বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

ফুটবল জ্বর থেকে ক্রিকেট উত্তাপে

বাংলাদেশ-ভারত প্রথম ওয়ানডে আজ

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ক্রিকেট-পাগল বাংলাদেশ বর্তমানে ফুটবল-পাগল। ফুটবল বিশ্বকাপ এদেশে শুধু দেখাই হয় না, বরং প্রতিটি কোণায় উদযাপন করা হয়, বেশিরভাগ কথোপকথনে আধিপত্যও বিস্তার করে। এমনকি তিনটি ওয়ানডে আর দুটি টেস্ট ম্যাচের সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় ক্রিকেট দলকে প্রথম অনুশীলন মাঠেও যে স্বাগত জানানো হয়েছে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা দিয়ে! এখানেই শেষ নয়, আজ মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বেলা ১২টায় শুরু হচ্ছে প্রথম ওয়ানডে। গতকাল থেকেই পাশর্^বর্তী ইনডোর স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে টিকিট বিক্রি। মাত্র ২০০ টাকার টিকিট নিতেও যে দেখা মেলেনি দীর্ঘ সারির! অথচ অন্য সময় হলে দীর্ঘ ৬ বছর পর এদেশে আসা কোহলি-রোহিতদের এই সিরিজ দেখতে কালোবাজারিদের ব্যাবসাও যে রমরমা হতো তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। যদিও সিরিজটি বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ নয়, তবে তার মানে এর নয় যে এই সিরিজের উত্তাপ কম! ভারত-বাংলাদেশ বলে কথা।
ওয়ানডেতে ঘরের মাঠে বরাবরই বাংলাদেশ ফেভারিট। এরই মধ্যে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য আগামী বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছে বাংলাদেশ। তারপও ঘরের মাঠে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের সুযোগ হারাতে চাইবে না লিটন দাসের দল। ও হ্যাঁ, নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবালের ছিটকে যাওয়ায় এই প্রথম ওয়ানডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশসেরা এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। আর ভারতও জানে ঘরের মাঠে এই ফরম্যাটে কতটা শক্তিধর বাংলাদেশ তাইতো নিজেদের প্রথম সারির সকল ক্রিকেটারদের নিয়েই এসেছে প্রতিবেশি দেশটি। আগামী বছরের অক্টোবরে তাদের ঘরের বিশ্বকাপে দৃঢ়ভাবে নেতৃত্ব দিতে ভারতও চাইবে ভালো একটা শুরু। গতকাল আগের দিন ট্রফি উন্মোচনের পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে দু’দলই দিলেন রোমাঞ্চকর ক্রিকেটের আভাস।
নিয়মিত অধিনায়ক তামিম কুঁচকির চোটে ছিটকে যাওয়ায় লিটনকে করা হয় অধিনায়ক। আজ বাংলাদেশের ১৫তম ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে টস করতে নামবেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে এর আগে একবার টস করতে নেমেছিলেন লিটন। তবে সেটা ছিল কেবল একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। এবার পুরো সিরিজে ওয়ানোডের নেতৃত্ব এসেছে তার কাঁধে। সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম হাজির হলেন লিটন। ব্যাট হাতে নান্দনিকতা আর সাম্প্রতিক ধারাবাহিকতায় দেশের ক্রিকেটের বড় নাম তিনি। এবার নেতৃত্বে তার মুন্সিয়ানা দেখার অপেক্ষা। নেতৃত্ব পেয়ে শুরুতেই জানালেন নিজের রোমাঞ্চের কথা, ‘ধন্যবাদ বিসিবিকে, আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য। আমি খুব রোমাঞ্চিত। একটা বড় সিরিজে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি চেষ্টা করব ভালো করার।’
এরপরই ফিরলেন বাস্তবতার কঠিন জমিনে। বাংলাদেশের তো বটেই সারা বিশ্বেরই সবচেয়ে মন্থর ও উঁচু-নিচু বাউন্সের উইকেট সম্ভবত মিরপুর। বল থেমে আসে, স্পিনাররা গ্রিপ পান। কিছু বল আচমকা নিচু হয়, কিছু বল আবার লাফিয়ে উঠে। মিরপুর হোম অব ক্রিকেটের উইকেটের এই দৃশ্যগুলো অতি চেনা। চেনা হলেও রহস্য ভেদ করে রানের দেখা পাওয়া সহজ হয় না ব্যাটাররদের। শুরুতেই তাই উইকেট নিয়ে সুবিধা পাওয়ার কথা বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন, ‘অবশ্যই তারা চাপে থাকতেই পারে কারণৃআমি জানি না মিরপুরের উইকেট কেমন আচরণ করে। যেহেতু আমরা এই উইকেটে খেলে থাকি আমরা জানি, তারা জানে না উইকেট সম্পর্কে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা হিসেবে থাকবে।’
উইকেটের ব্যাপারে প্রশ্ন গিয়েছিল রোহিত শর্মার কাছেও। বিশদ ব্যাখ্যায় ভারতীয় অধিনায়ক জানালেন, বিচার বিশ্লেষণে গোটা ব্যাপারটা ভারত দলনেতা ছাড়তে চান পরিস্থিতির উপর, ‘এই ব্যাপারে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। এটা বোঝার জন্য খুব সহজ জিনিস না। মাঝে মাঝে আপনি ভুল হবেন, মাঝে মাঝে উইকেট নিয়ে ধারণা ঠিক হবে। আমরা উপমহাদেশে অনেক ক্রিকেট খেলি, উইকেট একইধরনের হওয়ার কথা। ঘাস থাকলে বাড়তি বাউন্স থাকবে, মুভমেন্ট থাকবে। শুষ্ক হলে স্পিন ধরবে। এসবই আপনি বিশ্লেষণ করতে পারেন। আমাদের দলে অভিজ্ঞরা আছে। খেলার আগে দেখে বোঝার জন্য লোক আছে। তারপরও ধারণা অনেক সময় ভুল হয়। ধারনা ভুল হলেও ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। কন্ডিশন যেটাই হোক আমরা সেভাবে মানিয়ে নিয়েই খেলব।’
বাংলাদেশ দুই তারকা খেলোয়াড়ের সেবা অনুপস্থিত থাকবে: তামিমের সঙ্গে পিঠের চোটের কারণে সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন তাসকিন আহমেদও। দুই খেলোয়াড়ই ওয়ানডেতে ভালো ফর্মে আছেন। গুরুত্বপূর্ণ রান করার সময় তামিম দলকে বিশ্বকাপের জন্য সরাসরি যোগ্যতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তাসকিনকে এই দিনে পেস আক্রমণের লিঞ্চপিন হিসাবে দেখা হচ্ছিল। তাদের হারিয়ে কিছুটা শক্তি কমে গেলেও দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজদের নিয়েই লড়াই চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিলেন লিটন, ‘তামিম ভাই নেই, তাসকিনকেও পাবো না। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যের। তবে আমাদের যারা আছেন, সাকিব ভাই, মুস্তাফিজ- এদের নিয়েই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবো বলে বিশ^াস করি।’
লড়াইয়ের উত্তাপটা টের পাচ্ছেন রোহিতও। ক্রিকেটার না থাকলেও দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় এদেশের দর্শকরাও যে তাদের প্রতিপক্ষ সেটিও ভালো করেই জানা অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের। ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে বাংলাদেশ সফরে এলেন রোহিত। অবশ্য অধিনায়ক হওয়ার পর এ প্রথমবার এখানে আসা তার। পরিসংখ্যান হিসাবে মুখোমুখি লড়াইয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশ এগিয়ে ভারত, তাদের বিপক্ষে যেকোনো সংস্করণে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয়টিও তিন বছর আগে। তবে দেশের মাটিতে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ জানাবে, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই রোহিতের। গত সাত-আট বছরের বাংলাদেশ দলকে আলাদাও মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রসঙ্গে এলে রোহিত বললেন, ‘কয়েক বছর ধরেই এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোমাঞ্চকর। গত সাত-আট বছরের বাংলাদেশ দল আলাদা। তারা খুবই চ্যালেঞ্জিং, আমরা সহজে জিতিনি। তাদের বিপক্ষে জিততে আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।’
এমনিতে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বন্ধ বেশ কয়েক বছর ধরেই। এশিয়া কাপ বা আইসিসি টুর্নামেন্টেই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দেখা হয় এখন। প্রতিবেশী হিসেবে এরই মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের লড়াইয়ে একটা বাড়তি ঝাঁজও থাকে প্রায় সব সময়ই। ভারত অনেক দেশেই দর্শক সমর্থনের বড় একটা অংশ নিজেদের পক্ষে পায়। তবে বাংলাদেশে সেটি পাবেন না, রোহিত ঠিকই জানেন তা। দর্শকের কথা উঠতেই হাসতে হাসতে বললেন, ‘এখানে তো পাব না। হ্যাঁ, ভারত দর্শকদের দিক থেকে চাপে থাকবে। এখানকার দর্শকেরা ভীতিজাগানিয়া হতে পারে, এ নিয়ে সংশয় নেই। তারা ক্রিকেটের ব্যাপারে খুবই আবেগপ্রবণ, দলকে সব সময়ই সমর্থন দিয়ে যায়। দলের জন্যও এটা খুবই রোমাঞ্চকর।’ দুই দলের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সুযোগ পেয়েও সেখানে ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। রোহিত মনে করিয়ে দিয়েছেন সে লড়াইয়ের কথাও, ‘তাদের সঙ্গে প্রতিবারই আমাদের ম্যাচ খুবই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। এমনকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচটিও তা-ই ছিল। ২০১৫ সালে তো সিরিজ হেরেছিলাম মনে হয়। আমরা জানি, গত কয়েক বছরে তারা অনেক উন্নতি করেছে। ফলে জিততে গেলে আমাদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হবে। আমাদের জন্য সহজ হবে না।’
কথার উত্তাপ তো পাওয়া গেল, স্বভাবিভাকেই এবার তাই ফুটবল বিশ^কাপ জ¦রের উত্তাপে পানি ঢেলে এদেশেও ওয়ানডে ক্রিকেটকে জায়গা পেতে কিছুটা বেগ তো পেতেই হবে। সেটা করতে হলে ভালো কিছুই করতে হবে সাকিব-লিটনদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন