ্ত পিতলের পরিমাণ নিবন্ধন, জাহাজভাঙা শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বাধ্যতামূলক পলিসি গ্রহণ, জাহাজভাঙা শিল্পকারখানায় ১৮ বছর বয়সের নিচে কাউকে নিয়োগ না দেয়া এবং শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সচিব, বাংলাদেশ ট্রেড এবং ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ শিপিং করর্পোরেশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ১০জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

রিটে বলা হয়, বাংলাদেশে পিতলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। পিতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে দামী আসবাবপত্র, বাথরুম ফিটিংস তথা দৈনন্দিন ব্যবহার্য গৃহসামগ্রী। পিতলের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব পিতলের একটি বড় অংশের যোগান আসে আন্তর্জাতিক দরপত্রে ক্রয়কৃত বিভিন্ন জাহাজ থেকে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে সংগৃহিত পিতল থেকে। বাকিটা সংগৃহীত হয় স্থানীয়ভাবে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পিতলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এসব পিতল পাচার হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের পিতলনির্ভর কারখানাগুলোকে বেশি দামে ভারত এবং অন্যদেশ থেকে পিতল আমদানি করতে হয়। ফলে আমাদেও দেশে পিতলের সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পিতলনির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়, দেশে গড়ে উঠেছে পিতল পাচারের সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্র শুধু নিজেরাই অবৈধভাবে লাভবান হচ্ছে না। দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধনও করছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
রিটে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২ অনুযায়ী দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশ করার কথা বলা হয়েছে। কাজেই দেশিয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশে অবশ্যই জনস্বার্থ রক্ষায় পিতল পাচার বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে শিশু শ্রমিক নিয়োগ করা হয় যা আইনসম্মত নয়। জাহাজভাঙা শিল্পকারখানায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং নিরাপত্তা সামগ্রির অভাবে প্রতিবছর বহু শ্রমিক দুর্ঘটনায় হতাহত হন। এই সমস্যার তেমন কোনও প্রতিকার নেই। আইনে সুস্পষ্টভাবে শ্রমিকদের জন্য বীমা করার বিধান থাকলেও শ্রমিকদের কোনো বীমা কভারেজ নেই। রিটকারী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব জানান, হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে শিঘ্রই রিটের শুনানি হবে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ধাতব বস্তু হিসেবে পিতল নির্মিত তৈজসপত্রের কদর প্রাচীন আমল থেকেই। উপমহাদেশে কাঁসা ও পিতল ব্যবহারে রমরমা ছিল ১৫৭৬ থেকে ১৭৫৭ সালের মুঘল জমানায়। পিতলের ব্যবহার্য জিনিসপত্র এ দেশের ঐতিহ্যের অংশ। ধন-ধান্য-পুষ্প শোভিত ঐশ্বর্যশালী এই ভূ-খন্ডে পিতল ব্যবহৃত হতো কৃষিনির্ভর বনেদী পরিবারে। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে পিতল নির্মিত কারুকার্য খচিত বাসন, কলস, থালাবাটি, গ্লাস, পাতিল, বালতি, ফুলদানি, ছুরির বাঁট, চামচ, গামলা, পানদানি, হুক্কা, টব, ধূমপাত্র, শো-পিস, সৌখিন জিনিসপত্র ব্যবহৃত হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। এমন একটা সময় ছিল যখন বিয়ে, খত্না, হিন্দুদের অন্নপ্রাসন, জন্মদিন, আকিকার অনুষ্ঠানে উপহারসামগ্রী হিসেবে দেয়া হতো পিতলের আসবাবপত্র। এখন এসবের স্থান দখল করেছে আধুনিক ডিজাইনের সিরামিক, মেলামাইন, কাচ, প্লাস্টিক ও স্টিলের তৈরি জিনিস। মূলত, কাঁচামালের অভাবেই তামা, কাঁসা ও পিতল শিল্প এখন ক্ষয়িষ্ণু। ঢাকার ধামরাইয়ে এখনও শ’ খানেক কারখানা কুটিরশিল্প হিসেবে টিকে আছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলার এই ঐতিহ্য নাম কুড়িয়েছে পশ্চিমা বিশ্বে। কাঁচামালের স্বল্পতা, আমদানি নির্ভরতা এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেক পিতল শিল্পী বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় জীবীকা নির্বাহ করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন