অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর দায়ে ২০১৯ সালের শেষ দিকে মতিঝিল পাড়ায় অভিযান চালিয়ে কয়েকটি ক্লাব সিল-গালা করে দেয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। যার অন্যতম একটি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব। তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে ক্লাবটি। তবে প্রায় তিন বছর পর এই ক্লাবের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিতে ফের ফিরে এসেছে ক্যাসিনো দোসররা! ক্যাসিনো কাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাবের ওই অভিযানে তখন গ্রেফতার হয়েছিলেন ক্লাবটির তৎকালীন সহ-সভাপতি হাজী মোহাম্মদ সেলিম। যার ৬ মাসের জেলও হয়েছিল। জেল খেটে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর প্রমোশন পেয়েছেন সেলিম। সহ-সভাপতি থেকে সরাসরি ইয়ংমেন্সের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান বনে গেছেন তিনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক গত কয়েক মাস আগে ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্সের নতুন সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন মাখনকে। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমান মাইনুকে। তবে গত ২৯ ডিসেম্বর ক্লাবের ৯২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছেন মাখন ও মাইনু। সেলিমকে বানানো হয় গভর্নিং বডির নতুন চেয়ারম্যান। অভিযোগ রয়েছে ইয়ংমেন্সের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এমন অনেকের জায়গা হয়েছে যারা বিতর্কিত। ফকিরেরপুল এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা তো ননই, পাশাপাশি তাদের খেলাধুলা সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞানও নেই। অভিযোগে আরও জানা যায়, সভাপতি আনোয়ার হোসেন মাখন নিজেও ক্যাসিনো মামলার জামিন প্রাপ্ত আসামী। ফলে ক্রীড়াবোদ্ধাদের মতে গভর্নিং বডির নতুন চেয়ারম্যান ও সভাপতি দু’জনের অন্তর্ভুক্তিতে ফের ক্যাসিনোর ছায়া পড়ছে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটিতে।
৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক নিজেই ছিলেন ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্সের গর্ভনিং বডির চেয়ারম্যান। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি এই পদ ছেড়ে দিলে তার জায়গায় বসানো হয় ক্যাসিনো মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাজী সেলিমকে। এ প্রসঙ্গে মোজাম্মেল হক গতকাল বলেন, ‘প্রথম কথা আমি এখনো ক্লাবের গর্ভনিং বডির চেয়ারম্যান। মৌখিক বললেও লিখিতভাবে নিজের পদ ছাড়ি নাই। কয়েকদিন আগে সভাপতি মাখন আমার কাছে ৩ লাখ টাকা ধার চেয়েছিল ক্লাব কার্যক্রম চালানোর জন্য। আমি বলেছিলাম আমার কাছে টাকা নাই। তোমরা আমাকে বাদ দিয়ে সেলিমকেই গর্ভনিং বডির চেয়ারম্যান বানাও। এটা কথার কথা, সিরিয়াসলি বলি নাই।’ তিনি যোগ করেন,‘এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে। বিতর্কিত কাউকে ফকিরেরপুল ক্লাবের কমিটিতে রাখতে পারিনা। আসলে কয়েকদিন আগে ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এই কমিটিতে স্থানীয় ও যোগ্যদের জায়গা হয়নি। কমিটি গঠন করেছেন সভাপতি মাখন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনু। আমি বহুবার কমিটি দেখতে চাইলেও তারা দেখায়নি। আমি চাই ক্যাসিনোমুক্ত ক্লাব ও এলাকা। ক্লাবের কমিটিতে যাতে ক্লিন ইমেজের ক্রীড়া সংগঠকরা জায়গা পান সেটাই আমার কাম্য। তাই ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের সদ্য ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে আমি অবৈধ্য বলে ঘোষণা করছি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি আমার অনুরোধ রইল এই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে স্থানীয় ও ক্লিন ইমেজের লোকদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের। যদি তারা তা না করেন তাহলে আমি নিজেই কমিটি গঠন করবো।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন