শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

কাশকুমারী

আহমেদ উল্লাহ্

পূর্বের প্রকাশের পর | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

রদিন সকালে ওর লাশ দেখতে পায় ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায়, মনতলার ডোবায়।

মনতলা গোরস্থানে কবরে লাশ রেখে আসার পরই শেয়ালদের মচ্ছব শুরু হয়। হামেশাই গোরস্থানের আশপাশে মৃত মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়! একটি কাশফুল নিয়ে জলির হাতে তুলে দেয় মাজিদ, এই ধর, গন্ধহীন ফুলের শুভ্রতায় বিভাময় হোক তর জীবন...
লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে জলি ফুলটি হাতে নিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। এরপর থেকেই জলিকে দেখলেই মাজিদ কাশকুমারী বলে ডাকতো। ওই কাশফুলও সুবাস ছড়াতে শুরু করে! মাঝেসাঝে ওদের বাড়ি যেতো মাজিদ, গোপনে এখানেওখানে দাঁড়িয়ে গল্প করতো; চোখে চোখে অনুরাগের ভাব বিনিময় করতো!
মাধ্যমিক পাস করার পরই জলির বিয়ের কথাবার্তা চলতে দেখে বিচলিত হয়ে মাকে ডেকে ও বলে, আম্মা, আমি অহন বিয়া করমু না, লেহাপড়া করমু।
চোখ রাঙিয়ে ওঠে মা, ইতান কইস না বেটি, বিয়ার কথা ঠিকঠাক; খালি দিন-তারিখের বাকি।
রেগে ফোঁসফোঁস করে ঘর থেকে বেরুয় জলি, আমি অহন বিয়া করমুই না...
জলির বাপ একথা শোনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে, মাইয়া দেহি লায়েক হইয়া গেছে!
মাইয়ার কথা তুমি হুইনো না, এই বয়সে মাইয়ারা কত কথাই কয়; অন্দর থেকে জলির মা বলল।
একদিন বিকেলে মাছিমপুর বাজারে গিয়ে বসে থাকে জলি; কলেজ থেকে ফেরার পথে মাজিদের পিছু নেয় ও। গোরস্থানের পাশে আসার আগেই পেছন থেকে কার ডাকে পিছু ফিরে তাকায় মাজিদ। দ্রুত হেঁটে মাজিদের কাছাকাছি আসার পর বিস্ময়ে তাকায় মাজিদ, জলি..?
চলো কোথাও গিয়ে বসি, জরুরি কথা আছে।
শেষ বর্ষার ফসলের মাঠ অগ্রহায়ণের অপেক্ষায়, পোয়াতি রোপা আমনের ধানের শীষগুলোর চোখ মেলতে শুরু করেছে। গোরস্থানের পশ্চিমে ধানক্ষেতের পাশে গিয়ে বসে মাজিদের হাত চেপে ধরে জলি, বিয়ার কথাবর্তা ঠিক হইয়া যাইতেছে, এখন কী করবা?
বিস্ময়ে কপালে চোখ ওঠে মাজিদের, কও কী..!
হ, যা করার জলদি করো; শীঘ্র বাপের কাছে ঘটক পাঠাও।
ঠিক আছে, চিন্তা কইরা দেখি কী করন যায়!
দেরি কইরো না; তোমার দেওয়া কাশফুলটা অহনো আমার পড়ার টেবিলে সামনে ঝুইলা আছে।
পড়াশোনা শেষ করে চাকুরি করবে, এরপর বিয়ের স্বপ্ন মাজিদের। এমন সাত-পাঁচ ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই সিদ্ধান্ত ঠিক হয়ে গেল।
হঠাৎ একরাতে কোনো এক কুমারী কন্যার গলাফাটা বিলাপের করুণ আর্দ্রতায় কেঁপে ওঠে স্তব্দ রাত! তারাগুলোও কাঁদছে ওর সাথে!। ঘুমের অপেক্ষায় শায়িত মাজিদের কানে ওই কান্নার দীর্ঘশ্বাস করুণ ঢেউ তোলে! দ্রুত শোয়া থেকে ওঠে ঘর ছেড়ে বেরোয় মাজিদ...
কাছাকাছি যাবার আগেই কান্নারত ওই কুমারীকে চিনতে আর কোনো অসুবিধা হলো না মাজিদের, সে তো ওরই কাশকুমারী। দ্রুত হেঁটে ওর কাছে যাবার আগেই প্রাইভেট কার স্টার্ট হওয়ার শব্দে কিছুটা চির ধরিয়ে দেয় জলির ওই করুণ কান্নার আকুতিতে! গাড়ির গতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাশকুমারীর কান্নার করুণ ধ্বনিও ধীরে ধীরে মিইয়ে যেতে থাকে রাতের নীরবতায়...

 

ফুলের নীরবতা
মোরশেদুল ইসলাম
জন্মেছে জানলার পাশে স্নিগ্ধ বেলি ফুল
মানুষ দেয় না দৃষ্টি, কত অলি আসে
মধু নেয় মুখ ভরে, ঘ্রাণ ভালোবাসে
বাতাস দোলায় তারে তবুও মশগুল
তবু ফুলের যৌবন হয় কি উন্মূল?
এক অলির প্রস্থানে অন্য অলি হাসে
তাই দেখে আমি হাসি... আচ্ছন্ন সুবাসে
বুলবুলটাও হেসে যায়, মনে ব্যথা-শূল!
যৌবন মধুপে খায়, খুশবু খায় হাওয়া
রূপ দেখে মগ্ন আমি, আফসোসে উতলা
মন ভরে চোখ নয়, যায় না তো বলা
বউ কথা কও যেন শুধু দুঃখ গাওয়া!
কথা না বলেই ফুল কত কিছু বলে
মানুষ বধির তাই বার্তা যায় জলে!

 

ব্লাড ক্যন্সার
শশো ব্যাপারী
তুমি যদি রক্ত হও আর
রক্তের শ্বেতকণিকা আমাদের প্রেম!
যে আমার দেহের এপাশ থেকে
ঐপাশে ছুটে চলেছে
আমাদের সকল প্রতিকূলতা ভেঙে দেয়।
আমরা ছুটে চলি— দৌড়াই সামনের দিকে
প্রেম শুধু বেড়ে যায়
ভাতের ফেনার মতো বেড়ে উঠা প্রেম
অস্বাভাবিক হয়ে যখন
হামাগুড়ি দেয় তোমার ভেতর— তখনই তো
ব্লাড ক্যন্সার হয়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রেমিকা আমার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন