বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বিপিএলের। বিশেষ করে ডিআরএস না থাকায় প্রতি ম্যাচেই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি হচ্ছে বিতর্ক। বিকল্প হিসেবে বিসিবির রাখা এডিআরএস তৈরি করছে আরও ধোঁয়াশা। ফরচুন বরিশাল-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ম্যাচে জাকের আলি অনিকের আউট নিয়ে সমালোচনার মধ্যে বিসিবি এডিআরএস নিয়ে জানাল বিস্ময়কর ব্যাখ্যা।
সবশেষ গতপরশু বরিশালের বিপক্ষে রান তাড়ায় ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে ব্যাট করছিলেন জাকের আলি অনিক। তাকে দেওয়া এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত নিয়েই তৈরি হয় বিতর্ক। ইফতেখার আহমেদের অ্যারাউন্ড দ্য উইকেটে এসে করা বলে তাকে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর আউট দিলে তিনি রিভিউতে যান। টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, বলের প্রায় পুরোটাই পিচ করেছে লেগ স্টাম্পের বাইরে। বড় পর্দায় তা দেখার পর জাকের বেঁচে যাওয়ার স্বস্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন টিভি আম্পায়ার তানভির আহমেদ, হতভম্ব হয়ে মাঠ ছাড়েন জাকের। ম্যাচ শেষে কুমিল্লার কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও এই সিদ্ধান্তে চরম হতাশার কথা জানান, ক্রিকেটাররাও আছেন আতঙ্কে!
আগের ম্যাচে ফিফটি করা জাকেরের এমন আউটের পর বরিশালের কাছে শেষ পর্যন্ত ১২ রানে হারে কুমিল্লা। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার প্রধান কোচ সালাউদ্দিনের কাছে এ ব্যপারে এটি প্রশ্ন হলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে শুরুতে একটু এড়িয়ে যেতে চাইলেন তিনি। বললেন, ‘আমাদের হাত-পা বাধা। বেশি কিছু বললে আবার সাসপেন্ড করে দেবে।’ পরে অবশ্য আক্ষেপ ঝেড়ে দেন পরের প্রশ্নে, ‘এডিআরএস থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো আমার মনে হয়। আম্পায়ার যেটা দিয়ে দেবে, সেটা (রেখে) দেওয়াই ভালো। এটা তো একেবারে লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করেছে, এমন না যে...। আমার কাছে মনে হয় এক-দুইটি সিদ্ধান্ত...প্রথম ম্যাচেও একটা সিদ্ধান্ত খারাপ হয়েছে, আজকেও। আমার কাছে মনে হয়েছে... জানি না! তবে এমন ডিআরএস থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।’ সেই ভয়টাই সত্যি হয়েছে সালাউদ্দিনের। গণমাধ্যমে দেয়া তার এই বক্তব্য ভালো লাগেনি বিসিবি। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে শৃক্সক্ষলাভঙ্গের অভিযোগ এনে ঐ ম্যাচের ৫০ শতাংশ ফি কেে নেয়ার পাশাপাশি ৩টি ডিমিরিট পয়েন্টও দিয়েছে
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, পিচিং জোন দেখার প্রযুক্তিতে বলের ৫০ শতাংশের বেশি লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচড করলে তা পিচড আউটসাইড লেগ হিসেবে গণ্য হয়। জাকেরের আউটের বেলায় বলের ৯৯ শতাংশই লেগ স্টাম্পের বাইরে ছিল। আইসিসির নিয়মে তাই কোনভাবেই আউট হন না জাকের। তবে এই বিতর্কের মধ্যে নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে বিসিবি। গতপরশু প্রায় মাঝরাতে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, টুর্নামেন্টের প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী, বলের যেকোনো হালকা অংশও পিচিং জোনে থাকলে তা পিচড ইন লাইন হিসেবে গণ্য করা হবে। টিভি আম্পায়ার এই নিয়মের কারণেই মাঠের আম্পায়ারের দেওয়া জাকের আলির আউট বহাল রাখেন। এক্ষেত্রে মাঠের আম্পায়ার নট আউট দিলেও সিদ্ধান্ত বদলে আউট হয়ে যেত। অর্থাৎ বিসিবির পরিচালনা করা এডিআরএসের নিয়মের সঙ্গে আইসিসি ডিআরএস নিয়মে আছে বড় ধরনের ভিন্নতা।
মাঠের আম্পায়ার তাৎক্ষণিকভাবে অনেক সময় ভুল করে বসেন বটে। কিন্তু বারবার রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকার পরও টিভি আম্পায়ারের এমন সিদ্ধান্ত জাগিয়ে তোলে বিস্ময় ও প্রশ্ন। ২৪ ঘন্টা পর গতকালও থাকলো ঐ আউটের রেশ। আন্তর্জাতিক নিয়মের বত্যয় ঘটিয়ে বিসিবির দেয়া নতুন ব্যাখ্যা জেনে বিস্মিত ক্রিকেটাররাও। কোচ সালাউদ্দিনতো বটেই, যাদের পক্ষে এ সিদ্ধান্ত গিয়েছে সেই দলের খেলোয়াড় কাজী অনিকও দ্বিধায় ভুগছিলেন। গতকাল অনুশীলনের ফাঁকে সেই আউট ও নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারেননি সিলেট স্ট্রাইকার্সের খেলোয়াড় আকবর আলীও, ‘দেখুন আমরা তো জানি আইসিসির রুলস অনুযায়ী খেলা চলছে। এখন এর বাইরে, ক্যাপ্টেন্স মিটিংয়ে এটা নিয়ে কোনো কথা হচ্ছে কি না, এগুলো আসলে আমাদের জানার কথাও না। তো আমরা জানতাম যে বিপিএলে আন্তর্জাতিক নিয়মে খেলা হচ্ছে। আমাকে প্রশ্ন করলে মনে হয় না আমি উত্তর দিতে পারব।’
কুমিল্লা কোচ সালাউদ্দিনকে শাস্তি দেবার কথা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন কি-না আকবর, কে জানে!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন