শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে

মুফতী রেজাউল আমীর ও ইউনুছ মহাসচিব পুনঃনির্বাচিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পীর সাহেব চরমোনাই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, ২০২৩ সালের শিক্ষা সিলেবাসে আগামী প্রজন্মকে নাস্তিক বানাবার সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা নাস্তিক বানানোর শিক্ষা সিলেবাস প্রত্যাখ্যান করছি। শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। বাংলাদেশে ইসলামের নীতি আদর্শ ছাড়া শান্তির কোনো বিকল্প নেই। সকল রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনীতি গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন। জাতীয় সম্মেলনে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ১৯ দফা ঘোষণা করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এ ঘোষণা পেশ করেন। সম্মেলনে পীর সাহেব চরমোনাই নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিসহ ১৫ দফা দাবি পেশ করেন। তিনি দলের ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা করেন। এতে দলের আমির ও মহাসচিব পুনঃনির্বাচিত হন যথাক্রমে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ও প্রিন্সিপাল ইউনুছ আহমাদ।
জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। জাতীয় সম্মেলন পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও দাওয়াহ্ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম ও মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন।

এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম এম আলম, জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, এবি পার্টির চেয়ারম্যান এএফএম সোলাইমান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, ইসলামী আন্দোলনের উপদেষ্টা মুফতি মিজানুর রহমান, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আব্দুল আউয়াল পীর সাহেব খুলনা, মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ সৈয়দ ইবরাহীম বীর প্রতীক, আল্লামা আব্দুল হক আজাদ, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহসচিব মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কাদের, প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ, অধ্যাপক ডা. আক্কাস আলী সরকার, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান, জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতী মোহাম্মদ আলী।
এছাড়া দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা, জোট-মহাজোট ভাঙ্গা-গড়ার নিত্য ঘটনা নিয়েও নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। জাতীয় সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়েছেন। সম্মেলন থেকে দলের আমীর আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে করণীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্বাচনী লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেন।

মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, একের পর এক কালাকানুন করে গোটা দেশকেই জেলখানা বানানো হয়েছে। বিরোধী মতকে দমন করা, গুম করা, রাজনৈতিক সমাবেশে গুলি করে মানুষ মারা ক্ষমতাসীনদের নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে।
সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সরকারে থাকলে সমালোচনা হবে। সরকারে থাকলে সহ্য করার ক্ষমতাও থাকতে হয়, চামড়া মোটা হতে হয়। আর সেটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, দায়িত্বে থাকলে তো ভুল হবে। সরকারে থাকলে সমালোচনা হবে। যে গাছে ফল ধরে সে গাছে ঢিল মারে, অন্য গাছে মারে না। সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসার পরামর্শ দেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য দেশের কল্যাণ করা এবং এ জন্য সাংঘর্ষিক রাজনীতির অবসান করা দরকার। একইসঙ্গে সবকিছুতে না বলারও রাজনীতিও বন্ধ হওয়া দরকার।

হাছান মাহমুদ বলেন, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি বিষয়টি বহু বছরের পুরোনো দাবি। প্রধানমন্ত্রী মুলা ঝুলিয়ে না রেখে সেই দাবি কার্যে পরিণত করেছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, মরহুম সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করেছেন। গত ৭ তারিখে বর্তমান সরকার বিএনপির মিছিলে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে। বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা দিয়েছে। ১৪ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ৪ লাখ কোটি টাকার ঋণখেলাপি। এভাবে দেশ চলতে পারে না। তিনি বলেন, এদেশে ইসলাম যুদ্ধ করে আসেনি। পীর মাশায়েখ অলী আউলিয়া কেরামের মাধ্যমেই ইসলাম এসেছে। অলী আউলিয়ার কারণেই এ দেশ টিকে আছে না হয় এ দেশ শিকিম হয়ে যেত। সম্মেলনে ১১ সদস্যের প্রেসিডিয়াম, ৭৩ সদস্যের নির্বাহী পরিষদ, ২২ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষণা করা হয়।

প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের উপস্থিতিতে আজকের সম্মেলন এক মহামিলনে পরিণত হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন আওয়ামী লীগের দালালি করে না। আমরা রাসূল (সা.) এর দালালি করি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ইসলামী শিক্ষা বাদ দেয়া হচ্ছে। নাস্তিক-মুরতাদদের চিরতরে উৎখাত করতে হবে। সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, আমরা আইয়ূব, ইয়াহইয়া, শেখ মুজিব, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সরকার দেখেছি। ক্ষমতাসীনদের ভাগ্যের উন্নতি হলেও এ দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ১৪ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান সোলাইমান বলেন, ৯৩ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সরকার মসজিদ বানাচ্ছেন। আর ইসলামী শিক্ষা পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সকল স্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, দেশে চরম দুরবস্থা চলছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিছু হালুয়া-রুটি খাবো কাবিখা খাবো এ নিয়তে রাজনীতি করলে হবে না। ৮/১০টি দাবি নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি কী করে জানানি, তবে আগামী নির্বাচনে আমি হুজুরের সাথে (ইসলামী আন্দোলন) থাকব। সাবেক রাষ্ট্রদূত মসিহ বলেন, আমি সউদীতে রাষ্ট্রদূত থাকাকালে এক লাখ মাদরাসার ছাত্রকে চাকরি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। পরে আমাকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি মাদরাসার ছাত্রদের সউদীতে চাকরির সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম বলেন, পাকিস্তান আমলে ২৫ পরিবার এদেশের সম্পদ লুটপাট করছে। এখন অগণিত টাউটরা অর্থ লুটপাট করে বিদেশে জমি বাড়ি কিনছে। দেশকে বাঁচাতে একজন খালেদ বিন ওয়ালিদের প্রয়োজন। এদেশে কোনো ব্রাম্মান্যবাদী চলতে দেয়া হবে না। ফেরাউনের রক্তচক্ষু প্রতিহত করে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Tawhidul Islam ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৭ এএম says : 0
Alhamdulillah. Right speech, go ahead. Thanks a lot to all participants. Alhamdulillah.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন