কেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের মতো দলগুলিকে তো বটেই, প্রতিষ্ঠিত শক্তিগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে সেই স্বাদ এখনও মেলেনি। ২০০৪ সালে দুই দলের প্রথম তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে একটিতে জয় পায় টাইগাররা। এরপর ২০০৭ ও ২০১৪ সালে তিন ম্যাচের সিরিজে বৃষ্টিতে ভেসে যায় একটি করে ম্যাচ। সর্বশেষ ২০১৫ সালে মাশরাফি বিন মুর্তজার টিম বাংলাদেশ সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে। ঠিক ২০১৫ সালের মতই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে প্রথম দু’ম্যাচেই ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলে বাংলাদেশ দল। এবারের সাফল্য তাই প্রথম কিছু নয়। তবে নতুন কিছুর হাতছানি এখনও আছে বাংলাদেশের সামনে। আর তা হলো- সাগরিকায় ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করা। আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সেই ক্ষুধা মেটাতেই নামবেন লিটন কুমার দাসের দল। ভারতকে বাগে পেয়ে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না স্বাগতিকরা। যার আভাস চট্টগ্রামের ফ্লাইটে উঠে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিজের অফিসিয়াল ফেসবুকে লিটন লিখেছিলেন, ‘মিশন শেষ করতে আর এক ধাপ বাকি’। গতকাল দলের প্রতিনিধি হয়ে গণমাধ্যমে হাজির হয়ে সে কথাই জানিয়ে গেলেন ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমট।
ম্যাচের আগের দিন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শেষ ম্যাচের আগে অনুশীলনে আসেননি অধিনায়ক লিটন, সাকিব আল হাসান, দুই ম্যাচের সেরা মেহেদী হাসান মিরাজ। টানা খেলার ধকলের কারণে বিশ্রামে ছিলেন তারা। রান না পাওয়া মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেনরা নেটে দিয়েছেন বাড়তি সময়। সাধারণত তিন ম্যাচের কোন সিরিজে দুই ম্যাচেই সিরিজের ফয়সালা হয়ে গেলে শেষ ম্যাচটিতে শরীরী ভাষায় কিছুটা নেতিয়ে পড়ে। দেখা দেয় তীব্রতার ঘাটতি। খেলোয়াড়দের তেতে উঠার বারুদ থাকে কম। বাংলাদেশের ফিল্ডিং কোচ ম্যাকডারমটকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি দ্রæতই তা উড়িয়ে দিলেন। বরং জানালেন এই ম্যাচটাও যে কারণে দলের জন্য ভীষণ গুরুত্বপ‚র্ণ, ‘কাজ কখনো শেষ হয় না। আমরা আন্তর্জাতিক ম্যাচকে হালকাভাবে নেই না। এই দল কখনো ভারতকে ৩-০ ব্যবধানে হারায়নি। এটা আমাদের জন্য বড় লক্ষ্য। আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যেতে পারতাম। আমরা এখনো প্রতিদ্ব›িদ্বতাপ‚র্ণ এবং চাপের সময় আগের চেয়ে ভালো। সিরিজ জেতার পর আমার ধারণা ছেলেরা আরেকটি ম্যাচ জিততে মুখিয়ে থাকবে।’
বোঝা যাচ্ছে ভারতকে সিরিজ হারিয়েই পুরোপুরি স্বস্তি আসেনি দলের, শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে ফেলতে চায় আরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। এই সিরিজ ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ নয়, এমনিতে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় সুপার লিগ আগের মতো গুরুত্বপ‚র্ণও নয় বাংলাদেশের। এসব ম্যাচে নিয়মিত একাদশের বাইরের খেলোয়াড়দের ঝালিয়ে দেখার একটা সুযোগ থাকে। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন ভারত, সেই পথে যাওয়ার কোন রকম কারণ দেখেন না ম্যাকডারমট। সেরা দল নিয়ে নেমেই আরও একটি ভারত বধের পরিকল্পনা তৈরি হয়ে আছে, ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের বিষয় ছাড়া ভারতের বিপক্ষে আপনি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চাইবেন। আমার মনে হয় না বিশ্রাম দেওয়ার মতোন জায়গায় আছে বাংলাদেশ। আমরা জেতার ধারাবাহিকতা রাখতে চাই, বড় খেলোয়াড়দের বসানোর বিলাসিতা করার মতো অবস্থায় নেই। আমরা আমাদের সেরা দলটি নিয়েই নামব। যত বেশি ম্যাচ জেতা যায় সেটাই লক্ষ্য।’
শেষ ম্যাচে ভারতের শক্তি কমছে। নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মা আগের ম্যাচেই আঙুলের চোটে পড়েছিলেন। সেলাই নিয়ে ব্যাট করতে নেমে নায়কোচিত ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি। রোহিত ফিরে গেছেন দেশে। তার সঙ্গে চোটে ছিটকে গেছেন দীপক চাহার, কুলদীপ সেনরাও। বাংলাদেশের ফিল্ডিং কোচ রোহিত না থাকায় একটা বাড়তি সুবিধা দেখছেন, তবে ম্যাচ জিততে তার আত্মবিশ্বাস নিজেদের উপরই, ‘সে (রোহিত) না খেললে আমাদের সুযোগ আরও বেশি। সে অনেক মেধাবী খেলোয়াড়। গত ম্যাচে সে আরও আগে না নামায় আমি অবাক হয়েছিলাম। সে কম বল পেয়েছি। প্রতিপক্ষের চেয়েও আমরা নিজেদের নিয়ে ভাবছি। প্রতিপক্ষ নিয়ে আমরা যথেষ্ট গবেষণা করেছি। আমরা এমন এক জায়গায় আছি যেখানে আমাদের খেলোয়াড়রা নিজেদের আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা দিয়ে ম্যাচ জিততে পারে।’
ভারতের তারকা ব্যাটিং লাইনআপকে দুই ম্যাচেই ঘোল খাইয়েছে বাংলাদেশের বোলিং। প্রথম ম্যাচে ১৮৬ রানে আটকে ১ উইকেটে ম্যাচ জেতার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ২৭১ রান দিয়েও শেষ দিকের নাটকীয়তায় ম্যাচ নিজেদের করে নেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। তৃতীয় ম্যাচে নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মার ছিটকে যাওয়ায় নেতৃত্ব দেবেন লোকেশ রাহুল। একাদশে একাধিক বদল নিশ্চিত তাদের। তারপরও এতটা সহজে বাংলাদেশকে ছেড়ে দেবে না বলে হুঁশিয়ারী দিয়ে গেলেন ভারতের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা অলরাউন্ডার ওয়াশিংটন সুন্দর, ‘অবশ্যই আমরা জিততে চাই। আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে চাই। কিছু বিষয় আমাদের করতে হবে। প্রসেসে মনোযোগ দেবো। ম্যাচটা জিতে ওয়ানডে সিরিজটা ভালোভাবে শেষ করতে চাই। আগের দুই ম্যাচ ছিল প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ। আমরা জয়ের কাছাকাছি ছিলাম।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন