বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী (এফডিআই) দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম কোরিয়া। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে দেশটির বিনিয়োগের পরিমান ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে প্রায় ২০০টি কোরিয়ান কোম্পানি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। অবকাঠামো, জ্বালানি এবং ইলেকট্রনিক্সের মতো ভোগ্যপণ্য অন্তর্ভুক্ত করে সম্প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগকে বহুমুখী করেছে কোরিয়া। ফলে দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণে অবদান রাখছে দেশটি। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের (এসকেআইটিএ) মতে, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২২ সালে আনুমানিক ৩ দশমিক ০৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের ২ দশমিক ১৮৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩৮ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে।
কোরিয়া-বাংলাদেশের এমন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে কোরিয়ান কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন, কোরিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেবিসিসিআই) এবং কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি (কোট্রা) যৌথভাবে "কোরিয়া সপ্তাহ ২০২৩" এর আয়োজন করতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে আজ ১ ফেব্রুয়ারি বুধবার কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি. ইয়ং ওহ ইউ এসব তথ্য জানান।
১৯৭৩ সালে কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দু দেশের সঙ্গে অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি, পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং মানবসম্পদ বিনিময়ের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ছে। অর্থনৈতিক সাফল্য উদযাপন এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য কোরিয়ান কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ও কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। “স্টে স্ট্রং মার্চ টুগেদার” এই শ্লোগান নিয়ে আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত "কোরিয়া সপ্তাহ ২০২৩" এর নানা আয়োজন এ দুটো ভ্যেনুতে অনুষ্ঠিত হবে।
উৎসবে থাকা ইভেন্টগুলো ৫০তম বার্ষিকীকে আরও রঙিন করবে। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে সুসংহত হবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করবে "কোরিয়া সপ্তাহ ২০২৩"।
শোকেস কোরিয়াতে (কোরিয়ান পণ্যের প্রদর্শন; ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি) ৪০টিরও বেশি কোম্পানি অংশগ্রহণ করবে। এখানে এলজি প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে কাজ করবে। স্যামসাং গ্যালাক্সি স্পন্সরশিপের মাধ্যমে ২৫ ফেব্রুয়ারি কেপপ (কঢ়ড়ঢ়) টিম লাইভ কনসার্ট, বয়গ্রুপ "ঞঅঘ" এবং গার্লগ্রুপ "ওঈট" এবং কোরিয়ান মার্শাল আর্ট তায়কোয়ান্দো পারফরম্যান্স টিম "ঘড়ষলধ" বাংলাদেশের কেপপ ভক্তদের বিনোদন দিতে ঢাকায় আসবে। এছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম (কঙওঈঅ), কোরিয়ান খাবার, ইলেকট্রনিক পণ্য, কোরিয়ান পর্যটন সম্পর্কিত তথ্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলবে। কঢ়ড়ঢ় লাইভ কনসার্টের টিকিট (তায়কোয়ান্দো পারফরম্যান্সসহ) িি.িকঙজঊঅডঊঊক২০২৩.ঈঙগ এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া কোরিয়া কাপ গলফ টুর্নামেন্ট ১ ও ২ মার্চ এবং ৩ মার্চ অ্যাওয়ার্ড শো কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব, ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্রদূত লি জাং-কুন বলেন, "কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশে কোরিয়ান সম্প্রদায়ের এরকম বিশাল আয়োজন দেখে খুবই ভালো লাগছে।" তিনি আরও উল্লেখ করেন যে "দূতাবাস, কইঈঈও এবং কঙঞজঅ, কঙওঈঅ, কড়ৎবধ ঊীরসনধহশ এবং কওঘউ-সহ অন্যান্য কোরিয়া-সম্পর্কিত সংস্থাগুলো "কোরিয়া সপ্তাহ ২০২৩"-এর একাধিক ইভেন্ট সফলভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করবে। যাতে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসার আরো প্রসার হবে এবং কোরিয়ান সংস্কৃতি প্রেমীদের জন্য বিনোদনের সুযোগ তৈরি হবে।”
২০২২ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৩.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত লি জাং-কুন বলেন, কোরিয়া দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং উভয় দেশের ব্যবসায়িক সমাজ আরও সহযোগিতা পেতে "শোকেস কোরিয়া ২০২৩" একটি উল্লেখযোগ্য ভ’মিকা রাখবে।
বাংলাদেশে কোরিয়ান কমিউনিটির চেয়ারম্যান মি. ইয়ং ওহ ইউ বলেন, কোরিয়া ১৯৭২ সালের মে মাসে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে কনস্যুলার সংযোগ ও ডিসেম্বরে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।
মি. ইয়ং ওহ ইউ আরো বলেন, "দক্ষিণ কোরিয়া স্যামসাং এবং হুন্ডাইয়ের মতো বড় কোরিয়ান কোম্পানিগুলিকে বাংলাদেশে নির্মাণ, প্রকৌশল, ইলেকট্রনিক্স এবং অটোতে যুক্ত করার কথা বিবেচনা করছে। কারণ বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত ও বাজার প্রসারিত করছে। কোরিয়ান কোম্পানি স্যামসাং নরসিংদীতে একটি উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেছে। সেখানে মোবাইল ফোন, ফ্রিজ, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ওয়াশিং মেশিন তৈরি করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন