শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সভা-সমাবেশের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৩ এএম

শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার সকল রাজনৈতিক দল তথা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সভা-সমাবেশের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দেশে অবাধ রাজনীতির চর্চা ও রাজনৈতিক কর্মকাÐে বাধা দেয়া হচ্ছে। রাজপথে মানুষের রক্ত ঝরানো হচ্ছে। সংঘাত নয়; আলোচনার মাধ্যমে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। বুধবার নয়পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশ বিএনপি কর্মীদের মাঝে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, পুলিশের গুলিতে একজন নিহত এবং নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে ও সভায় এসব কথা বলেছেন।

খেলাফত মজলিস : খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার সকল রাজনৈতিক দল তথা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। গণমানুষের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

কিন্তু দেশে অবাধ রাজনীতির চর্চা ও রাজনৈতিক কর্মকাÐে বাধা দেয়া হচ্ছে। রাজপথে মানুষের রক্ত ঝরানো হচ্ছে। সরকারের এসব কর্মকাÐ দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে নিয়ে যাবে। এহেন হামলা, মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন ও হত্যাকাÐ বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি চাইলে দেশে সকল রাজনৈতিক দল যাতে অবাধে রাজনৈতিক কর্মকাÐ সভা, সমাবেশ করতে পারে, জনগণ স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। খেলাফত মজলিসের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এসব কথা বলেন।
উত্তরাস্থ একটি হলে মহানগর সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ খন্দকারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা সাইফ উদ্দিন আহমদে পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নায়েবে আমির মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল জলিল, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ এনামুল হক হাসান, মাওলানা শাহাদাত হোসাইন ।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী এক বিবৃতিতে বলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি আহুত সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টনে পুলিশ বিএনপির মাঝে সংঘর্ষে হতাহত ও নেতাদের গ্রেফতারের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। সভা-সমাবেশ সাংবিধানিক অধিকার। জনগণের এই অধিকার খর্ব করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। নয়পল্টনে প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপ অবশ্যই নিন্দনীয়। ১০ তারিখে বিএনপি আহুত গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাস্তা ঘাটে নাগরিকদের স্বাধীন চলাফেরার অধিকার খর্ব হচ্ছে এবং দুর্গতি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, সরকার ও বিএনপির মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা ও চলমান আতঙ্ক দূর করতে উভয় পক্ষইপ্রশস্ত মন নিয়ে এগিয়ে আসবেন বলে জাতি আশা করি।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি : নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে পুলিশের হানা এবং সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ গণহারে গ্রেফতার, টিয়ারশেল গ্যাস নিক্ষেপ, গুলি, লাঠিচার্জসহ পুলিশি তাÐবে একজন নিহত ও শত শত কর্মীদের আহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। এক যুক্ত বিবৃতিতে পার্টির আমীর আল্লামা সরওয়ার কামাল আজিজী ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল কাদের চৌধুরী বলেন, একটি স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই ধরনের হামলা ও রাজনৈতিক নিপীড়ন মেনে নেয়া যায় না। নেতৃদ্বয় বলেন, আমরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও আমাদের আচরণে ফ্যাসিবাদ স্পষ্ট।

নেতৃদ্বয় অবিলম্বে এই ধরনের আক্রমণাত্মক মনোভাব পরিহার করে সহনশীল আচরণের আহŸান জানান। গ্রেফতারকৃত নির্দোষ নেতৃবৃন্দের মুক্তি দিয়ে গণতান্ত্রিক আচরণের মাধ্যমে সমঝোতার আহŸান জানান। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রেখে সকল যৌক্তিক আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের সমর্থন রয়েছে বলেও নেতৃদ্বয় দৃঢ়মত ব্যক্ত করেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, মিছিল-সমাবেশ, রাজনৈতিক যে কোনো কর্মসূচি পালন সাংবিধানিক অধিকার। আজকে যারা নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে তাদের আখের সুখকর হবে না। পীর সাহেব বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যখন সঙ্কট সমাধানের রাজনীতি দরকার, সরকার সেই পথে না হেঁটে দমন-পীড়নের রাজনীতি শুরু করেছে। দেশ ও জনগণকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, অধিকার কেড়ে নেয়া, জুলুম-নির্যাতন, নিপীড়ন করা এবং মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করার রাজনীতি কারো কাম্য হতে পারে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মাতুয়াইলস্থ আমান সিটি জামিয়া কারীমিয়া দারুল উলুম মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষা বোর্ডের নির্বাহী সভাপতি মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ নূরুল করীমের সভাপতিত্বে এবং মাদরাসার কার্যকরি মুহতামিম মুফতী আব্দুল আজিজ কাসেমীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, মুফতী হেমায়েতুল্লাহ কাসেমী, মৌলভী নূরুল হক মুন্সি, মুফতী মাঈনুদ্দিন খান তানভীর, হাফেজ মাওলানা মুফতী সলীমুল্লাহ খান।
বাংলাদেশ লেবার পার্টি : বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জোরপূর্বক ঢুকে পুলিশ অভিযান, বর্বরোচিত হামলা ও নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতারকে পৈশাচিক, ফ্যাসিবাদী ও সংবিধান পরিপন্থি জঘন্য নৃশংসতা উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।

এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফারুক রহমান বলেন, নয়াপল্টনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নিশ্চিহ করতে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা একটা বর্বরোচিত পৈশাচিক, নারকীয় ও মর্মান্তিক ঘটনা, যা সংবিধানের চরম পরিপন্থি।

নেতৃদ্বয় বলেন, বাংলাদেশকে পুলিশি রাষ্ট্র করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করা হয়নি। সরকার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে প্রশাসনকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করিয়েছে। আমরা মনে করি, ১০ ডিসেম্বরের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বানচাল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ : স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশে সঠিক গণতন্ত্র চর্চা না থাকায় দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ। এক বিবৃতিতে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, দেশে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকার কারণে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। দুর্নীতি-দুঃশাসন মরণব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে দেশকে ভালোবাসতে আগামী দিনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হিংসাত্মক রাজনীতি পরিহার করে সকলের জন্য সমঅধিকার নিশ্চিত করে সঠিক গণতন্ত্র চর্চা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, দেশের মানুষ এখন জানমালের নিরাপত্তা চায়, ঘুষ-দুর্নীতি, দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়, ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা চায়। এসব নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী দেশের অভিভাবক হিসেবে ভ‚মিকা রাখবেন বলে দেশবাসী আশা করছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন