মুখে না বললেও অনেকটা অভিমান থেকেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়ে নিলেও তামিম ইকবাল খেলছেন ফ্রাঞ্চাইজি লিগ। তিনি যে এখনও এই সংস্করণের রানের রাজা, তার প্রমাণ পাচ্ছে এবারের বিপিএলও। খুলনা টাইগার্সের এই তারকা ওপেনার ৫ ম্যাচের তিনটিতেই পেয়েছেন রানের দেখা। মিরপুরের স্লো উইকেটে দ্বিতীয় ম্যাচে ৪০ রানের পর চট্টগ্রামে পরপর দুই ম্যাচে খেলেছেন ৬০* ও ৪৪ রানের ইনিংস। তাতে দেশসেরা ব্যাটসম্যান নিজেকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টিয়েন্টিতে ৭০০০ রান পূর্ণ করেছেন তামিম ইকবাল। গতকাল সাগরিকায় হয়ে স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ৪৪ রানের ইনিংসটিই মাইলফলকে পৌঁছে দেয় দেশের ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে প্রায় সব রেকর্ডের মালিক। তবে তামিমের মাইলফলকের দিন খুলনার জয়ের নায়ক কিন্তু তামিম নন- মাহমুদুল হাসান জয়। তার ফিফটিতে ভর করে ম্যাচটি ৭ উইকেটে জিতে নিয়েছে টাইগার্স। আগে ব্যাট চট্টগ্রামের করা ৯ উইকেটে ১৫৭, ৭ উইকেট ও ৪ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে খুলনা। আসরে টানা তিনটি হারের পর টানা দুটি জয় তুলে নিল খুলনা। অন্যদিকে টানা দ্বিতীয় হার চট্টগ্রামের। দুই দলেরই পয়েন্ট এখন ৪।
তবে দিনটি অবশ্যই তামিমের জন্যও বিশেষ। অক্টোবরেই ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ^কাপ। তার আগে এই ক-িশনে বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাটে রান, অবশ্যই স্বস্তি ফেরাবো নির্বাচকদের মনেও। ৭ হাজারী ক্লাবে পৌঁছতে মোট ২৪২টি টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলতে হয়েছে তামিমকে (৭০৩৯)। দ্রুততম সাত হাজার রান পূর্ণ করায় সবার উপরে আছেন পাকিস্তানের বাবর আজম। তার লেগেছে ১৮৭ ইনিংস। নবম স্থানে আছে তামিম। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৭৮ ম্যাচে তামিম করেছেন ১৭৫৮ রান। ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর বিপিএলে তিন হাজারের কাছাকাছি রান করেছেন। এ ছাড়া পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, শ্রীলঙ্কার এসএলপিএল, কাউন্টি ক্রিকেট ও নিউজিল্যান্ডের লিগসহ আলাদা ১৭টি দলের হয়ে এ সংস্করণে খেলেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে রান তোলায় তামিমের পরেই আছেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বের প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা এ অলরাউন্ডারের সংগ্রহ ৬ হাজার ৫৪৬ রান। এছাড়া এ সংস্করণে মুশফিকুর রহিমের ৫ হাজার ১৩০ ও মাহমুদউল্লাহর সংগ্রহ ৫ হাজার ৩০১ রান।
এদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় দলে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বিবেচিত হলেও টি-টোয়েন্টি সংস্করণটাও যে খারাপ খেলেন না, তা রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই দেখিয়েছেন জয়। এদিন চট্টগ্রামের বিপক্ষে খেলেন আরও একটি দারুণ ইনিংস। তামিমের পর দারুণ ব্যাট করেন অধিনায়ক ইয়াসির আলীও। তবে লক্ষ্য তাড়ায় নেমে এদিন শুরুটা ভালো ছিল না খুলনার। আবারও দলকে হতাশা উপহার দেন মুনিম শাহরিয়ার। ফেরেন খালি হাতে। তবে দ্বিতীয় উইকেটে আরেক ওপেনার তামিম ইকবালকে নিয়ে দলের হাল ধরেন মাহমুদুল হাসান জয়। ১০৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন এ দুই ব্যাটার।
তবে খুলনার স্বপ্নে ধাক্কা দেন নিহাদুজ্জামান। ১৩তম ওভারে বল হাতে নিয়ে তামিমকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন তিনি। এক ওভার পর ফিরে আরেক সেট ব্যাটার জয়কেও তুলে নেন তিনি। তাতে ম্যাচে ফিরেছিল চট্টগ্রাম। কিন্তু এরপর আজম খানকে নিয়ে অধিনায়ক ইয়াসির আলী বাকি কাজ সহজেই শেষ করেন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন জয়। ৪৪ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান এ ব্যাটার। ৩৭ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৪ রান করেন তামিম। ১৭ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৬ রান করে অপরাজিত থাকেন ইয়াসির। চট্টগ্রামের পক্ষে ২টী উইকেট পান নিহাদ।
এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি চট্টগ্রামও। দলীয় ৮ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে সাজঘরে ফেরেন ম্যাক্স ও’ডয়েড। এরপর আফিফ আহমেদকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে নেন আরেক ওপেনার উসমান খান। দ্বিতীয় উইকেটে স্কোরবোর্ডে ৭০ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। উসমানকে নাসুমের ক্যাচে পরিণত করে এ জুটি ভাঙেন আমাদ বাট।
এরপর দাসউইস রাসুলিকে নিয়ে দলের হাল ধরেন আফিফ। তৃতীয় উইকেটে ৩ রানের জুটি গড়েন তারা। এ জুটি ভাঙেন ওয়াহাব রিয়াজ। আফিফকে ফেলেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। আর এ জুটি ভাঙতেই ওয়াহাবের তোপে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি। স্কোরবোর্ডে ৪২ রান যোগ করতে ৭টি উইকেট হারায় তারা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন উসমান। ৩১ বলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান এ ওপেনার। ৩১ বলে ১টি করে চার ও ছক্কায় ৩৫ রান করেন আফিফ। এছাড়া রাসুলির ব্যাট থেকে আসে ২৫ রান। শেষ দিকে ৯ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ২১ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলেন ফরহাদ রেজা। খুলনার পক্ষে ৩৬ রানের খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছেন ওয়াহাব রিয়াজ। ২টি শিকার সাইফউদ্দিনের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন