পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে ঘিরে মাঠ ও মাঠের বাইরের আলোচনা কখনই থাকেনি। কাতার বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর আগেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে ঘুরে ফিরে সেই রোনালদোই পর্তুগাল শিবিরে আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছেন। এই মহাতারকাকে বাদ দিয়ে গত প্রায় দুই দশক কিছুই চিন্তা করতে পারেনি পর্তুগাল জাতীয় দল। তবে রোনালদোকে ঘিরে মাঠের বাইরের আলোচনা কাটিয়ে বিশ্বকাপে মনোযোগী হতে চায় পর্তুগিজরা। আজ ‘এইচ’ গ্রæপে আফ্রিকান শক্তি ঘানার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এবারের বিশ্বকাপে মাঠের লড়াই শুরু করবেন রোনালদোরা। দোহার স্টেডিয়াম ‘৯৭৪’ এ বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হবে ঘানা-পর্তুগাল ম্যাচটি।
পর্তুগালকে ঘিরে মাঠ ও মাঠের বাইরে সম্প্রতি যত হেডলাইন হয়েছে তার সবটাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর্তুগিজ সুপারস্টার রোনালদোকে নিয়ে। বিশ্বকাপের ঠিক আগে এক সাক্ষাতকারে ক্লাব সম্পর্কে বোমা ফাটিয়ে আলোচনায় এসেছেন রোনালদো। যে কারণে কাতারের মাঠে নামার আগেই ইউনাইটেডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন তিনি। যদিও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সপ্তাহের শুরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে রোনালদো শুধুমাত্র ফুটবলের উপর মনোযোগী হতে সবাইকে আমন্ত্রন জানিয়েছেন। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী রোনালদো বেশ কয়েকটি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর কাতারে নিজের শেষ বিশ্বকাপে পর্তুগালকে শিরোপা উপহার দিতে মুখিয়ে আছেন। আইকনিক ফুটবল জাতি হিসেবে পর্তুগিজরা পরিচিত হলেও তাদের দেশ শুধুমাত্র ১৯৬৬ ও ২০০৬ সালে দুই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। গত পাঁচ আসরের মধ্যে চারটিতেই শেষ ১৬’র পর আর যেতে পারেনি পর্তুগাল। সর্বশেষ ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে এবারের গ্রæপের আরেক দল উরুগুয়ের কাছে হেরে শেষ ১৬ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন রোনালদোরা। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে নিজেদের শেষ ১১ ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জয়ী হয়েছেন তারা। যদিও গত বৃহস্পতিবার শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে নাইজেরিয়াকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে কাতারের প্রস্তুতিটা ভালই সেরে নিয়েছে পর্তুগাল। আন্তর্জাতিক বড় টুর্নামেন্টে শেষ তিনটি আসরের প্রথম ম্যাচে জিততে পারেনি ফার্নান্দো সান্তোসের দল। তবে বিশ্বকাপে পর্তুগাল কখনই পরিসংখ্যানের হিসেব মিলিয়ে খেলতে আসেনি। ম্যাচ বাই ম্যাচ এগিয়ে যাবার লক্ষ্যে এবারও তারা অবিচল। কিন্তু ঘানার অন্তত একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে, প্রথম ম্যাচে ভাল কিছু করতে হলে গত সাত ম্যাচে মাত্র দুই গোল হজম করা পর্তুগালের অপ্রতিরোধ্য রক্ষণভাগকে ফাঁকি দেয়ার কৌশল বের করা। ঘানা ম্যাচের পর সান্তোসের পর্তুগালকে পরের দুই ম্যাচে উরুগুয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। একই সঙ্গে পরের রাউন্ডে যেতে হলে তাদের আফ্রিকান প্রতিপক্ষের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই নিজেদের পথ সুগম করতে হবে।
এদিকে আট বছর পর ফের বিশ^কাপে ফিরেছে ঘানা। ১২ বছর আগে উরুগুয়ের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টিতে হেরে শেষ চারে খেলা হয়নি তাদের। এবার সেই উরুগুয়েকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে পুরনো হিসেব মেটানোর সুযোগ এসেছে ঘানার সামনে। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ আসর ছিল ঘানার সবচেয়ে খারাপ। ওই আসরের গ্রæপ পর্বে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি তারা। বছরের শুরুতে ওটো আদ্দো কোচ হিসেবে নিয়োগ পেলেও আফ্রিকান নেশন্স কাপের তিনটি ম্যাচেই হেরেছে ঘানা। গ্রীষ্মের পর থেকে ঘানা নিজেদের প্রমাণের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠে। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় শেষ আটটি ম্যাচের সাতটিতেই জয়ী হয়েছে দলটি। এই জয়গুলোর কোনটিতেই গোল হজম করেনি তারা। একটি মাত্র হার এসেছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে। গত সপ্তাহে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়েছে ঘানা।
বিশ্বফুটবলে পর্তুগাল ও ঘানা কেউই কারো কাছে অপরিচিত নয়। ২০১৪ বিশ্বকাপে ঘানার বিপক্ষে পর্তুগালের ২-১ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন রোনালদো। তার একই ধরনের অবদান এবারও পর্তুগালকে যে শুরু থেকেই এগিয়ে রাখবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মাঠের বাইরের নাটক ছাড়াও রোনালদো শারিরীকভাবেও কিছুটা অসুস্থ। তা ছাড়া পরশুই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন তিনি। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ প্রীতি ম্যাচের দলেও ছিলেন না তিনি। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সী এই সুপারস্টার কাতারের মাঠে নামার আগে নিজেকে ফিট ঘোষনা করেছেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন প্রথম ম্যাচের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত তিনি। ফলে সান্তোস চলতি সপ্তাহে পুরোপুরি ফিট একটি দলকে নিয়ে অনুশীলন করেছেন। দল নির্বাচনে সান্তোসকে কয়েকটি পজিশনে সেরা খেলোয়াড় বেছে নিতে বেশ সুক্ষ পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালাতে হবে। গোলরক্ষক হিসেবে হয়তোবা রুই প্যাট্রিসিওকে অল্পের জন্য পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারেন দিয়োগো কস্তা। সেরা একাদশে বার্নান্ডো সিলভা ও রোনালদোর খেলা প্রায় নিশ্চিত। এজন্য আক্রমণভাগের শেষ পজিশনের জন্য হুয়াও ফেলিক্স, রাফায়েল লিয়াও, ওটাভিও এবং আন্দ্রে সিলভার মধ্যে লড়াই হবে।
একই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে ঘানার কোচ আদ্দোকেও। প্রথম ম্যাচের জন্য দলের সবাই সুস্থ আছেন। গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে মূল একাদশের অনেককেই তিনি বিশ্রামে রেখেছিলেন। এ ম্যাচে সাইড বেঞ্চে থাকা থমাস পার্টে, কামালদিন সুলেমানা ও আলেক্সান্দার ডিকুর পুনরায় দলে ফেরার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। একই ভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সেরা একাদশে থাকবেন আন্দ্রে আইয়ু ও জর্ডান আইয়ু।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন