স্পোর্টস ডেস্ক : মাইলফলকটা স্পর্শ করে ইতিহাসে নতুন আরেকটি পাতা সংযোজন করতে পারতেন আগের ম্যাচেই। সেটা না করে পেনাল্টি এ্যাসিস্টের মাধ্যমে জন্ম দিলেন আরেক ইতিহাস। কিন্তু গোল করাটা যার কাছে শ্রেফ বাঁ পায়ের ভেলকি তাঁর কাছে একটি গোল আর এমন কি! পরের ম্যাচেই সেটা করে ফেললেন। পরশু স্পোর্টিং গিজনের বিপক্ষে লা লিগায় ৩০০ গোলের সেই মাইলফলক তিনি স্পর্শ করলেন ঠিক ‘মেসিও’ ভঙ্গিমায়। ডি বক্সের বাইরে থেকে দু’জন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে গোলরক্ষককেও করলেন পরাস্ত। সেই তিনি লিওনেল মেসি ছাড়া আর কে। পরে আরো এক গোল করে সংখ্যাটা নিয়ে গেলেন ৩০১-এ। এটি অবশ্য কোন রেকর্ড নয়। লা লিগায় তেলমে জারার সর্বোচ্চ ২৫১ গোলের রেকর্ডটি ভেঙেছেন আগেই। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪৬ গোল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। স্পোর্টিং গিজনের মাঠে বার্সার ৩-১ গোলের জয়ে বাকি গোলটি করেন লুইস সুয়ারেজ।
লা লিগায় ব্যক্তিগত ২৯৯ গোল নিয়ে খেলতে নেমে ২৫তম মিনিটেই ৩০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন বার্সার আর্জেন্টাইন তারকা। ২ মিনিট পর দুর্দান্ত এক পাল্টা আক্রমণ থেকে স্বাগতিকদের সমতা এনে দেন কাস্ত্রো গার্সিয়া। কিন্তু ৪ মিনিট পরে সুয়ারেজের সহায়তায় দলকে আবারো এগিয়ে নেয়ার সাথে নিজের গোলসংখ্যাটা ৩০১ নিয়ে যান মেসি। বিরতির পর পেনাল্টি থেকে হ্যাটট্রিকও করতে পারতেন ৫ বারের বিশ্বসেরা। কিন্তু মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা বন্ধু সুয়ারেজের নামে যে তখনও কোন গোল যোগ হয়নি। সুযোগটা তাই সুয়ারেজকেই দিলেন মেসি। তবে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন কই উরুগুয়ান স্ট্রাইকার! তার ডান পায়ের জোরালো শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ফেরত পাঠান গিজন গোলরক্ষক। লিগে বার্সার এটি ষষ্ঠ পেনাল্টি মিসের ঘটনা। প্রায়শ্চিত্ত করতে অবশ্য সুয়ারেজ নিলেন মাত্র ৫ মিনিট। ডি বক্সের ভেতর থেকে দুর্দান্ত শটে ব্যবধান গড়ে দেন ৩-১। এ নিয়ে লিগে তার গোল সংখ্যা পৌঁছালো ২৪-এ। ২১ গোল নিয়ে তার পরেই রোনালদো। দু’মাস মাঠের বাইরে থেকেও লিগে মেসির গোলসংখ্যা এখন ১৫। এদিন গোল পাননি নেইমার। কিন্তু একাধিক সুযোগ তৈরির পাশাপাশি ম্যাচে জুড়ে ছিলেন দুর্দান্ত।
এ নিয়ে ৩১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড যাদের কল্যাণে, ম্যাচ শেষে কোচের মুখে তাঁদের প্রশংসা ঝরবে এটাই তো স্বাভাবিক। যেমনটি ঝরল লুইস এনরিকের কণ্ঠেওÑ ‘আপনি যে দলের বিপক্ষেই খেলেন না কেন, মেসি দলে থাকাটাই একটা সুবিধা।’ কাতালান কোচ মুগ্ধ সুয়ারেজেওÑ ‘সুয়ারেজের গোল আমাদের অনেক ভালো কিছু দিচ্ছে। কারণ তার গোল আমাদের চাপ কমিয়ে দেয়।’ সাথে পেনাল্টির হতাশা নিয়েও নিজেদের দুর্বলতার কথা জানালেন এনরিকেÑ ‘পেনাল্টি থেকে গোল করার ক্ষেত্রে আমাদের আরো ভালো করতে হবে। কিন্তু মেসি, নেইমার ও সুয়ারেজের ওপর আমাদের পুরো আস্থা আছে। তারা তিনজনই দারুণ পেনাল্টি নেয়া খেলোয়াড়।’ কিন্তু পেনাল্টি ছাড়াই যারা প্রতিপক্ষের জালে এমন গোল উৎসব করেন তাদের কাছে একটা পেনাল্টি মিস আর এমন কি! যেমনটি জানালেন এনরিকেÑ ‘কিন্তু পেনাল্টি মিস আমাকে একদমই ভাবায় না।’
এই জয়ে শিরোপা দৌড়ে আরো এগিয়ে গেল বার্সেলোনা। ২৪ ম্যাচে চ্যাম্পিয়নদের সংগ্রহ ৬০ পয়েন্ট। ৬ পয়েন্ট কম নিয়ে তাদের পরেই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রিয়াল মাদ্রিদ।
লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতা
খেলোয়াড় ক্লাব সময়কাল গোল
লিওনেল মেসি বার্সেলোনা ২০০৪- ৩০১
তেলমো জারা অ্যাথলেটিক ক্লাব ১৯৪০-১৯৫৫ ২৫১
রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ২০০৯- ২৪৬
হুগো সানচেজ অ্যাটলেটিকো, রিয়াল, ভ্যালকানো ১৯৮১-৯৪ ২৩৪
রাউল গঞ্জালেজ রিয়াল মাদ্রিদ ১৯৯৪-২০১০ ২২৮
লা-লিগায়
মেসির ৩০১*
ম্যাচ সংখ্যা ৩৩৪
এর মধ্যে শুরুর একাদশে ছিলেন ২৯২টি ম্যাচে
বাঁ পয়ের গোল ২৪০টি
ডান পায়ের গোল ৪৮টি
হেড থেকে ১২টি
পেনাল্টি থেকে ৩৯টি
ফ্রি-কিক গোল ১৫টি
বক্সের ভেতর থেকে গোল ২৬০টি
ন্যু ক্যাম্পে গোল ১৭২টি
দ্বিতীয়ার্ধে গোল ১৭৭টি
প্রিয় প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ (২০ ম্যাচে ২১ গোল)
পরের অবস্থানে সেভিয়া (১৮ ম্যাচে ১৯ গোল)
রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে করেন ১৯ ম্যাচে ১৫ গোল
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন