২০২২ অর্থবছরে ১৫,০৪০ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা টাকা রাজস্ব অর্জন করেছে গ্রামীণফোন। গত বছর একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ১ শতাংশ। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সিম বিক্রির ওপরে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিষেধাজ্ঞার কারণে আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম গ্রাহক গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পেরেছেন। সব মিলে, বছর শেষে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯১ কোটি। গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহকের মধ্যে ৫৫ শতাংশ বা ৪ দশমিক ৩৬ কোটি গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, যা ২০২১ সালের শেষের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে বাহ্যিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও গ্রামীণফোন নিজেদের পারফরমেন্সে উন্নতি বজায় রেখেছে এবং ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বছর শেষ করেছে। নেটওয়ার্কে আমাদের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ, নতুন তরঙ্গের ব্যবহার, মোট সাইটের সংখ্যা ২০ হাজারে উন্নীত করার মাইলফলক অর্জন এবং ১৯ দশমিক ৬ হাজার ফোরজি সাইট নেটওয়ার্কে যুক্ত করার মতো বিভিন্ন উদ্যোগই মূলত আমাদের বছরপ্রতি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা পালন করেছে। ২০২২ সালের ২৯ জুন টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আমাদের সিম কার্ড বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, যা বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের গ্রাহক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কম গ্রাহক নিয়ে বছর শেষ করলেও, গ্রাহক অভিজ্ঞতার মানোন্নয়নে গুরুত্বারোপ করার ক্ষেত্রে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিশ্রুতির ফলে, ডেটা ব্যবহার গত বছরের তুলনায় ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২২ শেষে ফোরজি ডেটা ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বছর শেষে মোট ফোরজি গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪২ কোটিতে। ধারাবাহিক গঠনমূলক আলোচনার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে ২০২৩ সালের অর্থাৎ এ বছরের ২ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
ইয়াসির আজমান বলেন, নিজেদের ব্যবসায়িক ভিত্তির জায়গা শক্তিশালী করা ছাড়াও, অত্যাধুনিক মোবাইল প্রযুক্তি ও সক্ষমতার পাশাপাশি বিভিন্ন পার্টনারশিপের মাধ্যমে গ্রামীণফোন উদ্ভাবন ও গ্রাহক-কেন্দ্রিক সল্যুশন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আমরা গুগল ও ফেসবুকের সাথে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ করেছি এবং বিভিন্ন সল্যুশন ব্যবহার করছি, যা আমাদের গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক সেবা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখছে। বিকাশের সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে আমরা ঝামেলাবিহীন স্বয়ংক্রিয় পেমেন্ট ফিচার সুবিধা নিয়ে এসেছি। আমাদের সমন্বিত এ প্রচেষ্টাগুলো ডিজিটাল চ্যানেলে গ্রাহকদের সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। এটুআই -এর সাথে আমাদের পার্টনারশিপের মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের জন্য আমাদের সেবাকে আরও বিস্তত করতে চাই এবং বিভিন্ন সল্যুশন নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রত্যাশী। পাশাপাশি, আমরা দেশের ডিজিটালাইজেশন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেতে চাই।
গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিএফও ইয়েন্স বেকার বলেন, রাজস্ব ও ইবিআইটিডিএ প্রবৃদ্ধির ফলে ২০২২ সালে গ্রামীণফোনের আর্থিক পারফরমেন্সে ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। পুরো বছরে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে ১৫,০৪০ দশমিক ৩৫ কোটি টাকায়। অন্যদিকে, সাবক্রিপশন ও ট্র্যাফিক রাজস্ব বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। নেটওয়ার্কে বিনিয়োগ ও তরঙ্গ ব্যবহারের ফলে ডেটা ও বান্ডল সেগমেন্টে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। যার ফলে, সিম বিক্রির ওপরে নিষেধাজ্ঞার কারণে লোয়ার সাবস্ক্রিপশন-বেজ থাকা সত্ত্বেও টানা সাত প্রান্তিকে রাজস্বে বছরপ্রতি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
ইয়েন্স বেকার বলেন, সামস্টিক ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপ এবং মুদ্রাস্ফীতি সংশ্লিষ্ট ব্যয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও, রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে ধারাবাহিক ইবিআইটিডিএ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে গ্রামীণফোন। পুরো বছরে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ মার্জিন নিয়ে ইবিআইটিডিএ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০ শতাংশ মার্জিন নিয়ে ২০২২ সালে কর পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩,০০৯ দশমিক ১৬ কোটি টাকা। বৈদেশিক লেনদেন ও পূর্ববর্তী মামলায় নেতিবাচক রায়ের কারণে ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে নিট লাভের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পরিচালনা পরিষদের সভায় গ্রামীণফোনের পরিচালনা পরিষদ ২০২২ সালের জন্য প্রতি শেয়ারে ৯ দশমিক ৫ টাকা চূড়ান্ত লভ্যাংশ সুপারিশ করেছেন। এর ফলে, মোট আর্থিক লভ্যাংশ দাড়িয়েছে পরিশোধিত মূলধনের ২২০ শতাংশ, যা ২০২২ সালের কর পরবর্তী মুনাফার ৯৮ দশমিক ৭২ শতাংশ (১২৫ শতাংশ অর্ন্তবতী নগদ লভ্যাংশ সহ)। রেকর্ড তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত যারা শেয়ারহোল্ডার থাকবেন, তারা এই লভ্যাংশ পাবেন, যা ০২ মে, ২০২৩, তারিখে অনুষ্ঠাতব্য ২৬তম বার্ষিক সাধারণ সভার দিন শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করবে।
২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে গ্রামীণফোন লিমিটেড ৫০০ দশমিক ৪ কোটি টাকা নেটওয়ার্ক কাভারেজ ও বিস্তৃতিতে বিনিয়োগ করেছে। প্রান্তিক শেষে গ্রামীফোনের মোট নেটওয়ার্ক সাইটের সংখ্যা দাড়িয়েছে ২০,০৮০টিতে। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি কর, ভ্যাট, শুল্ক, ফি, ফোরজি লাইসেন্স এবং তরঙ্গ বরাদ্দ বাবদ ১০,৪২৭ কোটি টাকা সরকারি কোষগারে জমা দিয়েছে, যা এর মোট রাজস্বের ৬৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন