শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

ঢাকায় এসেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ডোনাল্ড লু’র বৈঠক

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:৩১ এএম

ঢাকায় নেমেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। দুদিনের সফরে শনিবার ঢাকা পৌঁছেছেন তিনি। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ইস্কাটনের পররাষ্ট্র ভবনে গিয়ে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। প্রায় ১ ঘণ্টা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে নৈশভোজ করান। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক উপস্থিত ছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ায় এটি তার দুদেশ সফরের অংশ। রুটিন সফর হলেও এটিকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। মার্কিন এ কর্মকর্তার সঙ্গে আজ ঢাকায় একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলাদা সভা হবে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও তার প্রাতঃরাশ বৈঠকের কথা রয়েছে। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সন্ধ্যায় ডোনাল্ড লুকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আমেরিকা) নাঈম উদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ এবং আগামী সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে তার এই সফরে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা থাকতে পারে।
লু’র সফর ঘোষণা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মিডিয়া নোটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার, অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা এবং শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি শোনার জন্য লু বৈঠক করবেন। জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার ও মানবাধিকারসহ অগ্রাধিকারের ইস্যুতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি আলোচনা করবেন।
জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘ডোনাল্ড লুর সফরকে আমি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। কারণ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের পরিচালক ঢাকা সফর করেছেন। এখন লু সফর করছেন। এরপর ২৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরেকটি উচ্চপর্যায়ের সফর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সিরিজ বৈঠকের প্রেক্ষাপটে এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তার তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে তিনটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হবে বলে মনে করেন। এক. শাসন ব্যবস্থা তথা মানবাধিকার থেকে নির্বাচন পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যু। দুই. অর্থনৈতিক সহযোগিতা। বিশেষ করে বাংলাদেশ যে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত হতে চাইবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির আগ্রহ দেখাতে পারে। তার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত আকসা ও জিসোমিয়ার মতো সামরিক চুক্তির বিষয়েও আলোচনায় তুলতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তিন. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে আগ্রহী হতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত ঢাকার আগ্রহের বিষয়গুলোও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ আগ্রহ দেখাতে পারে। জিএসপি পুনর্বহালে অনুরোধ জানাতে পারে বাংলাদেশ। ব্লু ইকোনমি থেকে সম্পদ আহরণ এবং রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কীভাবে পাওয়া যায় সে বিষয়ে ঢাকার আগ্রহ থাকতে পারে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকও ঢাকার তরফে আলোচনায় আসতে পারে। জলবায়ু সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কীভাবে পাওয়া যেতে পারে এসব বিষয় বাংলাদেশ নজরে আনতে পারে। কোভিডের সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য অবকাঠামোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার দিক নিয়ে বাংলাদেশ আগ্রহ দেখাতে পারে।’
এদিকে লুর সফরের উল্লেখযোগ্য দিক সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকার একজন উচ্চপর্যায়ের কূটনীতিক যুগান্তরকে বলেন, ‘এই সফরের সবকিছুই উল্লেখযোগ্য।’
ডোনাল্ড লু ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে যোগ দেন। এই পদে দায়িত্ব লাভের আগে লু কিরগিজ প্রজাতন্ত্রে ২০১৮ থেকে ২০২১ এবং আলবেনিয়াতে ২০১৫ থেকে ২০১৮ মেয়াদকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। আলবেনিয়াতে রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগের আগে লু যুক্তরাষ্ট্রের ইবোলা রেসপন্সের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর হিসাবে পশ্চিম আফ্রিকায় দায়িত্ব পালন করেন।
ফরেন সার্ভিস অফিসার হিসাবে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অধীনে কাজ করছেন। তিনি ভারতে ডেপুটি চিফ অব মিশন (ডিসিএম) (২০১০-২০১৩) ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (২০০৯-২০১০), আজারবাইজানে ডিসিএম (২০০৭-২০০৯) এবং কিরগজিস্তানে ডিসিএম (২০০৩-২০০৬) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কর্মজীবনের শুরুতে মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ ককেশাস দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর, ইউরোপীয়বিষয়ক ব্যুরোর (২০০১-২০০৩), স্টেট সেক্রেটারি কার্যালয়ের অধীনে সদ্য স্বাধীন দেশগুলোবিষয়ক রাষ্ট্রদূতের বিশেষ সহকারী (২০০০-২০০১), ভারতের নয়াদিল্লিতে পলিটিক্যাল অফিসার (১৯৯৭-২০০০), ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের বিশেষ সহকারী (১৯৯৬-১৯৯৭), জর্জিয়ার তিবলিসিতে কনসুলার অফিসার (১৯৯৪-৯৬) এবং পাকিস্তানের পেশোয়ারে পলিটিক্যাল অফিসার (১৯৯২-১৯৯৪) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ১৯৮৮-১৯৯০ সময়কালে পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে পিস কর্পসের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে হাতে খনন করা পানির কূপ পুনরুদ্ধার এবং স্বাস্থ্য শিক্ষাদান ও ল্যাট্রিন নির্মাণে সহায়তা করেছেন।
লু ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন বিচ থেকে আগত। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি আলবেনিয়ান, রাশিয়ান, জর্জিয়ান, আজারবাইজানি, উর্দু, হিন্দি ও পশ্চিম আফ্রিকার ক্রিয় ভাষা জানেন। তিনি বাইক চালানো, সিনেমা দেখা, ভ্রমণ ও নিজ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন আগেই ডোনাল্ড লুর সফরকে স্বাগত জানিয়েছেন। মন্ত্রী আশা করেন, তার সফরের মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। তিনি বলেন, মার্কিন সহকারী মন্ত্রীর সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনা হবে।
প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি স্টাডি করছে বাংলাদেশ। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন মূল্যবোধে বিশ্বাস করে।
যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বরাবরই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়ে থাকে। পাশাপাশি, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রিত বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে আবারও ফেরত চাওয়া হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন