বিগত একযুগের অধিক সময় ধরে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তত্তাবধায়ক সরকারের দাবিতে বৃহৎ বিরোধীদল বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। এ দাবিতে এখন বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। অথচ, এই ‘তত্তাবধায়ক সরকার’ পদ্ধতিটি একসময় সব রাজনৈতিক দলেরই কমন দাবি ছিল। এরশাদ সরকারের আমলে সবার সম্মিলিত প্রয়াসে প্রথমবারের মতো এ সরকার গঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে এ সরকারের অধীনেই তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মাঝে ’৯৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তার অধীনে নির্বাচন করতে চাইলে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধীদল আন্দোলন-সংগ্রাম করে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। বিএনপি বাধ্য হয়ে সে বছরের ১৫ ফেব্রæয়ারির নির্বাচন করে সংসদে বিল পাস করে সংবিধানে তত্তাবধায়ক সরকারের বিধান অন্তর্ভুক্ত করে। এ সরকারের অধীনেই নির্বাচন করে সে সময় আওয়ামী লীগ এবং ২০০১ সালে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসে। ২০০৭ সালে তত্তাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে সমস্যা বাঁধলে আওয়ামী লীগসহ বিরোধীদলগুলো আন্দোলন শুরু করে এবং এক পর্যায়ে আর্মি ব্যাকড তত্তাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই তত্তাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার উদ্যোগ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়কে ভিত্তি ধরে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে তা বাতিল করে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন পদ্ধতিতে ফিরে যায়। এর বিরোধিতা করে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধীদল আন্দোলন করলেও এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। আওয়ামী লীগ তার অধীনে ইতোমধ্যে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছে। দলীয় সরকারের অধীনে আমাদের দেশে যে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্যই থাকে, যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করা। আওয়ামী লীগ ভিন্ন পন্থায় কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় সেটা গত দুটি নির্বাচনে প্রমাণ দিয়েছে।
দুই.
ক্ষমতাসীন দলের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, তা শুধু বিরোধীদলই নয়, সাধারণ মানুষও তা বোঝে। এর কারণ হচ্ছে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণন্ত্রের চেয়ে ক্ষমতায় যাওয়া এবং থাকার বিষয়টিই বেশি প্রাধান্য পায়। একবার ক্ষমতায় যেতে পারলে, মেয়াদ শেষে কীভাবে আবার ক্ষমতায় থাকা এবং আসা যায়, এদিকেই তাদের বেশি মনোযোগ থাকে। গণতন্ত্রের উন্নয়নের বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যায়। অর্থাৎ ক্ষমতালোভী মনোভাবের কারণে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সে মানসিকতা দলগুলোর মধ্যে নেই। কারো প্রতি কারো আস্থা ও বিশ্বাসও গড়ে উঠেনি। ফলে বিকল্প সরকার, যাকে তত্তাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বলা হয়, তার আবির্ভাব ঘটেছিল। এ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা প্রয়োজন, সেই মানসিকতা এবং আস্থা কারো মধ্যেই গড়ে উঠেনি। ফলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্তাবধায়ক সরকার পদ্ধতিই এখন বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের দাবি। এমনকি বিভিন্ন সময়ে জরিপে এ সরকার পদ্ধতিকেই ভোটাররা এগিয়ে রেখেছে। সমস্যা হচ্ছে, ক্ষমতায় যে দলই যাক না কেন, তখন আর এ পদ্ধতি তার পছন্দ হয় না। তার দাবি, অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের উদাহরণ টেনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার যুক্তি তুলে ধরা হয়। তবে যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে নির্বাচিত সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, কারচুপিবিহীন ও প্রশ্নহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্তাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছিল, সে লক্ষ্য কি ক্ষমতাসীন দল পূরণ করতে পেরেছে? অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করার যে মানসিকতা পোষণ করা হয়, সে মানসিকতা কি দেখাতে পেরেছে? এসব প্রশ্নের উত্তরে সিংহভাগ মানুষই বলবে, পারেনি। আওয়ামী লীগ মুখে স্বীকার না করলেও, যদি আত্মঅনুসন্ধান করে তবে বলবে, পারেনি। কারণ, এ দলটিই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সংবিধানে তা সংযোজনের জন্য সবচেয়ে বেশি আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। হঠাৎ করে এই অবস্থান থেকে একেবারে ইউটার্ন নিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে যে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার মানসিকতা তার মধ্যে রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই, যদি তত্তাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল না করত এবং এর অধীনে ২০১৪ সালের নির্বাচন হতো, তাহলে ক্ষমতার পালাবদলের যে ধারাবাহিকতা ছিল, তা নাও হতে পারত। আওয়ামী লীগ যদি পুনরায় ক্ষমতাসীন হতো, কিংবা বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসত, তাহলে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠত না। উল্লেখ করা প্রয়োজন, আওয়ামী লীগ বরাবরই বিএনপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে, ২০০৭ সালে বিএনপিই নানা ছলছুঁতোয় তত্তাবধায়ক সরকারকে বিতর্কিত করেছিল। বিএনপি তত্তাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে কৌশলের আশ্রয় নিলেও তা বাতিল করেনি। আর্মি ব্যাকড তত্তাবধায়ক সরকার ঠিকই গঠিত হয়েছিল। সেই সরকারের অধীনেই আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে, যা নিরপেক্ষ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। তাহলে, ক্ষমতায় এসেই কেন আওয়ামী লীগ তত্তাবধায়ক সরকার বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মনোভাব পোষণ করল? এটা তো নাও করতে পারত। বরং তত্তাবধায়ক সরকারের যে দুর্বলতা ছিল এবং তাকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে পারত। নিদেন পক্ষে আদালত পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে যে রায় দিয়েছিল, তা করতে পারত। তখন আর কেউ তত্তাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারত না। চিরতরে তা ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিত। আওয়ামী লীগ এ পথে যায়নি। এর কারণ, তার মননে রয়েছে, যেকোনো উছিলায় তত্তাবধায়ক সরকার বাতিল করে নিজের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করা। তার অধীনে অনুষ্ঠিত ‘বিনাভোট’ ও ‘রাতে’র নির্বাচন থেকেই সেটা বোঝা যায়।
তিন.
দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা বলতে যে কিছু নেই, তা ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা বহুবার বলেছেন। একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাকিদ শুধু দেশের বিশেষজ্ঞরাই নন, বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলো থেকেও দেয়া হচ্ছে। এই নির্বাচন কিভাবে হবে? এটা প্রমাণিত, দলীয় সরকারের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় না। আওয়ামী লীগের অধীনে যদি আগামী নির্বাচন হয়, তাহলে তা যে নিরপেক্ষ হবে না, তা সকলেরই জানা এবং অনিবার্যভাবেই সে পুনরায় ক্ষমতায় আসবে। বিগত দুটি বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন থেকেই তা বোঝা যায়। ফলে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপি যেমন তত্তাবধায়ক সরকারের দাবি করছে, তেমনি অন্য বিরোধীদলও জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলছে। দেখা যাচ্ছে, তত্তাবধায়ক সরকারের দাবির পাশাপাশি জাতীয় সরকারে বিষয়টি চলে এসেছে। গঠন প্রক্রিয়া ভিন্ন হলেও সবার লক্ষ্য যে, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এক্ষেত্রে বিএনপি’র কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। অন্য বিরোধীদল জাতীয় সরকার গঠন করে নির্বাচনের পক্ষে, অন্যদিকে বিএনপি তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের পক্ষে। বিএনপি’র বাইরের দলগুলোর দাবি মোতাবেক নির্বাচনের আগে যদি জাতীয় সরকার গঠিত হয়, তাহলে তা সমঝোতার মাধ্যমে অনির্বাচিত সরকারের মতোই হবে। তত্তাবধায়ক সরকারের সাথে তার পার্থক্য খুব সামান্যই। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য উভয় পদ্ধতিই কার্যকর। কারণ, দলীয় সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তবে দুই পদ্ধতি কতদিন থাকবে, তা স্পষ্ট হওয়া উচিৎ। এজন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। এর আগে দলমত নির্বিশেষে সবার দাবি মোতাবেক সংবিধানে তত্তাবধায়ক সরকার যুক্ত করা হয়েছিল। সবাই যদি একমত হয়, তাহলে দুই পদ্ধতির যেকোনো একটি আবারও যুক্ত হতে পারে। কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত করা যেতে পারে। তত্তাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ে আদালত যেভাবে পরবর্তী দুটি নির্বাচন হতে পারে বলে উল্লেখ করেছিল, তদ্রæপ করা যেতে পারে। এরকম নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব পোষণ করতে বাধ্য হবে এবং পারস্পরিক রেষারেষির প্রবণতাও কমে আসবে। কারণ, উক্ত সরকার পদ্ধতির মেয়াদ শেষে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, এ বিষয়টি সামনে রেখে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে বাধ্য হবে। যদি মানসিকতার পরিবর্তন না হয় তাহলে, নিরপেক্ষ সরকারের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা যে, ’১৪ ও ’১৮ সালের মতো নির্বাচন হবে না, তার গ্যারান্টি দেয়া যায় না। ফলে নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করাই শ্রেয়। এতে অন্তত নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবং ক্ষমতাসীন দল যেমন রাষ্ট্র পরিচালনায় সতর্ক থাকবে, তেমনি বিরোধীদলগুলোও সতর্ক থাকবে। সংবিধানে তো বহু বিষয়ে বহু ধারা রয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়টিও না হয় সেরকম একটি ধারা হয়ে থাকবে। কারণ, আমাদের দেশের রাজনৈতিক যে অপসংস্কৃতি, তাতে সরকার ও বিরেধীদলের মধ্যে কোনো বিষয়েই একমত হতে দেখা যায় না এবং তা হওয়ার সম্ভাবনাও কম। তারা একে অপরকে শত্রæজ্ঞান করে। এই মনোভাব যতদিন থাকবে, ততদিন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনই উৎকৃষ্ট পন্থা।
চার.
দলীয় সরকারের অধীনে যেভাবে নির্বাচন হয়, তাতে তাদের ভোটাধিকার বলতে কিছু থাকে না। তাদের ভোট দেয়ার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে, সে পরিবেশও নেই। ফলে সাধারণ মানুষ নির্বাচনবিমুখ এবং আগ্রহহীন হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশে গণতন্ত্র খাতাকলমেই থেকে যাবে, বাস্তবে দেখা যাবে না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এই উপমহাদেশের আর কোনো দেশে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ও বিতর্ক উঠতে দেখা যায় না। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা যা বিতর্কমুক্ত থাকবে, তা আমরা তৈরি করতে পারিনি। সর্বসম্মতিতে তত্তাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সৃষ্টি এবং তার মাধ্যমে সুষ্ঠু ভোট হলেও তা স্থায়ী হয়নি। এর মূল কারণ হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সংকীর্ণ মানসিকতা। তারা উদার ও গণতান্ত্রিক হতে পারেনি। ফলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন, যার মাধ্যমে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাবের প্রতিফলন ঘটবে, এমন স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। একমাত্র তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলোতেই তারা আক্ষরিক অর্থে নিজের মতো করে ভোট দিতে পেরেছে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়েছে। বিগত চৌদ্দ বছরে জাতীয়সহ স্থানীয় যত নির্বাচন হয়েছে, তাতে নির্বাচন বলতে কিছু ছিল না। ছিল নির্বাচনের নামে প্রহসন। একারণেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন দল ছাড়া সকলেই ‘তত্ত¡াবধায়ক সরকার’কেই উপযুক্ত মনে করছে। আজ যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকত এবং অন্যদল ক্ষমতায় থাকত তাহলে, সেও তত্ত¡াবধায়ক সরকারের পক্ষেই থাকত। ক্ষমতাসীন দল প্রায়ই বলে থাকে, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। তারা থাকবে নির্বাচনকালীন সরকার। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনে তো তারাই নির্বাচনকালীন সরকার ছিল, তাতে কি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোট করতে পেরেছিল? অন্যদিকে, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনেও নির্বাচন কমিশন ছিল, সেসব নির্বাচন নিয়ে কি ব্যাপক বিতর্ক ছিল? ছিল না। এ দুটোর পার্থক্য হচ্ছে, নির্বাচনের সময় নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা। সে সময় যদি সরকার নিরপেক্ষ থাকে তখন নির্বাচন কমিশনও নিরপেক্ষ হয়ে নির্বাচন করতে পারে। আমাদের দেশে দলীয় সরকার নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ থাকবে, সেটা ন্যূনতম জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে, দলীয় সরকারের বাইরে তত্ত¡াবধায়ক সরকারই কেবল পারে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে। এখন যদি জরিপ করা হয় তাহলে দেখা যাবে, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানের জন্য দলীয় সরকার নয়, তত্ত¡াবধায়ক সরকারই উপযুক্ত।
darpan.journalist@gmai.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন