বিরহী মেঘের সেদ্ধ প্রতিবিম্ব
মাসুদ চয়ন
থৈ থৈ অন্ধকারে প্রস্ফুটিত নাক্ষত্রিক ঢেউ,
সেই ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে মূর্ছিত চাঁদের জমায়িত কলঙ্কগুচ্ছ-
ঘাস ঝোপঝারের উদয় প্রান্তরে এক টুকরো বিরহী মেঘ জ্বলছে-
ক্লান্তির নির্জন বেষ্টন মূমুর্ষূ দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে-
সেই ক্লান্তির রন্ধনশালা বুকে নিয়ে আর কত পথ হাঁটা যায়! এভাবে অতিক্রান্ত হবে আলোক বর্ষ তবে কি! তবু চুপ প্রিয়তমা সুরেলা আলো?
দেখা দেয়না ঝিঝি পোকার উপচয়ে-
রাতের নিতম্বে তন্দ্রাচ্ছন্ন দূর্বা ঘাসের বুকে নিজেকে সপে দিয়েছে মেঘ-
চোখের তারায় স্বপ্ন ভঙ্গের প্রতিবিম্বগুলো প্রবল ঝলকানি হয়ে জ্বলছে -
কালগ্রাসী সংশয় ঘনীভূত হচ্ছে আরো, নীলাকাশ চুয়ে জল ঝরছেই-
চোখের কোটরে বিরহী শ্রান্ত প্রতিবিম্বটি সেদ্ধ হচ্ছে-
আমনে ভরা হেমন্ত
কনক কুমার প্রামাণিক
কাঁচাপাকা আমন ধানে ছেঁয়ে সারা মাঠ
হেমন্তের শেষ প্রহরে চুকবে আমন পাঠ।
মন ভরে সোনা রঙের আমন ধান দেখে
পাকা ধানে স্বপ্ন পূরণ কৃষকের দুচোখে।
সকাল বেলা শিশিরবিন্দু ধানের শিষে পড়ে
শিশির কণার মুক্তো বিন্দু কৃষাণের মন ভরে।
সোনা ফসলে শোভা বাড়ায় সোনা রোদ এসে
পুব আকাশে সূয্যি মামা কিরণ ছড়ায় হেসে।
দু কলম জোনাক সভ্যতা
নীলম সামন্ত
১.
জীবন থেকে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গল রেখে বল্লম ছুঁইলাম। আত্মহনন হলেও আত্মা টিকিয়া গেল। বুকের মধ্যে নীল জমে। বিষ নয়। টাটকা ক্ষত। যার উদ্দেশ্যে চিঠিতে শরৎ ভরছেন জোনাক সভ্যতার রাজামশাই।
২.
বিক্রির কিছু নাই মিয়াসাব। বিনিময় প্রথায় সে আমাকে ডিমভাত খাইয়েছিল। এখন আমার পালা। হৃৎপিÐের কিছুটা রক্ত তার ঠোঁটে হাতে লাগিয়ে দিতে পারলে শূন্যের মান আগমনীর কাশ। কিন্ত সে যে আস্ত হৃৎপিÐটাই চায়।
৩.
নিতে তো আসিনি। দেব বলেই সমস্ত অলংকার দিয়ে সাজিয়ে রেখেছি তোমার ঝাড়বাতি। পেঁজা তুলোর মাঝে নীল নীল আলো। অপরাজিতা ছাপের নিলাম ঘর। রাজামশাই তোমার আঙুলে যে মহাকাশ আইনা দিচ্ছি
তা কি আছে এখনও?
সোনালী স্বপন
আবুল খায়ের বুলবুল
ভোরবিহীন সকালে ফুল ফোটে না বলে
সূর্যের আলোর প্রত্যাশায় থাকে পুষ্প বৃক্ষ।
কুয়াশায় ঢেকে গেলেও প্রকৃতির উদ্যম শরীর
রোদের প্রতীক্ষায় থাকে ভোরের পাখি
একটু ঝলোমলো আলোর আশায়
প্রহরের পর প্রহর গুনে।
শীতল শীনশীন বাতাসে জরাক্লিষ্ট পত্ররা ঝরে ঝরে
মাটিতে পড়ে ,ধূলোয়ে মিশে মাটি হয়ে ওঠে উর্বর,
ফলতে থাকে ফসল,শীর্ণ মাটি ভেদ করে জি’য়ে ওঠে
মৃত শরীরর থেকে নব নব পত্র মঞ্জুরী।
পাখিদের পাখা ঝাপটানিতে হেসে ওঠে অবরামতির মুখ
জীবনের ঘাটে ঘাটে খেয়া যানগুলো চলতে শুরু করে
দিগন্ত থেকে দিগন্তে।
প্রবল ইচ্ছায় ছোটে চলে বিচিত্র রঙে রাঙা সেই শকট
যেখানে নিদ্রায় ভাঙে চৈতন্েযর খোয়াব,
চিত্র বিচিত্র ক্ষণ কখনও কখনও অনিন্দ্য সৌন্দর্যের আভায় এনে দেয় ভালোবাসার রঙ তুলি
নির্ঘুম নিদ্রাহীন চোখে এঁকে থাকে তাই সোনালী স্বপন।
সংস্পর্শ
মোজাম্মেল সুমন
তুমি সাক্ষাৎ আফ্রোডায়িট বিধায় আমি তোমার জন্য প্রেমিক,
আমার মনের সকল শব্দ ভালোবাসার ঠিক হায়ারোগ্লিফিক
তোমার হাতটি শক্ত করে ধরেই বাড়াই আমার মনের বিশ্বাস,
তোমায় ছাড়া জীবন ভাবা মানেই বন্ধ হয়ে হওয়া নিশ্বাস!
যখন তোমার গ্রীবাদেশে নাকঠোঁট ঠেকে সংস্পর্শ করি—
তখন তোমার দেহের গন্ধে আমি পুরো বিভোর হয়ে পড়ি
আমার মনে হয় তোমাকে যেনো আঁকড়ে ধরে রাখি চেপে—
যাতে লম্বা নিশ্বাস ফেলে সুন্দরের সুবাস নিতে পারি মেপে
খাবার খাওয়া শেষে তোমার ঠোঁটে লেগে থাকা পানির বিন্দু—
আমার হাতের আঙুল দিয়ে মুছে ভাবি যেনো সুখের সিন্ধু
বিছানাতে শুয়ে আমি আলগোছে দেই তোমার নরম হাতচুম,
এমনভাবে তোমায় নিয়ে অনুভূতিতে কেটে যায় ভাতঘুম
মাকড়সার জালবোনা ফাঁদে নীরবে খায় যেমন ধোকা—পোকা,
তোমার ভেজাচুলে আটকে আমিও হই তেমন বোকাসোকা
তোমার শুষ্ক চুলে ছুঁলে মনে হয় ঠিক ফুটন্ত এক পুষ্প,
ধীরেধীরে ছড়াও যেনো আমার মনে ভালোবাসার খুশবো!
দুই জোড়া ঠোঁট সন্ধি হলে তোমার নাভিসমুদ্রে ঢেউ ওঠে,
আমার ফুঁতে সরস পয়োধরে আপনমনে চুচুক ফোটে
শিউরে ওঠা লোম—কামনার চোখে শুধুই অভিসারের স্বপ্ন,
দুটি শরীর ভালোবাসার সংস্পর্শে পুরোপুরি মগ্ন
প্রতিদিনে তোমায় দেখে দেখে আমি সজীব হয়ে উঠি,
চুম্বকের ন্যায় তোমার পরম সংস্পর্শ পাবার লোভে ছুটি
তুমি যদি উড়োচিঠি হয়ে আমার কাছে নাহি ঘেঁসতে,
কবেই আমি ভালোবাসার শূন্যতাতে যেতাম পুরো ভেস্তে।
দুখের সারিন্দা
গোলাম রববানী
যখন রাত নামে জগতে
তখন জাগতসুদ্ধ জাতকাল নামে,
যখন ভোর আসে জগতে
তখন জাগতসুদ্ধ সিতালো আসে।
আসলে আলো আসে না কালোর কালিয়া ভাসে,
শ্বেতক‚লে কালপলি জেগে কালোর নভচরা তোলে
যতদিন জাতের বজ্জাত আছে কাতুকুতুতেই হাসে
দিশেহারা হয়ে ততদিন জাতি ভাসে জাতের জালিয়াতে
কাঁদে আকাশ কাঁদে বাতাস মাটিগড়া সন্তানের চয়ন
মহামানবের অপমানে খাঁটি মাটিপুত্র হয় কঠিন নমন
হাসে নির্লজ্জ ক্ষমতা দেখে আরো হাসে লাললালসা
দরদিয়া বাঁজে দুনিয়ায় বাজে এ-কি সব দুখের সারিন্দা
শুদ্ধতার সুরে সুমধুর হোক সমস্ত সুখসারিন্দা
দুঃখভরা সারিন্দার সুর উঠুক তবে বিশ্বমানবতার
চোখের জলে ব্যথা মুছে
রফিকুল নাজিম
কাঠগোলাপের শূন্যতা সবাই বুঝে না
এই যেমন বৃষ্টির অভাব বুঝে চৌচির জমিন
তৃষিত চোখজোড়া বুঝে প্রিয়জনের চোখের টান।
তোমার চলে যাওয়ার দৃশ্য এঁকে রেখেছে এই মন
শেষ বিকেলের ট্রেন, শূন্য প্ল্যাটফর্ম ও ভীড়ের শূন্যতা!
তোমার চলে যাওয়ায় পুড়ছে জারুলের বন,
কৃষ্ণচূড়া ফুল, পরীবিলের সাত্তি¡ক মাছরাঙা পাখিটাও
তোমার অভাবটা টের পায় আমার বুকের বাম অলিন্দ
সামাজিক দিনের শেষে নিঃসঙ্গ রাত নেমে আসে রোজ
স্মৃতিগুলো বিষ ঢালে মনে; যন্ত্রণাগুলো আমাকে কাঁদায়।
সবাই বলে- চোখের জল নাকি ব্যথা মুছে,
কই- আমার বুকের ব্যথা মুছে না তো!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন