বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে ৫টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো আর্থিক খাতের সংস্কার, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ অর্থাৎ বিনিয়োগ বাড়ানো। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। পাশাপাশি সরকারী নীতিমালা এবং বেসরকারি খাতের অনুকুল পরিবেশ তৈরি করত হবে।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচ্যাম) আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। সভায় ‘বাংলাদেশ ম্যাক্রো-ইকোনমিক আউটলুক ইন দ্য ইভলভিং গ্লোবাল ফ্যানোমেনা’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেনে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমনগিন্টিং। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যামচ্যামের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মাহমুদ কামাল এবং ইউএস অ্যাম্বাসির পলিটিক্যাল এন্ড ইকোনমিক কাউন্সিলর স্কট ব্রান্ডন।
এডিমন গিন্টিং বলেন, বাংলাদেশ অনেক অগ্রগতি করলেও করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য এখন েেথকেই গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার জরুরী। এখাতে অপারেশনাল দক্ষতা, দুর্বল অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং উচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে। উচ্চ অর্থনীতর দেশে যেতে হলে এখানে শক্তিশালী সংস্কার প্রয়োজন। একইসঙ্গে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রয়োজন। এছাড়া সঙ্কট কাটাতে বেসরকারি খাত ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। যেমনÑ এরই মধ্যে বেসরকারি খাত জিডিপি প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে একটি ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত ভোক্তা গোষ্ঠী এবং সহায়ক সরকারী নীতি বেসরকারি খাতের বিকাশের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। এছাড়া বেসরকারী খাত উদ্ভাবন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিতে পারে। সুগঠিত উদ্যোগের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপ ব্যবহার করতে পারে বেসরকারি খাত। পাশাপাশি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের জন্য নতুন নতুন খাতে সম্প্রসারণ এবং বিদ্যমান খাতে উন্নতি করার উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বেসরকারী খাতকে অবকাঠামোর জন্য বিশাল চাহিদা মেটাতে অবকাঠামো অর্থায়নে সরকারের পাশাপাশি ভূমিকা রাখতে হবে।
এছাড়া জলবায়ু অর্থায়ন হল আরেকটি ক্ষেত্র যেখানে বেসরকারি খাত একটি প্রধান ভূমিকা নিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সমাধান প্রবর্তন করতে হবে। জলবায়ূ ঝুঁকি বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই ডেল্টা প্ল্যাণ-২১০০ বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। সেগুলো মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। অবকাঠামোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশে উচ্চ পরিবহণ ও লজিষ্টিক খরচ এবং কম দক্ষতা রফতানির ক্ষেত্রে অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চার লেন সড়কের কাজ শুরু হলেও সেগুলো ধীর গতি থাকছে। সমুদ্র ও স্থল বন্দর বন্দরসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত বাঁধা দূর করতে উদ্যেগ অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে একটি জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা ও মাস্টারপ্ল্যান প্রয়োজন।
অ্যামচ্যাম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, বিশ্ব প্রতিদিন বিকশিত হচ্ছে, আমরা ধীরে ধীরে এই বৈশ্বিক সমস্যাগুলির সঙ্গে ব্যবসার পাশাপাশি অন্যান্য খাতে একটি নতুন অগ্রগতির দিকে উঠছি। নতুন নতুন উদ্ভাবন গ্রহণ করা হচ্ছে। করোনা মহামরীর সময় ইন্টারনেটের কারনে আমাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়নি। করোনার আগে অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, বাংলাদেশ অনন্য বৈশিষ্ট্যের দেশ হিসাবে প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি চিত্তাকর্ষক বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির অর্জন করেছে। ফলে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। আামরা প্রায়শই অন্যান্য উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের দেশের নাম দেখতে পাই। সামষ্টিক-অর্থনৈতিক সাফল্যের এমন অনেক অসাধারণ গল্প রয়েছে, যা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় উপরে নিয়ে গেছে। কিন্তু যখন আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছিল এবং উচ্চ আয়ের দেশে যাবার পথে হাঁটছিল তখনই করোনার মতো ঝড় এসেছে। এ অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধারের সময়ই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরেকটি ধাক্কা দেয়। ফলে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। জ্বালানি তেলসহ নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মুল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আমরা লোডসেডিং এর মতো পুরনো পরিস্থিতিতে ফিরে গিয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ এবং দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি এখনও ইতিবাচক প্রবণতায় রয়েছে। রেমিট্যান্স আয় ফিরে এসেছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ গত এক দশকে দারিদ্র্য বিমোচনে একটি অসাধারণ এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকারের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা এবং অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কর্র্মকা-ের যথাযথ ও সফল বাস্তবায়নের ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো, জীব-বৈত্র্যি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পরিবেশগত অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পরিবেশগত টেকসই অবস্থা নিশ্চিত করতে মূলধারার উন্নয়ন নীতির সঙ্গে পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে একীভূত করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন