শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

৮ দিনে ১০ হাজার কোটি ডলার হারাল আদানি গ্রুপ

তদন্তের দাবি ভারতের বিরোধী দলগুলোর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আদানি গ্রুপের ‘শেয়ার দরে কারচুপি’ নিয়ে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফার্মের প্রতিবেদন প্রকাশের পর গৌতম আদানি নেতৃত্বাধীন গ্রুপটির শেয়ারের মূল্য যেভাবে পড়া শুরু করেছে, তা কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। অব্যাহত এই দরপতনের কারণে গ্রুপটি মাত্র ৮ দিনেই ১০ হাজার কোটি ডলার হারিয়েছে। এদিকে, ভারতের বিরোধী দলগুলো গতকাল সংসদে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

উদ্ভ’ত পরিস্থিতি দেখে আদানি তাদের নতুন দুই হাজার ৫০০ কোটি ডলারের শেয়ার ছাড়ার এফপিও-ও (ফলো অন পাবলিক অর্ডার) স্থগিত ঘোষণা করেছে। এরপরও গতকাল গ্রুপটির বিভিন্ন শেয়ারের দর ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমে গেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন বলছে, দশককাল ধরে শেয়ার কারসাজি এবং আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা চালিয়ে আসছে আদানি গ্রুপ। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বহু গুণ বাড়িয়ে এ গ্রুপ বিশাল সম্পদ গড়েছে। গত কয়েক বছরে আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার গত কয়েক বছরে ৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। আদানির বড় ধরনের শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনার (এফপিও) মধ্যেই গত সপ্তাহের মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বুধবার ভারতে পুঁজিবাজার খোলার পর আদানির শেয়ারে দরপতন হতে থাকে। শুক্রবার ঘটে ভরাডুবি। এই দরপতন স্কুল ড্রপআউট হয়েও বিলিয়নেয়ার বনে যাওয়া আদানিকে এশিয়ার শীর্ষ ধনীর স্থান থেকে ছিটকে ফেলে। বৃহস্পতিবার তিনি ধনীদের তালিকায় ১৬তম স্থানে নেমে যান বলে জানাচ্ছে ফোর্বসের তালিকা; অথচ এক সপ্তাহ আগেও তিনি ছিলেন এই তালিকার তিন নম্বরে। গতকাল শেয়ারবাজার খোলার পর খানিকটা বাড়লেও শেষ পর্যন্ত আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দর ১০ শতাংশ নেমে যায়। আদানি পোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন, আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি গ্রিন এনার্জি ও আদানি ট্রান্সমিশনের দরও ১০ শতাংশ পড়েছে। আদানি পাওয়ার ও আদানি উইলমারের দর নেমেছে ৫ শতাংশ করে।

এদিকে, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে আলোচনার দাবি প্রত্যাখ্যান করার পরে ভারতের বিরোধী দলগুলো গতকাল সংসদের উভয় কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করে। পরবর্তীতে, দলগুলির নেতারা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ রিপোর্টে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের পাশাপাশি বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তার নৈকট্যের জন্য একটি যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত বা সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত একটি প্যানেল দ্বারা একটি সময়সীমার মধ্যে তদন্তের দাবি জানায়।

বিরোধী নেতারা বৈঠক করে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় আলোচনার জন্য নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। যদিও হাউসে প্রেসিডেন্টের ভাষণ এবং কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল, নয়টি বিরোধী দলের নেতারা বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্যসভার বিরোধী দলের নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের চেম্বারে বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে, কংগ্রেস, বাম দল, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, শিবসেনা, ডিএমকে এবং জনতা দল ইউনাইটেডের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে আদানির স্টকগুলির ক্র্যাশ হওয়া এবং সাধারণ মানুষের সম্পদের ক্ষয় হওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য একটি নোটিশ দেয়া হবে। পরবর্তীকালে, কংগ্রেসের খাড়গে, আপ-এর সঞ্জয় সিং এবং ভারত রাষ্ট্র সমিতির কে. কেশভা রাও সহ বেশ কয়েকজন সাংসদ এই বিষয়ে আলোচনার জন্য নোটিশ দেন। একইভাবে, লোকসভায়, কংগ্রেস হুইপ মানিকম ঠাকুর একটি মুলতবি প্রস্তাব জমা করেন।

খাড়গে তার প্রস্তাবে দাবি করেন যে, হাউস যেন জিরো আওয়ার এবং প্রাসঙ্গিক নিয়মগুলি প্রশ্নোত্তর এবং দিনের অন্যান্য ব্যবসা সম্পর্কিত নিয়মগুলি স্থগিত করে ‘যেসব কোম্পানিগুলি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি বাজারমূল্য হারাচ্ছে, কোটি কোটি ভারতীয়দের কষ্টার্জিত সঞ্চয়কে বিপন্ন করছে সেখানে এলআইসি (লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া), পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য আর্থিক সংস্থার বিনিয়োগের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে’। রাও-এর নোটিশে বলা হয়েছে যে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট ‘ভারতীয় জনগণ এবং অর্থনীতি যে বিপদের শিকার হচ্ছে তা প্রকাশ করে’ এবং তাৎক্ষণিক আলোচনার যোগ্যতা রাখে। সূত্র : ডন, আল-জাজিরা।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন