শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিক্রি বেড়েছে নিত্য পণ্যের অবিক্রিত ফার্নিচার

শেষ মুহূর্তে বাণিজ্য মেলা ভাইরাল ১৬ পরীর খাট নিয়ে চিন্তিত মালিক

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার শেষ সময়ে দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে জমজমাট মেলা প্রঙ্গণ। গতবারের তুলনায় এবার মেলায় দর্শনার্থীর আগমন ছিল বহুগুণ। শেষ সময়ে বেড়েছে সব ধরনের নিত্য পণ্যের বিক্রি। তবে ফার্নিচারসহ আসবাব পত্রের বিক্রি হয়নি খুব একটা। অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে কোটি টাকা দাম হাঁকানো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ১৬ পরীর খাট। এবার ব্যবসায়ীরা হতাশ হলেও প্রবেশদ্বারের ইজারাদাররা ভীষন খুশি।
মেলায় ২৯তম দিন ঘুরে দেখা যায়, পণ্যমূল্যে ছাড়ের আশায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। বেচা বিক্রি হচ্ছে হরদম। তবে ফার্নিচারের মালামালগুলো মাসব্যাপী স্টলে কেবল প্রদর্শন হয়েছে কিন্তু বিক্রি হয়নি। কারণ হিসেবে ক্রেতাদের অভিযোগ দাম বেশি হাঁকানোর। তবে কেউ কেউ ক্রয় করলেও বেশি দামীগুলো অবিক্রিত থেকে গেছে। এসব বিষয়ে ব্যবসায়ীরা দিয়েছেন ভিন্নমত।
তাদের মতে, বাণিজ্য মেলা কেবল বিক্রির জন্য নয়, প্রদর্শনেও সফলতা আসে।
আখতার ফার্নিচারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মিছির আলী বলেন, দর্শনার্থীদের কাছে পণ্যের দাম ও মডেল দেখানোর কাজটা হচ্ছে। এখানে বিক্রি হবে এমন আশা করা হয়নি। আমাদের পণ্যগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ও দেশ বিদেশে পৌঁছে দেয়ার মত কাজ হচ্ছে। অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে তাই মন্দ কি।
এদিকে মেলায় থাকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল কোটি টাকা হাঁকানো খাট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম দর্শনার্থীরা প্রকাশ্যেই পরী মূর্তি রাখার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করছেন। মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী আরমান হুসেইন বলেন, এবার পুরো মাসেই জমজমাট বাণিজ্য মেলার আসর। তবে মেলার প্রবেশ পথে উচ্চ শব্দে বাজানো বক্সের শব্দ অসহনীয়। আবার মেলায় ভাইরাল খাট দেখতে ভিড় করলেও কেউ ক্রয়ের সাহস পাচ্ছেনা।
সাওঘাট এলাকার বাসিন্দা আসমা আক্তার রুপা বলেন, মেলায় এবার সব কিছুর দামই বেশি মনে হয়েছে। ভাইরাল খাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুসলমানের ঘরে মূর্তি রাখা যায় না। তাই খাট কেউ কিনবে না। কারণ খাটে ১৬টি পরী রয়েছে।
এসব বিষয়ে ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের মালিক ও খাট প্রদর্শনকারী নুর নবী বলেন, আমাদের খাট আবু বকর নামীয় একজন মিস্ত্রির ৩ বছর সময় ধরে তৈরী করেছে। এখানে ভালো মানের সেগুন কাঠের মূলঅংশ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এর দাম কোটি টাকা চেয়েছি। এ পর্যন্ত মেলায় ৫৫ লাখ টাকা দাম ওঠেছে। তবে আমরা দেইনি। আরো কিছু বাড়লে দেয়া সম্ভব। ফলে এ মেলায় আর দুই দিনে বিক্রি হবে কিনা তা নিয়ে হতাশ রয়েছি। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষ জানতে পারলো এটাও তৃপ্তি।
গতকাল রোববার মেলা ঘুরে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়ের চিত্র। তবে মেলার অভ্যন্তরে হকার উৎপাতে বিরক্ত হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। আবার অনেকের পকেট থেকে টাকা চুরির অভিযোগ ছিলো। এসব নানা কারণে, মেলার পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ।
রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সায়েদ বলেন, বাণিজ্য মেলায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় ছদ্মবেশি প্রতারক ও পকেটমারদের ধরতে সক্ষম হয়েছি। এ পর্যন্ত মেলা থেকে ৪০ জনের অধিক অপরাধীকে নানা অভিযোগে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।
এদিকে মেলায় প্রায় শেষ সময়ে নিত্য পণ্যে ছাড় ঘোষণা করায় শেষ মুহূর্তে জমে ওঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। মেলায় ঘুরতে আসা নিকুঞ্জের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, মেলায় আগতদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ছিলো। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার দর্শনার্থী হয়েছে বহুগুণ। তাই প্রবেশপথ যারা ইজারা নিয়েছেন তারা পুরো সফল। তবে মেলার ব্যবসায়ীদের অনেকেই হতাশ। মেলার প্রবেশদ্বার ইজারাদার কর্মকর্তা ইমন হাসান খোকন বলেন, প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন হয়েছে কিন্তু ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারেননি খুব একটা। এতে লোকসান গুণতে হবে। তাই সময় বাড়ানো প্রয়োজন ছিলো।
সূত্র জানায়, এবার মেলায় সাধারণ, প্রিমিয়াম, সংরক্ষিত, ফুড স্টল ও রেস্তোরসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে স্টল রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। এবার দেশি-বিদেশি মিলে মেলায় মোট ৩৩৩টি স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি। দেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, ভারতসহ ১০টি বিদেশি রাষ্ট্রের ১৭টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। এছাড়া গতবার শিশুপার্ক ছিল না, এবার মিনি শিশুপার্ক রয়েছে। যদিও এটি বেসরকারি উদ্যোগে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন