শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দ হত্যার রহস্য উদ্ঘাাটন

খুনি চক্রের সদস্য অজ্ঞান পার্টির ৩ জন গ্রেফতার

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দ হত্যার ঘটনায় অজ্ঞান পার্টির তিন সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মানুষকে অজ্ঞান করার বিভিন্ন ওষুধ। গত রোববার গভীর রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার তিনজন হলেন- মহিন উদ্দিন, মো. আনোয়ার হোসেন ও মো. রফিকুল ইসলাম।

পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, তারা অজ্ঞান পার্টির সদস্য। যাত্রীবাহি বাসে বাত-ব্যথার ওষুধ বিক্রির আড়ালে তারা যাত্রীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। কিভাবে যাত্রীদের বোকা বানিয়ে লুট করতে হয় তার প্রশিক্ষণও দেন এই চক্রের সদস্যরা। চট্টগ্রাম মহানগরীসহ এই অঞ্চলে অজ্ঞান ও মলম পার্টির মূলহোতা তারা। খুনি চক্রের তিন সদস্যকে আটক করার পর তারা খুনের দায় স্বীকার করেছেন। তাদের দেখানে মতো বাসটি সনাক্ত করা হয়েছে। আর এর মধ্যদিয়ে প্রায় তিন মাস পর আলোচিত স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে বলেও জানান পিবিআই কর্মকর্তারা।

অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে নিহত আবু ছৈয়দ কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর গোরকঘাটা গ্রামের মরহুম আফলতুনের পুত্র। তার বাসা সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি আমির চৌধুরী কলোনিতে। বিগত ২৮ সেপ্টেম্বর মাছ কিনতে নগরীর ফিশারি ঘাটে যাওয়ার জন্য সিটি সার্ভিসের বাসে উঠেন।

নগরীর অংলকার মোড়ে আসার পর তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের বড় দারোগার হাট বাজারে বাসের মধ্যে তিনি অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছেন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৬ অক্টোবর তিনি মারা যান।

পরদিন তার ছেলে ছেলে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। অজ্ঞান পার্টি কর্তৃক হত্যা মামলাটি থানা পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করে পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলা। উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহাদাত হোসেনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তিনি এই হত্যা মামলার ছায়া তদন্তভার গ্রহণ করে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের সনাক্ত করেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে নগরীর হালিশহর ও পাহাড়তলী থেকে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন আবু ছৈয়দকে হালুয়ার সাথে চেতনা-নাশক এবং মধু মিশ্রণ করে খাইয়ে দেন। পরে তার কাছ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল সেট নিয়ে যায়।

তাদের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে গতকাল সোমবার আসামি মো. রফিকুল ইসলামের হালিশহরের ভাড়া ঘর থেকে নিহত ব্যবসায়ীর ব্যবহৃত মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে সিডিল ট্যাবলেট, সিডাক্সিন ট্যাবলেট, মাইলাম ট্যাবলেট, হ্যান্ড গ্লাবস, খেঁজুর, মধুর বোতল, ইউনানী ঔষধ, হালুয়া, হামদর্দ ঔষধের পুস্তিকা, লিফলেট, সিনকারা ঔষধের পুস্তিকা, ছাফি ঔষধের পুস্তিকা, হাত ব্যাগসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার ও জব্দ করা হয়। তাদের দেখানো ও সনাক্ত মতে ব্যবসায়ীকে বহনকারী বাস (চট্ট মেট্রো-জ ১১-২১৮২) জব্দ করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, এই চক্রের সদস্যরা যাত্রীবাহী বাসে ওষুধ বিক্রেতা হিসাবে উঠে। যাত্রীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে এক পর্যায়ে ওষুধের আড়ালে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে দেয়। এরপর যাত্রীর কাছ থেকে টাকা পয়সা লুট করে নেয়। তারা দীর্ঘদিন থেকে এই অপকর্ম করে আসছে। এই চক্রের সদস্যরা অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যদের রীতিমত প্রশিক্ষণ দেয়। কিভাবে যাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে তাদের ওষুধ খাওয়াতে হবে, এরপর কিভাবে সর্বস্ব লুট করে বাস থেকে নেমে যেতে হবে সবকিছুই তাদের শেখানে হয়। এই চক্রের সাথে এই অঞ্চলের অন্যান্য অপরাধী চক্রের যোগাযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন