তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট নতুন ভঙ্গিমায় কেবল দাঁড়াতে শিখছিল। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে ক্রিকেট পেয়েছিল নতুন কৌশল ও শরীরী ভাষা। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপের কিছুদিন পরেই বাংলাদেশ সফরে এসেছিল মহেন্দ্র সিং ধনীর নেতৃত্বধীন ভারত দল। সেইটি ছিল দুই দলের মধ্যে পঞ্চাশ ওভারের সংস্করণে সর্বশেষ দিপাক্ষীয় সিরিজ। কেউ বাংলাদেশ ক্রিকেটের টুকটাক খবরও রাখলে সেই সিরিজের ফলাফল ভুলার কথা নয়। অদম্য ভারত ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল সেবার। এরপর কেটেছে বহু বসন্ত। ধোনী থেকে বিরাট হয়ে ভারত দলের নেতৃত্ব এখন রোহিত শর্মার কাঁধে। ঠিক সেই সময়, আবারও টাইগারদের মিরপুরের ডেরায় ভারত। মেহেদি হাসান মিরাজের বীরত্বে চলমান সিরিজের প্রথম ম্যাচে এক উইকেটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। এই বোলিং অলরাউন্ডার মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে শেষ জুটিতে ৫১ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে টাইগার এনে দেন অবিস্বরণীয় এক বিজয়।
আজ দুপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে নামার আগে বাংলাদেশ শিবির তাই বেশ নির্ভার। অন্যদিকে ভারতীয় ওপেনার শেখর ধাওয়ানকে শোনাতে হলো সিরিজে ফিরে আসার মন্ত্র। অথচ, ঠিক এর উল্টোটাই ঘটে বাংলাদেশের সঙ্গে। কোন বড় দলের বিপক্ষে প্রায়ই সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারতে হয় টাইগারদের। সিরিজে এগিয়ে থাকা টাইগার কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কাছে গতকাল কোন গণমাধ্যম আর জানতে চালো না ম্যাচ জেতার ব্যাপারে, বরং এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ কথা বললেন মিরাজের বীরত্ব, ইয়াসির আলি রাব্বির একাদশের বাহিরে থাকা ও নাজমুল হোসেন শান্তর ধারাবাহিক ব্যর্থতা নিয়ে।
শুরুতেই বলতে হলো মিরাজকে নিয়ে। তাকে একজন নিরব নায়ক ভাবেন ডমিঙ্গো, ‘আগের ম্যাচের ইনিংসটি ছিল স্পেশাল। যেভাবে সে দলের হাল ধরে রাখে, শেষ দিকে নিজের চিন্তাভাবনায় স্বচ্ছ ছিল তা অসাধারণ। এমন নয় এবারই প্রথম সে এমন খেলল। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ৪০ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর দারুণ খেলেছে। এই দলে সে নীরব নায়কের মতো। সব সংস্করণে সে এত ধারাবাহিক... টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছে, যে কোনো জায়গায় ব্যাট করার সামর্থ্য আছে। চাপ সামলাতে পারে খুব ভালোভাবে। ওর ওপর সবসময় নির্ভর করা যায়।’
তবে এই দক্ষীণ আফ্রিকান কোচ তারেক শিষ্য শান্তকে রক্ষা করতে গিয়ে টেনে আনলেন এক হাস্যকর তুলনা। গ্রেট জ্যাক ক্যালেসের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললেন শান্তকে, ‘আমি অনেক গ্রেট ক্রিকেটার কথা বলে পারি, প্রথম ২০-২৫ ওয়ানডেতে যাদের গড় ছিল ২০। টেস্ট ক্রিকেটের কথা বললে, জ্যাক ক্যালিসের প্রথম ১২ টেস্ট শেষে গড় ছিল সম্ভবত ১২ (মূলত ২৫.৪৭), কিন্তু পরে সে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের একজন হয়েছে।’ আর ইয়াসির রাব্বির না খেলা প্রসঙ্গে ডমিঙ্গোর অভিমত তিনি সাকিবকে পুরাতন বলে চান। যদি রাব্বি দলে ঢুকে সেক্ষেত্রে বিজয়কে বসতে হবে আর সাকিবকে নতুন বলটাই খেলতে হবে তিন নাম্বারে।’
বাংলাদেশ শেষ উইকেট হাতে নিয়ে ভারতীয় বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ৫১ রান তুলে নেয়। শুধু বোলারদের এই ব্যর্থতা নয়, রোহিতের বড় চিন্তার কারণ ব্যাটিং। প্রথমে ব্যাট করে রোহিত-বিরাটের মত ব্যাটার থাকার পরও ১৮৬ রানের বেশি পুঁজি পায়নি তারা। বরং বলা যায় সাকিব আর ইবাদতের আগুণে বলিংয়ে পুড়ে ছারখার ভারত। বাংলাদেশের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া রোহিতরা। সিরিজ় শুরুর আগের দিন জানা গেল চোটের কারণে মোহাম্মদ শামির বাংলাদেশ সফর শেষ। তার বদলে পাঠানো হয়েছে উমরান মালিককে। খেলবেন না ঋষভ পান্থও। তিনিও বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরে গিয়েছেন।
মিরপুরে প্রথম ম্যাচে অভিষেক হয় কুলদীপ সেনের। এই পেসার দুইটি উইকেট নেন। পরের ম্যাচেও তাঁকে দেখতে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে চোতের কারণে প্রথম ম্যাচ মিস করা অক্ষর প্যাটেল ফিরতে পারেন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। সেক্ষেত্রে শাহবাজ আহমেদকে বেঞ্চে বসতে হতে পারে। ভারতীয় ওপেনার শিখর ধাওয়ান অবশ্য দ্বিতীয় ওয়ানডে জেতার ব্যাপারে অসম্ভব আশাবাদী, ‘ এটা নতুন না যে আমরা কোন সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারলাম। ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক। আমরা জানি কিভাবে এই পরিস্থিতি সামলে বেরিয়ে আসতে হয়। জইয়ের ব্যাপারে আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী।’ এই ৩৭ বছর বয়সী আরও যোগ করেন, ‘আমরা আমাদের ভুল গুলো পর্যালোচনা করে দেখেছি, নিশ্চিতভাবে পরের ম্যাচে আমরা ইতিবাচক প্রভাব রাখবো।’ প্রথম ম্যাচে রিভার্স-সুইপ করতে গিয়ে আউট সম্পর্কে এই ব্যাটার জানান, এই ধরনের পরিস্থিতিতে (পিচ) এই শট খুবই উপযোগী।
এই দুই দল এখন পর্যন্ত ৩৭ ম্যাচে মুখোমুখি হইয়েছে যেখানে টাইগারদের জইয় ৬ ম্যাচে। অন্যদিকে ভারতীয়রা জিতেছে ৩০ ম্যাচ। অন্য ম্যাচটি পরিত্যাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ কেবল একবারই ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জেতে। সেটা ২০১৫ সালে এই মীরপুরেই। আজ কি সেই ঘটনার পুনারাবৃত্তি হবে আবারও?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন