মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া

জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা : আমাদের ভাবনা ৬

ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আবারো জোরদার হয়। একদিকে মাওলান আব্দুল মান্নান-এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেছীন, অন্যদিকে বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার নেতৃত্বে মাদরাসা ছাত্ররা দেশজুড়ে আন্দোলনের ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ওআইসির ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়ন প্রস্তাবের প্রতি সাড়া দিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের পরামর্শে তার দেশের বাড়ি কুষ্টিয়া সীমান্তের শান্তিডাঙ্গা দুলালপুরে নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন ১৯৭৯ সালে। জাতীয় পর্যায়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেন দেশের এক কোণায় স্থাপন করা হবে তার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার একটি বিশাল মিছিল বঙ্গভবনের সামনে পুুলিশি আক্রমণের শিকার হয়। সে মিছিলে আহতদের মধ্যে আমিও ছিলাম।

প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর গণদাবির প্রতি সাড়া দিয়ে ১৯৮৩ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার উত্তরে গাজীপুরে নিয়ে আসেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার মতের পরিবর্তন হয়ে যায়। রাজধানীর কাছে সম্ভাব্য একটি ইসলামী শক্তির উপস্থিতিতে তিনিও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি সকল দাবি ও বাধা উপেক্ষা করে ১৯৮৯ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আগের জায়গায় কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করেন এবং এখনো সেখানেই রয়েছে। দেশের আলেম সমাজ ও তাওহীদি জনতার শতাব্দিকালের স্বপ্ন, মাদরাসা ছাত্রদের সংগ্রাম আন্দোলন ত্যাগ তিতীক্ষা ও জমিয়াতুল মুদার্রেছীনের চতুর্মুখী দাবি ও চেষ্টার ফলশ্রæতিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এটিই ইতিহাসের সাক্ষ্য ও প্রামাণ্য কথা। কিন্তু মাদরাসা ছাত্রদের দাবি, মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ফাযিল কামিলের মান নির্ণয়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবেশ প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে মাদরাসা ছাত্রদের জন্য ক্রমান্বয়ে সঙ্কুচিত হতে থাকে। বর্তমানে অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, সবাই বলে দেশের বাকী সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্ন কিছু নয়। এখানে ধর্মতত্ত¡ ও ইসলামিক স্টাডিজ নামে একটি ফ্যাকাল্টি আছে আর নামটি ইসলামী, এটুকুই।

আমাদের বিস্ময় হল, এত সংগ্রাম, দাবি ও ত্যাগের বিনিময়ে মাদরাসা ছাত্রদের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য যে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হল তা সবার চোখের সামনে নিজের চরিত্র বদলে ফেলল, অথচ তার ব্যাপারে কারো কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। বাঙ্গালী মুসলমানদের দ্বীনি জযবা সত্যিই বিস্ময়কর। লক্ষ-কোটি টাকা ব্যয়ে শীতের মওসুমে সারাদেশে ইসলামী জলসা, মাহফিল আয়োজন করা হয়। তার জন্য খ্যাতিমান বক্তাদের পকেটে হাজার-লাখ টাকা গুঁজে দেয়া হয় অথচ দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা, জ্ঞান সাধনার জাতীয় পর্যায়ের এমন প্রতিষ্ঠান ইসলামী চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে তার ব্যাপারে কারো কোনো করণীয় নেই। এই উদাসীনতা, অবহেলা সত্যিই অমার্জনীয়। এ অবস্থার একটি কারণ, আমরা ইসলামকে গন্ডিবদ্ধ করে ফেলেছি। আমি যেটা বিশ্বাস করি বা পালন করি তার বাইরে ইসলাম আছে, থাকতে পারে তা আমরা চিন্তা করতেও রাজি নই। এ কারণে একটি মাদরাসা বা মসজিদ কিংবা বছর একটি মাহফিল কিংবা দু একটি মিছিল বা ইজতেমায় শরীক হতে পারলেই মনে করি ইসলামের একমাত্র কাজটি সাফল্যের সাথ শেষ করেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন