শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেশি বিদেশী পর্যটকের উপচে পড়া ভীড়, পর্যটকের নিরাপত্তা পরিস্থিত সন্তোষজনক।

উখিয়া উপজেলা (কক্সবাজার) প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:৩৯ পিএম | আপডেট : ৩:৪৬ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি পৃথিবীর দীর্ঘতম অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত। এ সমুদ্র সৈকতের বৈশিষ্ট্য হলো পুরো সমুদ্র সৈকতটি বালুকাময়, কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। বালিয়াড়ি সৈকত সংলগ্ন শামুক-ঝিনুকসহ নানা প্রজাতির প্রবাল সমৃদ্ধ বিপণি বিতান, অত্যাধুনিক হোটেল-মোটেল-কটেজ, নিত্য নবসাজে সজ্জিত পর্যটন স্পটসমূহে পর্যটকদের বিচরণে কক্সবাজার শহরে পর্যটন মৌসুমে প্রাণচাঞ্চল্য থাকে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত একটি মায়াবী ও রূপময়ী সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এর রূপ পরিবর্তন করে। শীত-বর্ষা-বসন্ত-গ্রীষ্ম এমন কোনো ঋতু নেই যখন সমুদ্র সৈকতের চেহারা বদলায় না। প্রত্যুষে এক রকম তো মধ্যাহ্নে এর রূপ অন্য রকম। প্রতিদিন অসংখ্য দেশী-বিদেশেী পর্যটক এই সৈকতে আসেন।

ডিসেম্বরের শেষে, গত শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে। সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা, লাবনী ও কলাতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভরপুর পর্যটক। পর্যটকেরা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে। নানা বয়সীরা পর্যটকেরা বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক ও ঘোড়ায় চড়ে সমুদ্র দর্শন করছেন। কেউ আবার টায়ার টিউবে গা ভাসানো ও নোনা জলে গোসলে নেমেছেন। প্রিয়জনেরা এসব দৃশ্য মোবাইল ও ক্যামেরায় ধারণ করছেন। অনেককেই হিমছড়ি ও দরিয়ানগর সৈকতে প্যারাসাইলিংয়েও সমুদ্র দর্শন করতে দেখা গেছে।

শহরের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ ধরে পর্যটকেরা ইনানী, পাটোয়ারটেক পাথুরে সৈকত ও টেকনাফের দিকে ছুটছে। এ ছাড়া সেন্ট মার্টিন, সোনাদিয়া, মহেশখালী, রামুর বৌদ্ধ পল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পাহাড় সমুদ্র ও অরন্য ঘেরা গোয়ালিয়া, রোহিঙ্গা ক্যাম্প দর্শন, উখিয়া টিভি টাওয়ার সংলগ্ন ইয়াহিয়া গার্ডেন, আকিজের কুমির প্রজনন কেন্দ্র পরিদর্শনসহ বিভিন্ন স্থানে নিভৃতে নিসর্গে ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকের ঢল।

আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা, সরকারি বিভিন্ন স্তরের গোয়েন্দা সংস্থা, টুরিস্ট পুলিশ, বিচ কর্মী ও লাইফ গার্ড সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক সজাগ আছেন।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে সপরিবারে ঘুরতে এসেছেন সৌদি প্রবাসী আবদু রহিম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিনে এসেছি কক্সবাজার।মনে করেছিলাম সৈকতে ভিড় কম হবে। কিন্তু কোথাও দম ফেলানোর ফুরসত নেই এখানে। পরিবারের সদস্যরা খুব মজা পাচ্ছে, বাচ্চারা বেশ আনন্দ করছে-এটাই প্রশান্তি। দীর্ঘ সৈকত ছাড়াও এখানকার পাহাড়, বনভুমি, সুবিশাল আকাশ, সমুদ্রের তর্জন-গর্জন দেখার মতো।’

কক্সবাজার হোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত।দীর্ঘ করোনা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ কাটিয়ে মানুষ বাধাহীন ঘুরে বেড়ানোর অবারিত সুযোগ হবার কারণে, এখন কক্সবাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত। প্রতিবছর শীত মৌসুমে লক্ষ লক্ষ পর্যটকের আনাগোনা থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফের সাবরাং টুরিজম জোন। সাপ্তাহিক ছুটি ও ২৫-শে ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষ্যে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামবে আশা করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে শুক্রবার থেকে বিভিন্ন টুরিজম স্পটে তিল ধারনের জায়গা নেই। হোটেল-মোটেল, কটেজ প্রায় কানায় কানায় পরিপুর্ণ। কক্সবাজারে আইন শৃংখলা অবস্থা সন্তোষজনক। কক্সবাজারকে পরিবেশ বান্ধব, পর্যটক বান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। কিন্তু কিছুদিন পুর্বেও করোনা ও বৈরী আবহাওয়ার কারনে পর্যটকের পরিমান কম ছিল। বিশেষকরে হোটেল ব্যবসায়ীসহ পর্যটকের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো খুব কষ্টে কালাতিপাত করত। তবে, ইদানিং পর্যটন ব্যবসায় মোটামুটি সুদিন ফিরে এসেছে। ডিসেম্বরে, শীতের মৌসুমে পর্যটকের ঢল নামবে আশা করছি।


কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটিতেই পর্যটকের চাপ একটু বেশি থাকে। এসব বিবেচনায় নিয়ে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সজাগ রয়েছে।’

 

জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, শীতের শুরুতে পর্যটকের ভীড়ে কক্সবাজার সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোতে মানুষের ঢল লেগেই থাকে। হোটেল-মোটেলসমুহ অতিরিক্ত পর্যটকের পদভারে মুখরিত থাকে। অনেক সময় পর্যটকের হোটেল, মোটেল, বিভিন্ন কটেজে তিল ধারনের ঠাই থাকেনা। অতিরিক্ত পর্যটকের কারনে মানুষের লিভিং কস্ট বেড়ে যায়। অতিরিক্ত টাকা দেবার পরেও হোটেলে রুম পাওয়া যায়না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ সুযোগে অতিরিক্ত চার্জ করে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। পর্যটকের নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি থাকা উচিত।

 

কয়েক দিন আগেও পর্যটকশূন্য ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। তেমন ভিড় দেখা যায়নি পর্যটকদের। তবে ২০-শে ডিসেম্বরের পর থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ইতিমধ্যে আগামী শনিবার পর্যন্ত শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট-গেস্টহাউসের সব কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে বলে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সুত্রে জানা যায়।

 

হোটেলমালিকেরা বলছেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিন শহরের হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস-রিসোর্টের কোনো কক্ষ খালি নেই। রবি ও সোমবার ২ দিন ১০ শতাংশ কক্ষ খালি থাকলেও এরপর থার্টি ফার্স্ট নাইট (৩১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত শতভাগ কক্ষ অগ্রিম বুকিং করা। আগামী ১০ দিনে সৈকতে অন্তত ৭ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে মালিকেরা মনে করছেন।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০ শতাংশ হোটেল-গেস্টহাউসের কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। বাকিগুলোও দু-এক দিনের মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে। পর্যটকদের কাছ থেকে যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর আছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, কয়েক লাখ পর্যটকের নিরাপত্তা, সমুদ্রে নিরাপদে গোসলসহ চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে মাঠে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।

কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনের কলাতলী ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে ৫০০ হোটেল-মোটেল, কটেজ ও রিসোর্টে অন্তত ১ লাখ ৫০ হাজার পর্যটকের রাত্রিযাপনের সুবিধা রয়েছে।

 

এখন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের গত বুধবারও দেখা গেছে কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকেরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শত শত পর্যটক সাগরে গোসল করে তাদের ক্লান্তি মেটাচ্ছেন। এদিকে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ায় কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল মালিক ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তারা দীর্ঘদিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পর্যটকদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
kamal ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৪:৫৩ পিএম says : 0
এত লম্বা হেডলাইন,
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন