গত বিপিএলের পর জুলিয়ান উড নামটা উচ্চারিত হচ্ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। জাতীয় দলের পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে ইংলিশ এই কোচের নাম শোনা যাচ্ছিল বেশ জোরেশোরে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই আলোচনা ফলপ্রসু হয়নি। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেও নাকি উডের দিকে ঝুঁকতে চেয়েছিল বিসিবি। তবে তখন পাকিস্তানে দায়িত্ব পালন করায় সাড়া দিতে পারেননি উড। ইংলিশ কোচ জানালেন, এখন তিনি প্রস্তুত আছেন বাংলাদেশের কোচ হতে।
এবারের নবম বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জুলিয়ান উড। পাওয়ার হিটিং বিশেষজ্ঞ কোচ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা আছে তার। আইপিএলে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আছে ইংলিশ কোচের। উডের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেও তাকে নিয়ে ভাবছিল বিসিবি। গতকাল তিনি নিজেই খোলাসা করেছেন বিষয়টি।
আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব। প্রথম ম্যাচেই মাঠে নামছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তার আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এলে উঠল বাংলাদেশ জাতীয় দলে উডের কোচ হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা। যেখানে এই ইংলিশ বললেন, ‘বিশ্বকাপের আগে (বিসিবির সঙ্গে) কথা হয়েছিল। আমি তখন পিসিবির সঙ্গে কাজ করছিলাম এবং কথা হলেও এর কোনো ফলাফল আসেনি। গত বছর অনেক বারই আমাদের আলোচনা হয়েছে। তবে কোনোটাই কার্যকরী হয়নি। কিন্তু আমি এখন বাংলাদেশে আছি এবং আমাকে এখন পাওয়া যাবে (হাসি)।’ পাওয়ার হিটিং স্পেশালাইজড বটে কিন্তু তিনি ব্যাটিং কোচও। সেটাও বলতে চাইলেন উড, ‘এটা দারুণ। আমি আইপিএলেও কাজ করেছি। পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে আমার পরিচিতি আছে, যেটা দারুণ। এখন এটা (টি-টোয়েন্টি) পাওয়ার গেম। কিন্তু একই সঙ্গে আমি ব্যাটিং কোচও, পাওয়ার হিটিংয়ে স্পেশালাইজড আমি। গত বছর মানুষ দারুণ ছিল আমার জন্য। এরপর আইপিএলে কাজ করেছি, অনেক জায়গায়। এটা ভালো।’
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে এবার আফিফ হোসেন ধ্রুবর মতো ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করছেন উড। বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা সাধারণত শারীরিক দিক দিয়ে বিশালাকার নয়। এই অবস্থায় পাওয়ার হিটিংয়ে উন্নতি করতে হলে আফিফদের জন্য কোন জায়গায় কাজ করতে হবে সেটা বুঝাতে চাইলেন উড, ‘গত বছর সিলেটে বিজয়ের সঙ্গে অনেক কাজ করেছিলাম। আফিফের দিকে দেখেন, তারা বড় না (শরীরের দিক থেকে)। তারা রিদম ও টাইমিংয়ের ওপর নির্ভর করে। তারা বল জোরে মারতে পারে, কিন্তু মুভমেন্টে তাদের রিদম ও টাইমিং দরকার হয়। বড় ক্রিকেটাররা মাসল ব্যবহার করে। তারা পারবে না, যদি করতে যায় কাজ হবে না। এটা আসলে বুঝতে পারার ব্যাপার কীভাবে তাদের শরীর কাজ করে বল মারার সময়। যখন এটা হবে তাদের, আমি কিছু ট্রেনিং ও ড্রিলও করাচ্ছি। কিন্তু এটা শুধুই অনুশীলনের একটা ধরন। কিন্তু বুঝতে হবে কীভাবে তাদের শরীর কাজ করে বল মারার সময়।’
উড যখন চট্টগ্রামে নিজের উচ্ছার কথা বলছেন, ঠিক সেই সময় ঢাকায় এক পাঁচ তারকা হোটেলে বসেছিল বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের জরূরী বৈঠক। যেখানে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন থেকে শুরু করে প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন, পরিচালক জালাল ইউনুস, খালেদ মাহমুদ সুজন, ইসমাইল হায়দার মল্লিকসহ শীর্ষ কর্তারা ছিলেন। তাতেই নড়ে চড়ে বসে সংবাদমাধ্যমগুলো। যোগাযোগ করা হলে বৈঠকে উপস্থিত কর্তাদের অনেকে ফোনই ধরেন নি, কেউ কেউ ধরলেও কিছু পরিষ্কার করে বলতে রাজি হননি। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, হেড কোচ নিয়েই কথাবার্তা চলেছে। আগেই জানা, চন্ডিকা হাতুরুসিংহেকে আবার হেড কোচ হিসেবে পেতে আগ্রহী বিসিবি। তার সাথে কথাবার্তা অনেকদূর এগিয়েছে।
এছাড়া, স্বল্প মেয়াদে টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট পদে শ্রীধরন শ্রীরামের কাছ থেকেও গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো সাফল্য পেয়েছে দল, তাকে নিয়েও ভাবতে হচ্ছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাকে। চাকরির ব্যাপারে কথাবার্তা বলতে বিপিএলের মাঝেই একবার ঢাকা ঘুরে গেছেন এই ভারতীয়। তবে আইপিএলে একটি দলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় সেই কথাবার্তা খুব বেশিদূর এগোয়নি। আসছে ২৫ জানুয়ারি ফের ঢাকা আসার কথা রয়েছে শ্রীরামের। উডের স্বেচ্ছায় কোচ হতে চাওয়া, ‘হাতুরুপ্রেম’ আর শ্রীরামের সাম্প্রতিক সাফল্য এই ত্রি-টানায় পড়ে বৈঠক শেষ হয়েছে সিদ্ধান্ত ছাড়াই। তবে কোচ নিয়োগে খুব বেশি আর সময় নিতে চায়না বোর্ড, সেটি হয়ে যেতে পারে আজই!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন