যতই দিন যাচ্ছে, ততই কমে আসছে বিশ্বকাপে প্রত্যাশী দলের সংখ্যা। শিরোপার দৌড়ে টিকে আছে কেবল ৬ দল। তবে এদের মাঝে সবচেয়ে চমকপ্রদ দল হচ্ছে মরোক্কো। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে কুপোকাত করে উঠে এসেছে শেষ আটের লড়াইয়ে। আজ রাত ৯টায় আল থুমামা স্টেডিয়ামে তারা মুখোমুখি হচ্ছে পর্তুগালের। এখানেই বিশাল চ্যালেঞ্জ। এটি কোন পর্তুগাল দল জানেন তো? যারা তাদের ফুটবল ইতিহাসের রাজা রোনালদকে বেঞ্চে রেখেও, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ৬-১ ব্যবধানে জিতে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে। পর্তুগিজ ম্যানেজার ফার্নান্দো সান্তোসের শিষ্যরা আছে দারুণ ছন্দে। তবে গণমাধ্যম এবং কিছু ব্যক্তি যেনো পিছু ছাড়ছে না পর্তুগাল এবং রোনালদোর। তাইতো গতকালও মাঠের ফুটবলের চেয়ে রোনালদোকে বেঞ্চ করা নিয়ে বেশি কথা বলতে হলো সান্তোস ও জোয়াও ফিলিক্সকে। অন্যদিকে মরোক্কো কোচ বিশাল চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়ে জানালেন তারা বিশ্বকাপ জিততেই এসেছে!
রোনালদোকে একাদশের বাহিরে রাখা নিয়ে পর্তুগালের ড্রেসিংরুম উত্তক্ত, এমনটাই দাবি পর্তুগীজ গণমাধ্যম রেকর্ডের। তবে এই চুটিল সংবাদ দেওয়া সংবাদপত্রটিকে একহাত নিয়েছে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন এফপিএফ। ফেডারেশনের দাবি রোনালদো দারুণভাবে সহযোগিতে করছে গোটা দলকে এবং তিনি দলের সঙ্গেই হস্যউজ্জ্বল ভাবে অনুশীলণে মগ্ন। সান্তোস সেকেন্ড রাউন্ডের ম্যাচে সুইদের বিপক্ষে দলকে নামিয়েছিলেন ৪-৩-১-২ ছকে। যা খেলা শুরু হওয়ার পর নিয়েছিল ডায়মন্ড শেপ। পর্তুগাল আজরাতে জিয়াশ-হাকিমিদের বিপক্ষে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নামার সম্ভাবনা বেশি। তবে একাদশের ব্যাপারে সান্তোস জানান, ‘আমি মাঠে গিয়ে একদশ ঘোষণা করি।’ গতম্যাচে রোনালদোর একাদশের বাহিরে থাকার প্রতিক্রিয়া কি ছিল জানতে চাইলে এই ৬৮ বছর বয়সী ম্যানেজার বলেন, ‘আমি মাঠে যাওয়ার আগে একাদশ নিয়ে আলাপ করি না, তবে শেষ ম্যাচের দিন দুপুরের লাঞ্চের পরই আমি রোনালদোর সঙ্গে আলাপ করি, সে এই সম্মান পাওয়ার দাবিদার। রোনালদো ব্যাপারটা নিয়ে খুশি ছিল না, তবে মেনে নিয়েছিল। আর যে ফুটবলার একাদশের বাহিরে থেকেও খুশি থাকে তারতো দলে কোন প্রয়োজন নেই।’ শেষ বাক্যটি দিয়ে সান্তোস বুঝিয়ে দিলেন, তিনি রোনালদোর পাশেই আছেন। সান্তোস আরও বলেন, ‘মরোক্কো দারুণ দল, তারা ৭ পয়েন্ট নিয়ে সেকেন্ড রাউন্ডে উঠেছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১ গোল ও দুই এসিস্ট করা পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড জোয়াও ফেলিক্সও ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পর্তুগাল ১৬ বছর পর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলছে, আর আমাদের সব মনোযোগ এখন মরোক্কো ম্যাচ ঘিরে। তাই আপনারা দল নির্বাচন নিয়ে পানি ঘোলা করবেন না।’ পর্তুগাল এখন পর্যন্ত দুই বার মুখোমুখি হয়েছিল মরক্কোর, এবং দুইবারই বিশ্বকাপের মঞ্চে। তাতে একটি করে জয় দুই দলেরই। রাশিয়া বিশ্বকাপে রোনালদোর একমাত্র গোলে জেতে পর্তুগিজরা।
অন্যদিকে ওয়ালিদ রেগরাগুইয়ের মূলসমস্যা তার ডিফেন্স নিয়ে! অবাক হচ্ছেন? হওয়ার মতই, কারণ যে দল গোটা আসরে মাত্র ১ গোল হজম করেছে তাদের ডিফেন্সে কিসের সমস্যা? ঝামেলাটা পাকিয়েছে চোট। সেন্টারব্যাক নায়িফ আজুয়ার্দ স্পেনের বিপক্ষে চোট নিয়ে মাঠে ছেড়েছেন, তার সঙ্গী রোমান সেইসও সেই ম্যাচ শেষ করেছেন চোট নিয়ে। দুই হ্যাভিওয়েট ফুলব্যাকেরও আছে কিছু চোটজনিত সমস্যা, তবে তারা খেলার উপযোগী। রেগারাগুই জানান, ‘রোনালদো বেঞ্চে থাকলে আমি খুশি হবো, কারণ এত বড় ফুটবলার না থাকা রক্ষণের জন্য স্বস্তির। তবে এটি আমাদের হাতে নেই। কিন্তু মাঠে আমরা পর্তুগালের চেয়েও বেশি সমর্থন পাবো দর্শকদের কাছ থেকে। আমরা এখানে জিততে এসেছে। আমাদের ফুটবলাররা ক্ষুধার্ত এবং তারা পর্তুগালের বিপক্ষে জিততে চায়।’
পর্তুগালের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে সুইস ম্যানেজার ইয়াকিন মুরিতও বিশাল হুমক দিয়েছিল। তবে পরের পরিণতি সবার জানা। মরোক্কোর ভাগ্যে কি আছে তা ম্যাচ শেষেই জানা যাবে। পর্তুগাল তাদের ইতিহাসের বড় দুই শিরোপা ইউরো কাপ ও নেশন্স লিগ জয়ী হয় সান্তোসের অধীনে। কখনোই বিশ্বকাপের ফাইনালে যেতে না পারা ইউরোপের দলটি এবার সোনালী শিরোপার স্বপ্নে বিভোর। সেই পথ পাড়ি দিতে আজ রাতে তাদের অতিক্রম করতে হবে আসরের ডার্ক হর্স মরোক্কোর বাঁধা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন