বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ ২০২২’ (আইএফআর ২০২২) আয়োজন করলো বাংলাদেশে। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের ইনানীতে আয়োজনের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আয়োজন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আইএফআর ২০২২। এতে বিশ্বের মোট ২৮টি দেশের নৌবাহিনীর প্রধান ও উচ্চপদস্থ নৌ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ বিশ্বের সাতটি দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্ট এবং হেলিকপ্টার আলোচ্য আইএফআরে অংশ নিয়েছে। তিন দিনব্যাপী চলমান এই অনুষ্ঠান ৬ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে ৯ ডিসেম্বর।
বঙ্গবন্ধুর প্রণিত পররাষ্ট্রমূলনীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে আইএফআর ২০২২-এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধুত্ব’ (Friendship Beyond the Horizon)। সামুদ্রিক জাতি সত্ত্বার এই মিলনমেলায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধিতে ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এ ছাড়া এই অনুষ্ঠান আয়োজন বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সর্বোপরি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সবার সঙ্গে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে আলোচ্য আইএফআর ২০২২ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই নৌবাহিনীর প্রথা অনুযায়ী ‘শিপস বেল’ বাজিয়ে ঐতিহাসিক এই অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আগত বিভিন্ন দেশের নৌসদস্যদের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াড্স কর্তৃক সমুদ্রে একটি বিশেষ মহড়া প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে দৃষ্টিনন্দন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করা হয়। জাতির পিতার স্মৃতি অবলম্বনে নির্মিত চিত্রপ্রদর্শনী ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ অবলোকন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে আইএফআর ২০২২ উপলক্ষে নির্মিত অত্যাধুনিক কজওয়ে ও জেটি উদ্বোধন করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা জেটিতে অবস্থানকরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ আগত বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর নৌবাহিনীর জাহাজ, উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার এবং বিশেষায়িত বোটের অংশগ্রহণে একটি মনোজ্ঞ ফ্লিট রিভিউ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় জাহাজগুলো ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিদের পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধানসহ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। আইএফআর ২০২২ উপলক্ষে ফ্লিট রিভিউর পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী বিদেশি নৌপ্রধান ও উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা মেরিটাইম সেমিনার ও দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
আইএফআর ২০২২-এ অংশগ্রহণকারী ২৮টি দেশ হলো বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, মিসর, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মায়ানমার, নাইজেরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ওমান, প্যালেস্টাইন, সুদান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশের নৌবাহিনী প্রধান ও উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
উলেখ্য, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক অঙ্গনে সামুদ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধিকল্পে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীসমূহ ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ আয়োজন করে থাকে। বন্ধুপ্রতীম দেশের নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ এর আয়োজন বিশ্বশান্তি ও পারস্পরিক ভ্রার্তৃত্ববোধ ও সহমর্মিতার বহিঃপ্রকাশ। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী ইতঃমধ্যে পেশাদার ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত এই ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ ২০২২ একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ।
আইএফআর ২০২২ অনুষ্ঠান বিশ্বের বন্ধুপ্রতীম দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক এবং পারস্পরিক সহযোগিতা উন্নয়নের পথকে আরোও সুগম করবে বলে আশা করা যায়। সর্বোপরি, আইএফআর ২০২২ এর এই বিশাল আয়োজন কক্সবাজারকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে নতুনভাবে উপস্থাপন করবে, যা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন