বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এত দিন বাইরে থেকে তামার তার ও মূল্যবান ধাতববস্তু চুরি হলেও, এবার চুরির ঘটনা ঘটেছে কেন্দ্রের ভেতরে।
সম্প্রতি কেন্দ্রের মধ্যে তালাবদ্ধ একটি কক্ষ থেকে ৪৭ লাখ টাকা মূল্যের কয়লা পরীক্ষার মেশিন (BOMB CALORIMETER) চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় গত ১৬ জানুয়ারি রামপাল থানায় মামলা দায়ের করেছেন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (সিকিউরিটি ও প্রশাসন) মো. অলিউল্লাহ।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে কেন্দ্রের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, কেমিস্ট আব্দুল মালেক ল্যাব বন্ধ করার সময় টেস্টিং যন্ত্রটি টেবিলের উপরেই ছিলো। আব্দুল মালেক চলে যাওয়ার আগে তালার চাবি ল্যাব-১ এর মুসা পারভেজকে দিয়ে ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. সাদ্দাম হোসেন এবং তানভীর রহমানকে দিতে বলেন। মুসা পারভেজ তাদের চাবি দেন। রাত ১০টায় ওই স্থানে ডিউটিতে আসেন মো. জাকারিয়া আল রাজী এবং মাসুম বিল্লাহ। ১৫ জানুয়ারি সকাল ৭টায় ডিউটি শেষ করেন তারা। এসময় মো. সাদ্দাম হোসেন এবং মো. মাসুম বিল্লাহ দায়িত্ব নেন। সকাল ৯টার দিকে রুম ক্লিনার আব্দুল নোমান ল্যাব-২ পরিস্কার করতে গিয়ে টেবিলে মেশিন দেখতে না পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। ঘটনার ১১দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মেশিন বা চোরের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী ও রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও নিরাপত্তা) মো. অলিউল্লাহ বলেন, চুরির ঘটনায় আমরা মামলা করেছি, কাজ চলছে। এবিষয় আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, ‘তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লা পরীক্ষার মেশিন চুরির ঘটনায় আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।
এদিকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় চুরি সংগঠিত হওয়ায় কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, কয়লা পরীক্ষার মেশিন সাধারণ মানুষের কোনো কাজে লাগার কথা নয়। ছিচকে চোরদের চুরি করারও কথা নয়। বড় কোনো চক্র এবং কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ কেউ এতে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ল্যাব এলাকায় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা লোক থাকার পরও মামলায় কারো নাম না দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায় এড়ানোর চেষ্টা।
সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহীনিগুলোর সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মাসে র্যাব-৬ এর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের ২০ জনকে আটক ও অর্ধকোটি টাকার মালামাল উদ্ধার করে। অপরদিকে গত ৯ মাসে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দায়িত্বরত আনসার ব্যাটালিয়ন খুলনার সদস্যরা ৩৩ জন চোরকে গ্রেপ্তার করে। এসময় চোরাইকৃত ৫৩ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন