কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পর্নোগ্রাফি মামলায় কামালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য শুভরাজ আলীকে (৪৬) ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ৩০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শ্রাবণী দাস এ রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মো. মাহবুবুর রশীদ খান।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শুভরাজ আলী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের মৃত করিম মন্ডলের ছেলে। তিনি খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। বর্তমানে তিনি কামালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হামলা, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের বিধবা, অসহায় ও দরিদ্র এক নারীকে হত্যার ভয় দেখিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মাঠের মধ্যে একটি সেচ পাম্পের ঘরে নিয়ে যান শুভরাজ আলী ও তার লোকজন। পরে তারা ওই নারীকে বিবস্ত্র করে মোবাইলে ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলেন। পরে তার নগ্ন ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় এবং চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় ওই বছরের ১৫ অক্টোবর দৌলতপুর থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন ওই ভুক্তভোগী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর থানা পুলিশের এসআই গৌতম কুমার মন্ডল মামলার তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর আদালত এ মামলায় ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে শুভরাজ আলীকে এই শাস্তির আদেশ দেন। এছাড়া মামলার বাকি আসামিদের খালাস দিয়েছেন আদালত।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও শিশু আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী সাইফুদ্দীন বাপী বলেন, হত্যার ভয় দেখিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অসহায় ও ছিন্নমূল নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে আসামিরা। পরে তাকে মাঠের মধ্যে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে এবং নানাভাবে নির্যাতন করে। শুধু তাই নয়, ওই নারীকে নগ্ন করে মোবাইলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে আসামিরা। সেই ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে বিচার না পেয়ে আমার পরামর্শ অনুযায়ী মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আসামি শুভরাজকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছেন আদালত।
স্থানীয়রা জানান, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ছাড়াও শুভরাজ মেম্বার চুরি, ডাকাতি, নির্যাতনসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। তার অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। শুভরাজ মেম্বারের নির্যাতনের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। এর আগে যারা তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন তাদেরকেই নির্যাতন করেছে ওই মেম্বার।
ভুক্তভোগী ওই নারী ও মামলার বাদী বলেন, আমি রায়ে সন্তুষ্ট নয়। কারণ ৬ আসামির মধ্যে মাত্র এক আসামিকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আসামিদের সবাইকে শাস্তি দিলে ন্যায়বিচার পেতাম। তাছাড়া রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শুভরাজকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি মো. মাহবুবুর রশীদ খান বলেন, মামলায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত শুভরাজ আলীকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি শুভরাজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন